নিরালাপ
জুয়েল মাজহার
১.
পাঁচটি ‘আমি’-কে আমি বয়ে চলি শরীরে আমার
জিভে স্বাদ, কানে বাক্য, ত্বকে ত্র্যহস্পর্শ-শিহরণ
শরীরী গন্ধক চায়, আর চায় মুখ দরশন
পায় না কিছুই তবু। ভাণ্ড-ভাণ্ড না-পাওয়াকে পায়
২.
অপার করুণাবশে অগতির গতি প্রাণনাথ
শূন্য ডালা থরে-থরে শূন্য দিয়ে নীরবে সাজান
৩.
ধীর কম্প্র মধুকথা, মঞ্জু গান শ্রবণে বাজে না
ঝরে না মদিরা জিভে, দু-বাহুতে ঈশ্বরীর ছোঁয়া
৪.
কুষ্ঠের বেদনা ত্বকে। মৃগপথে মেলে না কস্তুরি;
মরীচিকা-বোঝা পিঠে। মুখহীন উটের কাফেলা
৫.
কুহু যদি থেমে যায় কথা বলে ওঠে নিরালাপ;
বসন্ত প্রলাপ এক । উপদংশ ফুলের শরীরে
৬.
সামনে ঝুলছে মুলো গাধা তাই খুব দিলখোশ
কুহকী আয়নাপথে তাকে ডাকে ঘাসের গালিচা
—এটুকুই প্রাপ্য তার আয়ুদীর্ঘ স্যানাটোরিয়ামে
৭.
গাঁজলা ঝরেছে খুব? মনোকল-কব্জা বেসামাল?
পিঁজরা দিয়েছি খুলে; যাও তবে শূন্যের মাজার
৮.
পাঁচজন ভুখা ‘আমি’ বসে আছি তোমার এশেকে
পঞ্চ অন্নব্যঞ্জনের থালাহাতে তুমি তো এলে না
৯.
ছায়াপথে কতো তারা অগোচরে মরে গিয়ে ভূত
হয়েছে, বা, সংকুচিত বামনের রূপ ধরে আছে
অনেক আলোকবর্ষ পরে বসে তার দেখা পাবে
মরণের ওই পারে মিটি মিটি সে এখনো জ্বলে
১০.
কালস্তব্ধ স্ফিংক্স জানে, তাকেও রয়েছে ঘিরে ধাঁধা
অপলক মমিদেহে সে দেখেছে পোকার সঞ্চয়
—বায়ুর ঝাপটে ধীরে তারও দেহে ঘটে চলে ক্ষয়
১১.
প্রাসাদের অন্ত:পুরে রানি পোড়ে শরীরী অনলে
ভ্রূপল্লবে লেখা চিঠি পড়ে নেয় ভাগ্যবান খোজা
সে-রকম বার্তা যদি থাকে লিখো গোপন আখরে
কথা শেষ হয়ে গেলে শুরু হবে নিস্বর আলাপ
১২.
ঈশ্বর যেমনভাবে ধীর সৌম্য ফেরেশতার হাতে
পাঠান ললিত-চারু প্রেম-ওহি উপমা-সংকেতে
সেইমতো লিখো তুমি অনক্ষর-চিঠি—-ইশারায়;
বহু-বহু একা আমি তা দিয়েই জলসা সাজাব
১৩.
কাগজের ফাঁকা মাঠে বোবা ঘোড়া নিয়ে ছুটে যাব
বহু-বহু একা আমি শূন্য মাঠ চিঁহিতে ভরাবো
১৪.
ঢেউ ওঠে কায়াহীন অরূপের রূপের সাগরে
তোমার না-থাকা থেকে তুমি যেন ফুলের বিকাশ
১৫.
একদিন অনিশ্বাসে ঝরে যাবো; তার বহু পর
মনের খেয়ালে ফের পৃথিবীতে ফিরবো মায়ায়
বামনের মতো এক সংকুচিত ভীরু মন নিয়ে
একাকী বসবো কোনো গোদারার ঘাটের সিঁড়িতে
জলের মুকুরে চেয়ে অপলক দেখব তোমাকে;
মুক্তোজ্বলা লেজ নেড়ে জলের ঈশ্বরী তুমি দ্রুত
নিরালাপে রৌপ্যজয় করছো আর দিচ্ছো সাঁতার
অলঙ্করণ : অভিজিত সেনগুপ্ত
তারিখঃ সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১