ইস্পাতঃ পুনশ্চ
আসিফ ইকবাল
এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখি আমি, স্বপ্ন ঠিক নয়
যেন এক ঘোর, জেগে থেকে তলিয়ে যাওয়া।
দেখি এক লম্বা করিডোরে দাঁড়িয়ে আছি
সেই প্রায় অশেষ এক করিডোর, বিছিয়ে রয়েছে।
আমার হাতে রাইফেল, গুলির দমকে ক্রমাগত
ঝাঁকি খেয়ে উঠছে যেন বুনো ঘোড়ার ঘাড়ের মতো।
অতি দ্রুত ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো যেন অতি ধীর
স্লো-মোশন ছবির মতো দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তর।
আমি দেখতে পাই প্রসারিত বন্দুকের নল থেকে
ছুটে বেরুনো তপ্ত বুলেট, খাঁজকাটা ইস্পাতের
নলের ভেতর দিয়ে এক অপার্থিব গতিতে
ঘুরতে ঘুরতে বেরিয়ে আসে দানবের মতো।
শতাব্দী প্রাচীন ঘন বাতাসের ভেতর দিয়ে
মাখনের ভেতর ছুরি চালানোর মতো পথ
কেটে নেয় একহাত লম্বা অগ্নিশিখার মাঝখানে।
নীলচে ধোঁয়া তাকে অনুসরণ করে বিশ্বস্ততায়।
ব্যারেলের পেছন থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসা
ব্যবহৃত কার্তুজের খোসা বাতাসের ভেতরে
ঘুরতে ঘুরতে মর্মর পাথরের মেঝেতে অতি ধীরে
খসে পড়ে, টুং করে ধাতব শব্দ হয় পিতলের সাথে
পাথরের সংঘর্ষে, তারপর গড়িয়ে গড়িয়ে
চলে যায় মসৃণ মেঝের একপাশে, স্থিরতায়।
স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের বোল্ট বিস্ফোরিত বারুদের
ফুটন্ত গ্যাসের চাপে সররাট, সররাট, ক্লিক শব্দে
পরের কার্তুজটি চেম্বারে ঠেলে দেয় ক্রোধে ফুঁসতে
থাকা ফায়ারিং পিনের সপাট আঘাতের অপেক্ষায়।
আমি কোন মানুষের আর্তনাদ শুনি না,
রক্তের ফোয়ারার দেখা পাই না, যদিও সেই টুকটুকে
লাল, উষ্ণ তরল স্রোতের অপেক্ষায় আমার চেতনা
সাহারা মরুর শুকনো বালির মত পিপাসিত হয়।
আমি মাঝে মাঝে দৃশ্যটি পেছন থেকে দেখি।
যেন সামনের বন্দুকবাজ আমার-ই আরেক সত্তা।
আমি পেছনে দাঁড়িয়ে ইতিহাসের সাক্ষী,
সেই ইস্পাত-দৃঢ় চোয়ালের নির্মম সৈনিকের
ঘামে ভেজা অকরুণ কাঁধের ওপর দিয়ে
উঁকি দিচ্ছি কোন এক ভবিষ্যতের দিকে।
আমি বিলকুল জানি কলমের সোনালী নিব নয়
বরং বন্দুকের নল থেকে বেরিয়ে আসে ইতিহাস।
আবার কখনো কখনো আমি, আমার বর্তমান সত্তাই
হয়ে দাঁড়ায় সেই বন্দুকবাজ, বারুদের ঘ্রাণ
নাকে আসে, হাতের ভেতরের আগ্নেয়াস্ত্র
ছটফট করতে থাকে জীবন্ত প্রাণীর মতো।
সময়ের বিছানো করিডোর ধরে আগামীর
সিংহদ্বারের দিকে গুলি চালাতে চালাতে
পতনোন্মুখ এক সাম্রাজ্যের ধ্বংসস্তুপের ওপরে
আগুন এবং ইস্পাতের কালিতে লিখে যাচ্ছি
নিজের নাম অথবা মানুষের নতুন ঠিকানা।
তারিখঃ জুলাই ৪, ২০২১