উদরপূর্তি
স্বাতী মিত্র দত্ত
একটা গোটা দেশকে খেয়ে উদরপূর্তি হলো।
দেশ মানে তো কারুর মা, কারুর স্কুল,
কারুর ঘরের পাশের রেলপথ, কারুর সংসার
প্রতিপালন, কারুর চাষ-জমির মেরামতি।
ওরা সবটা খেয়ে ফেলল। উদরপূর্তি হলো।
সেই মেয়েটা, যে দেশ মানে পায়ে পায়ে ঘোরা
সবুজ ঘাসে ভরা বড় মাঠটাকে ভাবত,
ওখানেই তো হরিশংকর স্যার পতাকা টাঙিয়ে
সবাইকে নিয়ে কেমন জিতে ফেরা মুখে বলত
“বন্দেমাতরম”, আর সবাই ছোটো ছোটো
মুঠোগুলোকে ছুঁড়ে দিত ওপরে, তারপরে
চোখ বুঁজে ‘জনগণমন।”
স্যার শিখিয়েছিলেন পতাকাকে প্রণাম করতে হয়, ওটাই দেশ। ওরা খেয়ে ফেলল, দেশের পতাকাটাও।
আমিনকাকা, কেউ তো ছিল না তার সাতকুলে,
তারও দেশ ছিল, ফিরত প্রতিবছর দুর্গাপুজোয়,
ছোট ছোট জামা নিয়ে আসত অনেক, বলত এটাই
আমার মা, আমার দেশ, সব ছোটো ছোটো বাচ্চারা
আমিনকাকার দেশ ছিল, কাকা এখন আর আসে না, ওরা তো পুজো বন্ধ করে দিলো, লড়াই করল রামনবমী আর ইফতার নিয়ে, ওরা কাকার দেশটা খেয়ে ফেলল।
গোরা সকালে ট্রেনে ঝাল মুড়ি বেচত, আর দুপুরে
স্কুলে যেত, পেট ভরে ভাত খাবার পর বেঞ্চেই
চোখ জুড়ে আসত, বকলে অনাবিল হেসে
বলত,”ইস্কুলটাকে কেমন মায়ের কোল মনে
হয় ছার, বেজায় ঘুম পায়,” ট্রেনও বন্ধ, আর গোরার
স্কুলও, গোরা বলে সব খেয়ে ফেলেছি, উদরপূর্তি।
আর কিছুদিন পরে কিছুই থাকবে না, না দেশ,
না দেশের গণ্ডি, না রাজপথ, না কানাগলি, না রিকশার টুংটাং, না ভারি বুটের শব্দ, না পতিতাপল্লি না মাংসের দোকান, না রাষ্ট্র মঙ্গল, না বিদ্রোহ, সবকিছু চলে যাবে রাজনীতির পেটে, আসলে যা স্বার্থান্ধনীতি, ওদের উদরপূর্তি হবে।
বিশু পাগল ভয় পায় এখন, রাষ্ট্রকে, বন্দুককে,
নেতাকে। নেতা ভয় পায়, মন্ত্রীকে, সান্ত্রীকে, লোভকে, লোভ ভারি ভয় পায়, কর্তব্যকে, দায়িত্বকে, খলনায়ককে। খলনায়ক ভয় পায় তার মুখোশকে,
তার উদাসীনতাকে, তার উদরকে।
আর সত্যিই তাই, রক্ষা করতে পারে না,
খেয়ে ফেলে, আস্ত একটা দেশকে, ওদের সবার উদরপূর্তি হয়।
তারিখঃ জুলাই ৩, ২০২১