গুলমোহর
সৌরীণ মুখার্জী
এক
গাড়ির কাচের গায়ে পড়ন্ত বিকেলের রোদ্দুর এসে পড়ছে। গাছের ফাঁক দিয়ে নেমে আসা ঝিরিঝিরি নরম আলো। দু’পাশে গাছের সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে। এগুলোর অধিকাংশই শাল আর পলাশ। সব গাছে ফুল নেই, কচি কচি সবুজ পাতায় ভরে উঠছে। বসন্তও প্রায় শেষের মুখে। এসব পিচের রাস্তা নতুন, কয়েকবছর আগেই তৈরি হয়েছে। তবুও কালো পিচের দু’ধার জুড়ে লাল মাটির এক উজ্জ্বল উপস্থিতি। যেন পিচ ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে। চোখের রোদচশমাটা মাথায় তুলে জানলার কাচটা খানিকটা নামিয়ে দিল মোহর। ধূসর চুলগুলো হাওয়ায় এলোমেলো হচ্ছে। সেগুলো সরিয়ে নেওয়ার কোনো ব্যস্ততাই ওর মধ্যে নেই। এক নিবিড় প্রশান্তি ওকে গ্রাস করছে। গাড়িটা আরো কয়েকটা বাঁক নিয়ে সোজা রাস্তাটা ধরল। ধুলোমাখা লালচে ফলকটার গায়ে – ম্যাকলাস্কিগঞ্জ 0 কিমি।
প্রতিদিন অজস্র পাতা ঝরে পড়ছে উঠোনে। ঝিমলি থাকতে পরিষ্কার করতো কখনো সখনো, এখন হয় না। তবে মন্দ লাগছে না। এই নির্জন নিরিবিলিতে এও ভীষণ মানানসই বোধহয়। চুপ করে শুনলে বোঝা যায় পাতা পড়ার শব্দ। ডালের বাঁধন ছেড়ে বেরিয়ে আসার মুক্তি। আজকাল প্রায়ই এইসব চিন্তা মাথায় আসে গুলশানের। জানালার গরাদ ধরে দাঁড়িয়ে থাকে, ভাবে এই বাঁধন ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার আনন্দ বেশি নাকি যা কিছু পড়ে রইল তার ব্যথা! মাথার জটগুলো খুলতে হাতের সামনে রাখা ডায়রি আর কলমটা নিয়ে বসে পড়ে ও। শারীরিকভাবে বহুলাংশে দুর্বল হয়ে পড়লেও এই লেখার ক্ষমতাটুকু এখনও রয়েছে। পাতা পড়ার শব্দে মিশে যায় কাগজের খসখস। ছন্দপতন হয় গাড়ির হর্নের শব্দে। লেখা থামিয়ে আবারও জানলার কাছে গিয়ে দাঁড়ায় গুলশান। বাবুয়া ছুটে যাচ্ছে গেটের কাছে, গাড়িটা এসে দাঁড়িয়েছে বাইরে। অলিভ, মোহরের পছন্দের রঙ।
গেটের পাশে ছোট্ট দেওয়ালটার গায়ে মার্বেলের ওপর লেখা “গুলমোহর”। গোছা গোছা কাগজফুল জড়িয়ে রয়েছে তাকে। ছবিতে কিছুটা দেখেছিল মোহর, তবে এর অধিকাংশই ভীষণরকম অপ্রত্যাশিত। বাড়ির নামটাও ওর কাছে একটা অদ্ভুত চমক। স্মৃতির পাতায় মুড়ে রাখা ঝাপসা ছবিটা ভেসে উঠছে এবার। এত গাছ, বাগান আর মোরামে সাজানো রাস্তা- বিস্ময়! গাড়ির দরজাটা খুলে নেমে এল মোহর। এখনো ওর বিশ্বাস হচ্ছে না এর প্রতিটা মন্তাজ তিরিশ বছর আগে দেখা স্বপ্নটার খণ্ডচিত্র। ওপরের বারান্দার দিকে চোখদুটো যেতেই খানিকটা থমকাল মোহর। গুলশান। চুলে পাক ধরেছে। শরীরও বেশরকম ভেঙেছে। তবে ওই চোখদুটো এখনও একইরকম উজ্জ্বল। এখনও অনায়াসে অতলান্ত ছুঁয়ে আসতে পারে। এতগুলো বছর পেরিয়ে আবার মুখোমুখি। বৃত্তটা কোথাও গিয়ে যেন মিলে গেল। এক পশলা বৃষ্টির মতো স্বস্তি লেগে রইল এই মুহূর্তটায়।
দুই
তিরিশ বছর আগের এই গঞ্জে পাকা রাস্তা ছিল না। ল্যাটেরাইটের রাস্তায় তখন রিক্সা চলতো। হাতে গোনা কয়েকটা বাড়ি। সবাই সবাইকে চেনে। হাওয়াবদল করতে প্রায়ই শহর থেকে লোকজন আসতো, থাকতো কয়েকমাস। তারপর সুস্থ হয়ে ফিরে যেত। কেউ কেউ অবশ্য প্রেমে পড়ে এখানেই কোনো স্থায়ী আস্তানা জোগাড় করে নিয়েছিল। সাহেব আমল থেকেই বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সমন্বয় ঘটেছিল। অ্যাংলো ইন্ডিয়ান ক্রিশ্চান বেশি থাকলেও পরবর্তীতে হিন্দু ও মুসলমানের সংখ্যাও বেড়েছিল। তবে এই বৈচিত্র্য কোনদিনই বিভেদ দেখেনি। গঞ্জের সীমানায় নির্মিত সর্বধর্ম সমন্বয় স্থলটিও বহু ইতিহাসের সাক্ষী।
এই অ্যাংলো পাড়ারই একটি বাড়িতে স্থায়ী আস্তানা নিয়েছিলেন নীহারিকা ব্যানার্জী। মোহরের ঠাকুমা। ছুটিতে কালেভদ্রে মোহরেরও যাতায়াত ছিল। দু’টো বাড়ি পরেই গুলশানের বাস। আদি বাড়ি। আম্মু আর ও, আব্বা কয়েকবছর আগেই মারা গেছেন। মোহর তখন বিশ্বভারতীর স্নাতক। নাচ নিয়ে সাংঘাতিক প্যাশনেট। নাচের বোলে মাঝে মাঝেই মেতে উঠতো ওদের উঠোন, গলির বাতাস। গুলশান স্কুল পাশ করে মায়ের সাথে দোকানে বসতো। গোটা-মশলা পেষাই করে বিক্রি হতো। শাল পলাশের জঙ্গলে এ এক অদ্ভুত খেই হারানো। তবে লোকজন একনামেই চিনত ওদের বাড়ি। গুলশানের অবশ্য ওদিকে মন ছিল না কোনদিনই। খাঁ খাঁ দুপুরে বই আর কবিতায় বুঁদ হয়ে থাকতো একুশ বছরের ছেলেটা। তেমনই কোনো দুপুরে কবিতার পাতায় বেজে উঠেছিল নাচের বোল। প্রথম আলাপ, দ্বিতীয় আলাপ, তৃতীয়…প্রেমের শুরুটা তখনই। ডেগাদেগি নদীর পাড় থেকে শুরু করে নাট্টা পাহাড়, ভালোবাসার অধ্যায়ে জুড়েছিল সেই সবটাই।
কয়েক বছর এভাবেই কাটল। কলকাতা – গঞ্জ – কলকাতা। মোহরের দিদা বাড়ি বিক্রি করে শহরে ফিরে এল। গুলশান তখন কলকাতায় একটা বেসরকারি চাকরিতে ঢুকেছে। মোহরও নাচ নিয়ে চরম ব্যস্ত। একসাথে দেখা স্বপ্নগুলো শুধু জমাট বাঁধছিল ইতিউতি। জীবন যেমন নিয়মমাফিক নয় তেমনই বোধহয় সম্পর্কগুলোও সবসময় গতে বাঁধা থাকে না। কিছু পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে সিদ্ধান্তগুলো বড় কঠিন হয়ে যায়। এমনই খেই হারানো দিনে পলাশ এল। নতুন প্রাণ। নামটা গুলশানের রাখা। মেয়েরা মা হলে যেমন বদলে যায়, মোহরেরও তার অন্যথা হয়নি। তবে এই বদলটা অন্যরকম ছিল। ক্যারিয়ার নিয়ে আরো বেশিরকম পাগলামি শুরু হয়। প্রতিদিন অজস্র নাচের শো। বিদেশের শো’ গুলোও ক্রমশ বাড়ছিল। এই অবস্থায় পলাশকে সময় দেওয়া তো দূর ওর কাছে আসারও অবসর ছিল না মোহরের। অগত্যা ছেলেকে নিয়ে গঞ্জে ফিরে যায় গুলশান। মোহর যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। সংসার, বিয়ে, বাচ্চা এই দায়িত্বগুলোয় বড্ড বেশি দম আটকে আসছিল। বয়স অল্প। কাজের খিদেটাই তখন প্রবল। কাউকে কিছু না জানিয়েই এরপর একদিন বাইরে চলে গেল ও। স্টেটসের একটা ইউনিভার্সিটি থেকে রিসার্চ স্কলারের ডাক পেয়েছিল। এইরকম কোনো সুযোগের জন্যই বোধহয় অপেক্ষা ছিল ওর। পিছুটান, সম্পর্ক, মাতৃত্ব ভুলে নতুন জীবনের অধ্যায় শুরু। তবে ইতিহাস হয়তো এত সহজে সবকিছু ভোলে না। তাই তো মানুষ ফিরে আসে। ফিরে আসতে হয়।
তিন
আজকাল প্রায়ই ভোরবেলা ঘুম ভেঙে যায় পলাশের। অবশ্য ভোর না বিকেল ঘনিয়ে সন্ধ্যে আসছে তা বুঝতে গেলে বাবার ঘরে যেতে হয়। ভোর হলে বাবা নিশ্চয় ঘুমোবে, আর বিকেল হলে খাতা আর কলম নিয়ে বসে থাকবে। বাবার লেখাগুলোয় কেমন যেন ম্যাজিক আছে। শুনলেই মন ভালো হয়ে যায় ওর। সেই যেবার বলল-
“যারা দূর থেকে বলে ‘ভালোবাসি’, তারা কাছে চলে এলে সময় ফুরিয়ে যায়। আর যারা কাছে থেকে বলে ‘দূর ছাই, যা তো, জ্বালাস না’ তাদের ভালোবাসায় পরাগ জন্মায়।”
সত্যিই তো। মাকে কোনোদিন দেখেনি ও। অথচ বাবা বলে মা দূর থেকে ওকে ভালোবাসে, বাবাকে ভালোবাসে। অথচ কোনোদিন তো কাছেই এল না। আর ঝিমলি মাসী সারাদিন গালমন্দ করলেও মনে করে উঠোন থেকে কাঠগোলাপ তুলে রাখে ওর জন্য। বাবা তো ঠিকই। এরকম কত কথা বাবা বলে। তবে আজকাল বেশি কথা বললে বাবার কষ্ট হয়। গলা ধরে আসে। মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। পলাশ বুঝতে পারে বাবার ব্যথা হয়। বাবার খুব কাছে গিয়ে তখন বসে ও, মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। ফিসফিস করে বলে- “আমি তোমায় কাছ থেকে ভালোবাসি…”
এই দু’দিনে এখনো পুরোটা ধাতস্থ হতে পারেনি মোহর। দেশে ফিরেছে বেশ কয়েক বছর হলো। সংসার বা পিছুটান কোনোটাই ওকে আবদ্ধ করতে পারেনি এই বিগত কয়েক বছর। তবে এই ক’দিন জীবনটা এক অদ্ভুত ছন্দে বয়ে চলেছে। নাচের ছন্দের থেকে বহুদূরে এ যেন এক অমোঘ পরিণতি। কয়েকমাস আগেই গুলশানের সাথে আবার যোগাযোগ হয়। অবশ্য তাগিদটা গুলশানেরই। চিঠির উত্তর না পেয়ে ফোনে যোগাযোগ করে ও। মোহর ব্যানার্জী নামটা সুপরিচিত। দেশে ও বিদেশে অনেকগুলো নাচের স্কুল রয়েছে ওর। তাই যোগাযোগে খুব একটাও বেগ পেতে হয়নি গুলশানকে। প্রথম প্রথম ফর্মাল কথাবার্তা হতো, কেউই খুব একটা আবেগে গা ভাসায়নি। এতদিনের ব্যাবধানে সম্পর্কেও শ্যাওলা জমে বোধহয়। তারপর টুকটাক কথাবার্তা। এবং অবশেষে গঞ্জে আসার কথা জানায় গুলশান। তবে পলাশকে নিয়ে কোনো কথাই হতো না ওদের। অহেতুক আগ্রহ দেখায়নি মোহর।
এখানে আসার পর এই যোগাযোগ আরো বেশি স্পষ্ট হচ্ছে ওর কাছে। নেহাতই মুখোমুখি হওয়া কিংবা কাছকাছি আসা নয়, এও এক নিয়মমাফিক জীবনের বাইরের অপ্রত্যাশিত মুহূর্ত। গত কয়েকবছর ধরেই ব্রেন টিউমারে ভুগছে গুলশান। ম্যালিগন্যান্ট, ছ‘মাস আগেই ডাক্তার জবাব দিয়ে দিয়েছে। তারপরই মোহরের সাথে যোগাযোগ শুরু হয়। তবে নিজের জন্য না, পলাশের জন্য। পলাশের বয়স তিরিশের গোড়ায় তবে মনে মনে এখনও ও একজন বাচ্চা। অটিস্টিক। জন্মের কয়েক বছর পরেই ধরা পড়ে। মোহর তখন দেশের বাইরে, তাই গুলশানও আর যোগাযোগ করে সমস্যা বাড়ায়নি। আর এখন নিতান্তই নিরুপায়। ও ছাড়া তো আর কেউই নেই পলাশের। তাই খানিকটা বাধ্য হয়েই যোগাযোগের চেষ্টা করে ও।
আজকাল প্রায় সন্ধ্যেবেলা লোডশেডিং হয়। গুলশানের ঘরে গিয়ে বসে মোহর। পুরোনো কথা- যেখানে ব্যথা নেই, যেখানে ছায়ার মতো স্নিগ্ধ শান্তি, সেইসব উঠে আসে। পলাশ ঠায় বসে থাকে ওর বাবার পাশে। গায়ে মাথায় ছুঁয়ে থাকে। গুলশান ভাঙা গলায় কবিতা শোনায়। খুব কষ্ট হলে শুধু শুয়ে থাকে। মোহর কয়েকটা গান গুনগুন করে উঠলে ওর চোখদুটো জ্বলজ্বল করে উঠে। সমস্ত প্রাণ যেন ওতেই জমা আছে।
ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই মোহরের। ও নেমেসিস মানে। সেই নিয়তির কাছে মাঝে মাঝেই ভেঙে পড়ে ও। কাঁদবে না ভেবেও নিজেকে আটকে রাখতে পারে না। এই সমস্ত কিছুর জন্যই নিজেকে দায়ী মনে হয় ওর। এই সময়গুলোয় কোথা থেকে যেন পলাশ চলে আসে। কীভাবে টের পায় কে জানে। আত্মজ বলেই কি? ঘাড়ের কাছে হাত রাখে। বলে, “আমি তোমাকেও কাছ থেকে ভালোবাসি।” গালদুটো ভিজে ওঠে মোহরের।
চার
হিসেবমতো বর্ষা আসতে এখনও হপ্তাখানেক বাকি। তবে এর মধ্যেই টুকটাক বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। গঞ্জে প্রতিটা ঋতুরই একটা আলাদা এক্সিস্টেন্স আছে। গ্লোবাল ওয়ার্মি এখনও সেভাবে প্রভাবিত করতে পারেনি। ওপরের ঘরের জানলাগুলো বন্ধ করে এল মোহর। ঝড় উঠলে পাতা উড়ে আসে বিছানায়। গুলশান বলতো- এ আসলে প্রকৃতির ডাক, বলে দিচ্ছে সময় হয়ে এল। গুলশানের শেষ কটাদিন মোহর এই ঘরটাতেই ছিল। এরকম কত ভাবনাই যে ওর মাথায় আসতো। মোহর না বুঝলেও পলাশ ঠিক একটা মানে বের করে দিত ওসব কথার।
পরিকল্পনামাফিক আর ওদেশে ফেরা হয়নি মোহরের। পলাশকে ছেড়েই একদিন চলে যাওয়া আবার ওর জন্যেই থেকে যাওয়াও। ওই যে বলে, ইতিহাস কিছুই ভোলে না। বৃত্তটা ঠিক পূর্ণ হবেই। এই বাড়িটা এখন- গুলমোহর হোমস্টে। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে প্রচারও মন্দ না। বর্ষা পড়লেই টুরিস্ট আরো বাড়বে। সেই মতো প্রস্তুতি নিচ্ছে ওরাও। পলাশের আঁকিবুঁকিগুলো দিয়ে ঘরগুলো একটু অন্যরকম করে সাজাচ্ছে মোহর।
পলাশ নিজেও দারুণ একসাইটেড। শুধু মনখারাপ হলে পশ্চিমের বাগানে বাবার কবরের কাছে গিয়ে কাঠগোলাপ রেখে আসে। মনে মনে কিংবা ফিসফাস কত কথা হয় ওদের। মোহর যখন একা একা কাঁদে, গুলশানের ডায়রি, বই নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে ও ঠিক বুঝে যায়। এরকমই কোনো একদিন মোহরের হাতে একটা ছবি তুলে দেয়। গুলশান আর মোহরের বহু পুরোনো একটা ছবি। ওর কাছে কীভাবে গেল কে জানে! ছবিটা দিয়ে বলে “দূর থেকে ভালবাসলে সময় ফুরিয়ে যায়, কাছে থেকে ভালোবাসো।”
মোহর আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওকে। মনে মনে ভাবে, ভাগ্যিস ছেলেটা বড় হয়ে যায়নি। দূরের বাগানে টুপটাপ আরো কয়েকটা কাঠগোলাপ ঝরে পড়ে।
তারিখঃ এপ্রিল ২৫, ২০২৪