মিছিল
হাসান কামরুল
বারবনিতাদের মিছিল শহরের অলিগলি ঘুরে,
জমায়েত হয়েছে চার রাস্তার মাথায়।
উৎসুক উলঙ্গ শিশুদের দল কিছুক্ষণ ঘিরে ছিলো জমায়েত,
ওখানে কোন পুরুষ দর্শনার্থী ছিলো না।
কিছুটা আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখলাম,
আশপাশের চা’য়ের দোকান, ঝটপট ক্রেতাশূণ্য হয়ে গেল,
এমনকি শ্যামলীর দোকানেও কেউ নেই।
ওর আধখোলা স্তন আজ কাউকে আকর্ষণ করতে পারেনি।
পুরুষেরা সব লজ্জায় আতংকে লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে।
লতাশ্রী মিছিলের পুরভাগে ছিলো।
ওকে আমি চিনতাম,
কলেজে পড়াকালীন মনে মনে তার প্রেমেও পড়েছিলাম।
সেই সূত্রে বন্ধুরা বলেছিলো, “আগুন ছুবি না, দূর থেকে দেখবি,
নইলে পুড়ে ছারখার”।
আমি সেই অর্থে কখনো তাকে দেখিনি।
কলেজ শেষ হওয়ার আগেই লতাশ্রী নিজেই পুড়েছিলো শুনেছিলাম।
বুকের ভিতরে ব্যথার ঝাপটা লেগেছিলো খুব জোর।
সেই থেকে সিগারেটে আসক্তি আমার।
লতাশ্রী খুব ভালো গান গাইতো।
কলেজের ফাংশনে ও একবার গেয়েছিলো,
” আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে………”
লতাশ্রী এখন বারবনিতা।
আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো, ওকে ডেকে জিজ্ঞেস করি, ও এখানে কেন?
পরক্ষণেই মনে হলো,জিজ্ঞেস করে লাভ নেই,
এর জন্য আমার মত কোন পুরুষই দায়ী।
লতাশ্রী কিছুটা মুটিয়েছে।
পেটের কাছটায় থলথলে চর্বী, চোখে ভারী লেন্সের চশমা।
তার উত্থিত আঙ্গুলের আহ্বান যেন ধারালো তরবারি,
কেটে নিচ্ছে এক এক করে এক একজন ধর্ষকের উত্থিত শিশ্ন।
সে চিৎকার করে বলছে,
“এভাবে ধর্ষণ করা যাবে না,
বিনে পয়সায় আমাদের ব্যবহার কর”।
সভ্যতাকে ব্যঙ্গ করে যেভাবে শাসন চালিয়ে যায়
গোঁয়ার প্রকৃতি,মনে হলো সেভাবে চলমান সামাজিক
অবক্ষয়ের গায়ে খুব জোরে ধাক্কা দিয়ে দিলো লতাশ্রীর আহ্বান।
পেছন ফিরে হাঁটতে হাঁটতে শুনতে পেলাম, শ্যামলীর অট্টহাসি।
তারিখঃ ডিসেম্বর ২০, ২০২০