আবহমান

 

ষোড়শ জনপদের অন্যতম মগধ। ইতিহাস তাহার অনেক কথাই বলিয়াছে। কিন্তু ইতিহাসের আঁকে-বাঁকে কিঞ্চিৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন কোণ হইতে উৎপন্ন কয়েকটি ঘটনা, মানসপটে কী এক চিত্র রচনা করিয়া যায়, তাহার যৎসামান্য অংশ আজ প্রিয় পাঠকের সহিত ভাগ করিয়া লইব…

 

*********** ইন্দ্রপতন***********

 

সেদিন সকাল হ‌ইতেই আকাশ কৃষ্ণবর্ণ বজ্রগর্ভ মেঘে সম্পূর্ণরূপে আবৃত ছিল। সন্ধ্যা হ‌ইতেই মধ্যে মধ্যে অশনির নীলাভ বিচ্ছুরণ ও হুংকারে পৃথ্বীতল বিপুল বর্ষণ সম্ভবনায় থরথর করিয়া কাঁপিতেছে। পথঘাট প্রায় জনশূন্য। শুধু অতন্দ্র প্রহরীর ন্যায় দুইটি হস্তিনীর পৃষ্ঠে দুই সৈনিক কোষমুক্ত তরবারি ল‌ইয়া রাজপুরীর সিংহদ্বার রক্ষা করিতেছে।

 

মৌর্য রাজবংশের ইহাই রীতি। সিংহদ্বারের দুই পার্শ্ব কীলক দ্বারা রুদ্ধ কিন্তু মধ্যভাগ উন্মুক্ত। প্রাকারশীর্ষে একটি বিস্তৃত কেতন, তাহাতে ছয়টি ময়ূর চিত্র রহিয়াছে। ঝঞ্ঝাপাতে কেতন সহর্ষে উড়িতেছে!

রাত্রি দ্বিতীয় প্রহর, তবুও পুরীর সদস্যেরা বিনিদ্র।

রাজপুরীর অন্দরমহলের পূর্বে যে মহলটিতে রাজার শয়ন-মন্দির, এই দুর্যোগের রাত্রিতে সেইখানেই সবাই উপস্থিত। রাজার ষোড়শ রাণীর মধ্যে চারুমিত্রা ও সুভদ্রাঙ্গী রাজার শয্যাপার্শ্বে বসিয়া রহিয়াছেন। অন্যেরা নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করিয়াই বোধহয় বেশ উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিতেছিলেন। শতপুত্র যেন পরস্পরের অচেনা। অন্তরে কী চলিতেছে, তাহাদের মুখচ্ছবিতে ধরা পড়ে না।

 

হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই ইন্দ্রপতন ঘটিবে। এমত অবস্থায় দেবকুলও যেন আসন্ন দুর্ঘটনা অবশ্যম্ভাবী জানিয়া অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামাইলেন।

 

চারুমিত্রার চক্ষু নিষ্পলকে রাজা বিন্দুসারের পান্ডুর বর্ণ মুখাবয়বের পানে চাহিয়া রহিয়াছে।

 

সুভদ্রাঙ্গী ফুলিয়া ফুলিয়া ক্রন্দন করিতেছেন। বৈদ্যরাজ এবার একটু কঠোর কণ্ঠে কহিলেন,

–”রাজমহিষীগণ, মহারাজের অন্তিম সময় আসন্ন। আপনারা শোক সংবরণ করুন এবং এই স্থান পরিত্যাগ করুন।”

রাজপুরোহিতের দিকে চাহিয়া বলিলেন,

–”রাজ পুরোহিত ! আপনি ঈশ্বরের নাম করুন।”

 

অমাত্য সুবন্ধু হস্ত তুলিয়া থামিতে বলিলেন, রাজার দিকে ইঙ্গিত করিলেন। রাজা বিন্দুসার অস্ফুটে উচ্চারণ করিতেছেন,

–”হে মহাবীর তীর্থঙ্কর !”

 

কক্ষমধ্যে স্তব্ধতা নামিয়া আসিল। প্রদীপগুলি দুর্যোগের দমকা বাতাসে নির্বাপিত-প্রায়!

 

সুভদ্রাঙ্গী ক্রন্দন চাপিয়া প্রস্থান করিলেন। চারুমিত্রা চিন্তিত। সুসীম এখনও আসিল না। সে এইরূপ উশৃঙ্খলতা কোথা হইতে পাইল? পিতার মৃত্যুশয্যার পার্শ্বে থাকিবার সৌজন্যটুকু যে দেখাইল না, সে রাজা হইবে কী করিয়া? পিতা বলিলেই বা রাজ্যের প্রজারা, অমাত্যরা মানিবেন কেন? বিশেষত সুভদ্রাঙ্গীর যখন দুই পুত্র রহিয়াছে।

 

সুভদ্রাঙ্গীর পুত্রদ্বয় অনতিদূরে দন্ডায়মান রহিয়াছে। তাহারা অশোক ও বীতশোক। শোক করা তাহাদের পক্ষে শোভন নয়। অশোকের হনুদ্বয় কঠিন হইয়া উঠিয়াছে। সে জানিয়াছে পিতা তাহাকে রাজা বলিয়া মনোনীত করেন নাই। তাঁহার মাতা রাজপুত্রী নন। সুসীম রাজা হইবে। ঐ লম্পট, বিলাসী, কোপন-স্বভাব, নিষ্ঠুর সুসীম।

 

বাল্যকালে অশোক শান্ত, ভীরু ও ক্ষীণতনু ছিলেন বলিয়া কম নিগ্রহ করে নাই সে। একবার তাহাকে কোমরবন্ধনীর সাহায্যে বৃক্ষের সুউচ্চ শাখায় ঝুলাইয়া রাখিয়া রাজপুরীতে ফিরিয়া আসিয়াছিল। নৈশাহারের সময় ডাক পড়িলে তাহার অন্বেষণ শুরু হইল। ততক্ষণে ষষ্ঠবর্ষীয় বালকটি বৃক্ষশাখায় রোদন করিতে করিতে জ্ঞান হারাইয়াছে, সুসীমের ত্রাসের কারণে অন্য ভ্রাতাগণ শঙ্কিত ছিল, কেহ কিছু কহে নাই।

 

রাত্রিকালে প্রহরীবৃন্দ তাহাকে উদ্ধার করিয়া লইয়া আসে। মাতা সুভদ্রাঙ্গী অতীব রোদন করিয়াছিলেন, কিন্তু প্রতিবাদ করিতে পারেন নাই, তিনি অজীবিক গোষ্ঠীর কন্যা, তাহার উপর নম্র স্বভাবা। ফলে তাঁহার উপস্থিতি ছিল অনেকটা অমাবস্যার চন্দ্রের ন্যায়। আছেন কিন্তু কেহ দেখিতে পাইতেছে না। এবংবিধ অত্যাচার অশোক ও বীতশোককে শৈশবে অহরহ সহ্য করিতে হইয়াছে।

 

এক্ষণে সুসীম মগধের রাজা হইলে, তাহাদের কী হইতে পারে, ভাবিয়া অশোক সক্রোধে স্থান ত্যাগ করিয়া নিজ কক্ষে আসিলেন। পিতার জীবদ্দশাতেই উজ্জয়িনীর শাসনভার পাইয়াছেন। কিন্তু অশোক মগধের সিংহাসন চান। বীতশোক তাহার অনুগত। কিন্তু অন্যেরা… অশোকের মস্তিষ্ক নিজ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় ব্যস্ত হইয়া পড়িল। সুসীমের রাজ্যলাভ কোনক্রমেই সহ্য করা যাইবে না। সত্ত্বর রাধাগুপ্তর সহিত বাক্যালাপ প্রয়োজন।

 

অশোকের চিন্তাধারা পাকে পাকে কুণ্ডলীকৃত হ‌ইতেছিল, ইতোমধ্যে বাতাস মৃদু ক্রন্দনধ্বনি বহিয়া আনিয়া বুঝাইয়া দিল, অশোকের কর্মকাণ্ড আরব্ধ হইবার সময় আসিয়াছে। তিনি উঠিয়া পিতৃমন্দির অভিমুখে গমন করিলেন।

 

সিংহদ্বারে পতাকা অবনমিত হইল, হস্তীযুগল বৃংহন করিয়া রাজার অন্তিমযাত্রাকে সম্মান জানাইল। এখন সূর্যোদয়ের অপেক্ষা…

 

অশোক কক্ষমধ্যে ঢুকিয়া দেখিল মাতা সুভদ্রাঙ্গী ও বিমাতা চারুমিত্রা চিত্রার্পিতের ন্যায় বসিয়া আছেন। রাজা বিন্দুসারের সমস্ত দুশ্চিন্তার অবসান হইয়াছে, এক্ষণে তিনি শান্ত, সমাহিত হইয়া নক্ষত্রালোকিত পথে অন্যলোকে যাত্রা করিয়াছেন। সে পথে শত্রুতা নাই, অস্ত্র নাই, সে পথে রক্ত নাই, প্রতিযোগিতা নাই। প্রয়োজন নাই কোন বাহনেরও।

 

অশোক পিতার চরণপ্রান্তে দীনহীনের ন্যায় বসিয়া পড়িলেন। এ দৃশ্য রাজপুরীর সকলেই দেখিল এবং অশোকের পিতৃভক্তি সম্বন্ধে নিঃসন্দেহ হ‌ইল। বীতশোকও পিতার পদস্পর্শ করিলেন। সুসীম এখনও আসে নাই। বর্ষণ ক্ষান্ত হইয়াছে। ঊষাকাল সমুপস্থিত…

পরদিন প্রাতে ঘোষক, রাজা বিন্দুসারের জীবনাবসান ঘোষণা করিলে মগধবাসী রাজপুরীর বাহিরে ভিড় জমাইল। তাহারা রাজকীয় শোকযাত্রা দেখিবে। পরবর্তী রাজাকেও একবার দেখিতে চাহে।

 

************ভ্রাতৃনিধন**************

 

তিন বৎসর অতিক্রান্ত ।

অশোক তাঁহার কক্ষে রাধাগুপ্তের সহিত একান্তে আলাপ করিতেছিলেন। রাধাগুপ্ত বলিতেছিলেন,

–”কুমার, এই উপযুক্ত সময়। এখন‌ও রাজার আনুষ্ঠানিক অভিষেক হয়নি। আপনাকে অস্থায়ী রাজত্ব দেওয়া হয়েছিল, একথা সকলেই জানে। কিন্তু সুসীমের প্রত্যাবর্তনে সিংহাসন এখন প্রশ্নের সম্মুখে। রাজ্যে বিশৃঙ্খলা আসন্ন, প্রজা বিদ্রোহের সমূহ আশঙ্কা। কেউ ঐ দুরাচারী রাজা চায় না। এই সুযোগ হারানো অনুচিত। গুপ্তহত্যা ব্যতীত পথ নেই।”

 

–”যথার্থ রাধাগুপ্ত , সুবিশাল এই মগধ রাজ্য, একে সুসীমের মতো অনুপযুক্তের স্কন্ধে স্থাপন করা পিতৃপুরুষের ‌অবমাননা।”

 

–”সুসীম সর্ববিষয়ে অসংযত। বিদ্রোহ দমনেও ব্যর্থ। কুমার আপনি শুধু ছলেবলে তাঁকে পরিত্যক্ত পাকশালার পশ্চাতে উপস্থিত করুন। আমার লোক থাকবে, দেহটিকেও নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত স্বস্তি নেই।”

 

–”সাবধান রাধাগুপ্ত ! আমার রাজ্যাভিষেকের পূর্বে যেন জনগণ হত্যার সংবাদ সম্পর্কে অবগত না হয়!”

 

–”হবে না কুমার, নিরুদ্দেশের সংবাদ রটিত হবে।”

 

*****************

অশোক সেদিন দ্বিপ্রহরে ভ্রাতা সুসীমের কক্ষে গিয়া দাঁড়াইলেন। সুসীম মাদকাসক্ত ছিলেন, তিনি অর্ধচেতন অবস্থায় দেখিলেন, কেহ যেন আসিয়াছে, বলিলেন,

 

–”কে এসেছো ? এই সুসীম এখন রাজা। জানো না, মগধ মহারাজকে সসম্মানে সম্বোধন করতে হয়? কার এতো বড়ো দুঃসাহস! অসময়ে প্রবেশ করে আবার নীরবে দাঁড়িয়ে আছো ? স্পর্ধিত দুর্বিনীত…”

কণ্ঠস্বর উচ্চে তুলিয়া ডাকিলেন,

–”প্রহরী, প্রহরী!

প্রহরী ছুটিয়া আসিল। সে অশোককে আসিতে দেখিয়াছিল, তাই কোনো প্রশ্ন করে নাই। এক্ষণে প্রমাদ গণিল,

সুসীম বজ্রপাতের মতো কঠিন শব্দে বলিলেন,

–”তোমাকে পদচ্যুত করব। জানো না! আমার এখন বিশ্রামের সময়! কেন এ সময় কাউকে কক্ষে আসতে দিয়েছ?”

প্রহরী নিঃশব্দে দাঁড়াইয়া রহিল, কাহাকে কী বলিবে বুঝিতে পারিল না। সুসীম অশোকের দিকে অঙ্গুলিসঙ্কেত করিয়া আবার বলিলেন,

–”বহিষ্কার করো, সত্ত্বর!

বলিয়া টলিতে টলিতে উঠিয়া দাঁড়াইলেন, হস্তে উন্মুক্ত তরবারি ঝলসিয়া উঠিল। পদস্খলন হইতেছিল, প্রহরী অগ্রসর হইয়া সুসীমের বাহু সবলে ধারণ ধরিল। সে বোধ করি নবীন প্রহরী ছিল। জানিত না রাজার বাহুতে স্পর্শ করিবার মতো ধৃষ্টতার কী শাস্তি হইতে পারে।

সুসীম তৎক্ষণাৎ তীব্রস্বরে,

–”পাপিষ্ঠ ! তোর এতো দুঃসাহস!”

বলিয়া তরবারির এক কোপ বসাইয়া দিলেন, তাহার দক্ষিণ স্কন্ধে, প্রহরীর দক্ষিণ হস্তটি দেহচ্যূত হইয়া ভূপতিত হইল, প্রহরী যন্ত্রণায় চিৎকার করিয়া ছটফট করিতে লাগিল। সুসীম রক্তাক্ত প্রহরীকে দেখিয়া অট্টহাস্য করিয়া উঠিলেন।

 

অশোক ঐ ঘটনার পর আর থাকিতে পারেন নাই। চলিয়া আসিলেন এবং সায়ংকালের জন্য অপেক্ষা করিতে লাগিলেন। তাঁহার বাল্যকাল হইতে দেখা এই নিষ্ঠুরতা তাহার অন্তরের কোমল অনুভূতিগুলিকে মারিয়া ফেলিয়াছিল। তিনি বুঝিয়াছিলেন, অস্তিত্ব রক্ষা করিতে হইলে নিষ্ঠুরতাই একমাত্র পথ।

সায়ংকালে সুসীম একা কিছুক্ষণ উদ্যানে সময় অতিবাহিত করেন। এক্ষণে তিনি দ্বিপ্ররের কথাই ভাবিতেছিলেন, কে যেন আসিয়াছিল? কোনো ষড়যন্ত্র হইতেছে কি?

অশোক হাসিমুখে আসিয়া দাঁড়াইলেন, এক্ষণে সুসীম তাঁহাকে চিনিতে পারিলেন। বলিলেন,

–”অহো ভ্রাতা অশোক, বলো উজ্জয়িনীর বার্তা কী?”

দুই হস্ত ছড়াইয়া ব্যঙ্গ মিশানো কণ্ঠে বলিলেন,

–”মগধরাজের নিকট কিছু প্রার্থনা থাকলে বলো! রাজা কাউকেই নিরাশ করেন না! হাঃ হাঃ হাঃ!”

অশোক অত্যন্ত বিনীত স্বরে বলিলেন,

–”ভ্রাতা, কালই আমি এ প্রাসাদ ত্যাগ করবো,

আজ ক্ষণিক উপবেশন করি, আপনার অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন সম্বন্ধে আলোচনা করি!”

 

রাধাগুপ্ত তাঁহার এক বিশ্বস্ত অনুচরকে নিযুক্ত করিয়া রাখিয়াছেন। অশোক সুসীমকে বাক্যালাপে অন্যমনস্ক করিয়া পূর্বনির্দিষ্ট স্থানে লইয়া আসিলেন। সূর্যাস্ত হ‌ইলো। উদ্যানের এই প্রান্ত অবহেলিত পড়িয়া আছে। পূর্বে একটি পাকশালা ছিল। তাহার বিশাল একটি কুণ্ড এখনও রহিয়া গিয়াছে।

অশোক ও সুসীম বাক্যালাপ করিতে করিতে কুণ্ডের নিকট আসিয়াছিলেন। সুসীম হস্তের সুরাভাণ্ড হইতে সুরাপান করিতে ছিলেন, এক্ষণে তাহার অন্তর কিঞ্চিৎ উৎফুল্ল। বলিতেছিলেন অনেক কথা।

কুণ্ডটিতে প্রজ্জ্বলিত অগ্নি রহিয়াছে দেখিয়া বিস্মিত হ‌ইলেন।

“এ তো পরিত্যক্ত কুণ্ড! অগ্নি কেন?”

“হয়তো পরিচারকেরা কোনও বিশেষ প্রয়োজনে জ্বালিয়েছে।”

 

সুসীম এখন ভবিষ্যতের সুখস্বপ্নে বিভোর। কোনোদিকে লক্ষ্য নাই। তিনি বিশেষ গুরুত্ব দিলেন না।

এইদিকে অশোকের চক্ষুদুটিও কুণ্ডের ন্যায় জ্বলিতেছিল। উদ্যান হইতে একটি শুষ্ক বৃক্ষশাখা তুলিয়া লইলেন। দেখিতে পাইলেন, একজন বৃক্ষের আড়ালে দন্ডায়মান, অপর পার্শ্বে রাধাগুপ্তও রহিয়াছেন।

 

এই সুযোগ। সুসীমের শির লক্ষ্য করিয়া সজোরে বৃক্ষশাখাটি নিক্ষেপ করিলেন অশোক। তরবারি কোষমুক্ত করিবার সুযোগ পাইলেন না সুসীম। পড়িয়া গেলেন, অশোক তরবারি কোষমুক্ত করিয়া তাহার পঞ্জর ভেদ করিয়া দিলেন। রাধাগুপ্ত আসিয়া বৃক্ষশাখাটি তুলিয়া সুসীমের মস্তকে আঘাত করিতে থাকিলেন। সুসীম জ্ঞান হারাইলেন। সকলে মিলিয়া সুসীমের অচৈতন্যদেহ অগ্নিকুন্ডের মধ্যে ফেলিয়া দিলেন। বৃক্ষশাখাটিও তাহার মধ্যে বিসর্জিত হইল। সুসীমের দেহ ধীরে ধীরে অগ্নি গ্রাস করিয়া লইল।

কেহ জানিল না, একটি জীবন লোকচক্ষুর অন্তরালে ভষ্মীভূত হইয়া গেল। অশোকের চক্ষু এখন আবার স্বাভাবিক হইয়াছে। আর তাঁহার রাজা রহিবার পথে কোনো কন্টক রহিল না। অন্য ভ্রাতাদের মারিতে বেগ পাইতে হইবে না। বিশ্বস্ত সৈন্যগণই তাহা করিতে পারিবে। শুধু বীতশোক রহিল। সে বড়ই অনুগত। অশোক ও রাধাগুপ্ত নিশ্চিন্ত মনে প্রাসাদে চলিলেন।

নিষ্ঠুর একটা হাসি তাঁহার মুখে লাগিয়া রহিল। তিনি বীরদর্পে মেদিনী কম্পিত করিয়া চলিলেন— ভবিষ্যতের শ্রেষ্ঠ সম্রাট— অশোক মৌর্য।

 

************পদ্মনাভান************

কলিঙ্গ রাজপুরীর অভ্যন্তরে মন্ত্রণাকক্ষ। ইচ্ছাকৃতই কক্ষটি সামান্য ছায়ান্ধকার করিয়া রাখা হইয়াছে। অভ্যন্তরে মৃগচর্মের উপর উপাধানে পৃষ্ঠ রাখিয়া উপবিষ্ট আছেন কলিঙ্গরাজ আনন্দ পদ্মনাভান। সুকঠিন পেশীতরঙ্গের সহিত মুখমন্ডলের রাজকীয় আভিজাত্য ও অভিজ্ঞতায় এক অভূতপূর্ব ব্যক্তিত্ব প্রতীয়মান । তাহার সম্মুখে দাঁড়াইয়া প্রগলভতা করিবার স্পর্ধা কাহারও হয় না।

 

নিকটে অপর দুইটি আসনে মহামন্ত্রী বসুমিত্র ও সেনাপতি ভীমদেব বসিয়া আছেন । সম্মুখে গুপ্তচর কঙ্ক। সে মগধের খবর আনিয়াছে।

 

সে বলিতেছিল,

–”রাজা অশোক সৈন্যসমাবেশে অপূর্ব নৈপুণ্য রেখেছেন। মগধ সেনাপতি অভয়ঙ্কর, ভদ্রক, দেবক, কলিঙ্গকে অবরোধ করার পরিকল্পনা করেছে মহারাজ। ওরা পুন্ড্রবর্ধন, উজ্জয়িনী, পাটলীপুত্র- তিন দিক থেকে আক্রমণ করবে। তবে কে কোথা থেকে আক্রমণ করবে, শত চেষ্টাতেও জানতে পারিনি মহারাজ। তাদের সাথে জয়লাভ করতে হলে…”

 

রাজা স্বর্ণমুদ্রা দান করিয়া গুপ্তচরকে বিদায় দিলেন,

সেনাপতির দিকে চাহিলেন,

–”সেনাপতি, কলিঙ্গ-সৈন্যদের যথেষ্ট শিক্ষিত করো, আর পুরাতন পন্থার ওপর নির্ভর করা যাবে না।”

সেনাপতি সম্মতি জানাইল। চিন্তিত চিত্তে রাজাকে অভিবাদন করিয়া বিদায় চাহিল। সভা ভঙ্গ হইল।

******************

ভাস্কর অস্তমিত হইতে এখনও কিছু বিলম্ব রহিয়াছে। আনন্দ পদ্মনাভান তাঁহার প্রাসাদের শীর্ষে উঠিলন। যতদূর দৃষ্টি প্রসারিত হয় রাজ্যের সমৃদ্ধি চোখে পড়ে।

 

মগধের পূর্ব দিকে তাঁহার এই রাজ্য। এর সমৃদ্ধি মগধরাজ চন্দ্রগুপ্তও সহ্য করিতে পারেন নাই। তিনি যুদ্ধযাত্রা করিয়াছিলেন কিন্তু কলিঙ্গ নিজ সম্মান অক্ষুণ্ণ রাখিতে পারিয়াছিল। বিন্দুসারও কলিঙ্গের কেশাগ্র স্পর্শ করিতে পারেন নাই।

 

পদ্মনাভান ভাবিতেছিলন, রাজা অশোক উগ্রতায় পূর্বপুরুষকে ছাড়াইয়া বহুদূর পর্যন্ত অগ্রসর হইয়াছেন। অতএব এইবার বোধকরি রাজ্যরক্ষা করা অতটা সহজ হইবে না। কিন্ত জনগণ সমর্থন করিতেছে, ইহাই তাঁহার ভরসা। আবার কিছু সৈন্যক্ষয়, অযথা অর্থব্যয়, রক্তপাত, একটি দীর্ঘশ্বাস রাজার বুক কাঁপাইয়া বাহির হইয়া বাতাসে মিশিয়া গেল।

 

মহামন্ত্রী আসিয়া দেখিলেন, রাজা চিন্তামগ্ন। তিনি মৃদু কণ্ঠে বলিলেন,

–”মহারাজ! এসময় কি বহির্বাণিজ্য স্থগিত রাখবো? বিদেশীদের কিছু বাণিজ্যতরী এসেছে। তারা রাজ্যের বর্তমান অবস্থা অবগত নয়। কী কর্তব্য মহারাজ?”

–”স্থগিত রাখো। কোনো বিদেশী বণিক যেন এসময় এ রাজ্যে না থাকেন। কলিঙ্গের নাম বৈদেশিক বাণিজ্যে সবার উপরে। তার যেন নিন্দা না হয়। এই যুদ্ধে একজন বিদেশীর মৃত্যুও কাম্য নয়।”

–”যথার্থ মহারাজ!”

–”হ্যাঁ, রাজ্যে যুদ্ধের বার্তা ঘোষিত হয়েছে?”

–”বিলক্ষণ মহারাজ!”

–”প্রজাদের কি প্রতিক্রিয়া?”

–”তাহারা জন্মভূমি রক্ষায় বদ্ধপরিকর। প্রয়োজনে প্রতিটি মানুষ যুদ্ধে যোগ দেবে মহারাজ। তাদের যুদ্ধকালীন শিক্ষায় শিক্ষিত করা হয়েছে।”

–”কলিঙ্গ তবে প্রস্তুত?”

–”সম্পূর্ণরূপে মহারাজ!”

 

রাজার বক্ষ গর্বে আনন্দে পূর্ণ হ‌ইয়া উঠিল।

কিন্তু কলিঙ্গরাজ আনন্দ পদ্মনাভান ভবিষ্যতদ্রষ্টা নহেন। তিনি জানিলেন না, তাঁহার রাজ্য ছারখার হইয়া যাইবে। যে রাজ্যে ঊষাকাল ঘোষিত হয় পক্ষীকুলের কাকলিতে, অচিরেই তা শিশুর আর্তচিৎকারে আকুল হইয়া উঠিবে। হস্তীকুলের বৃংহতি যে রাজ্যের সমৃদ্ধি ঘোষণা করে, সেই রাজ্যের সমাপ্তিও ঘোষিত হইবে তাহাদেরই আর্তনাদে।

ধৌলিপর্বতের ময়দান হইবে রক্তাক্ত। যে দয়ানদীর স্বচ্ছ বারি জীবকুলের তৃষ্ণা নিবারণ করে, সেই নদী রুধিরধারা বহন করিবে। চন্ডাশোক আসিতেছেন, তিনি মৌর্যকেতন নহে, ধ্বংসের উন্মত্ততা বহিয়া আনিতেছেন।

কালান্তক অশোক! নিষ্ঠুরতম অশোক!

পৃথিবীর বীভৎসতম যুদ্ধের নায়ক সম্রাট অশোক মৌর্য!

রচিত হইবে এক অভিনব ইতিহাস। কলিঙ্গের আত্মদানে, রক্তপিপাষু এক নিষ্ঠুর হৃদয় দয়া-বারি সিঞ্চনে দ্রবীভূত হ‌ইবে। চন্ডাশোক ধর্মাশোকে পরিণত হ‌ইবেন। মানুষ পাইবে শান্তির দিশা। দিকে দিকে ধ্বনিত হইবে শিক্ষার জয়ধ্বনি। বৌদ্ধধর্ম পরিব্যাপ্ত হ‌ইবে বিশ্বে। মগধের খ্যাতি আকাশ স্পর্শ করিবে।

 

অন্যদিকে এই খ্যাতিই সবার অলক্ষে সূচিত করিতেছিল মগধের দুর্বলতা। রাজা অশোকের উত্তরপুরুষ ক্রমশ হতোদ্যম হ‌ইয়া পড়িতেছিলেন। ক্ষাত্রধর্ম দয়া ধর্ম নয়। রাজা যুদ্ধ করিবেন না, রাজ্যবিস্তার করিবেন না, তাহা হ‌ইলে রাজা হ‌ইয়া কী হ‌ইবে? দিবারাত্র করিবেন‌ই বা কী! এমনকি মৃগয়াও করিতে পারেন না। পিতৃপুরুষের আদর্শ লঙ্ঘিত হ‌ইবে। ফলে অলস বিলাসিতাই রাজধর্ম বিবেচনা করিয়া সিংহাসনের ভার বাড়াইয়া চলিলেন।

 

হয়তো করিবার মতো বহুতর কার্য ছিল। যদি রাজা রাজপুরীর হইতে বাহির হ‌ইয়া কৃষাণ পল্লিতে যাইতেন, দেখিতেন, কৃষক কন্যা পিতার জন্য যে খাদ্য-পেটিকা বহন করিয়া ল‌ইয়া যাইতেছে, তাহাতে পুষ্টিকর খাদ্যের আয়োজন নগণ্য।

দেখিতেন, যে তন্তুবায় বস্ত্র বয়ন করিতেছে, তাহার পুত্রের পরনে শীতবস্ত্র অপ্রতুল।

যে পুষ্পবিপণীর দোকানি দিবসান্তে ঝাঁপ বন্ধ করিতেছে, সে অর্জিত অর্থ গণিয়া দেখিতেছে ইহাতে ক্ষুধার নিবৃত্তি তো হ‌ইবে, অসুস্থ পিতার ঔষধ হ‌ইবে না।

তাহারা রাজার সাহায্য পাইলে সহাস্যে দেশের জন্য প্রাণ বিসর্জনেও কুণ্ঠিত হ‌ইত না। কিন্তু পরবর্তী রাজারা তাহা ভাবিলেন না।

ফল যাহা হ‌ইবার তাহাই হ‌ইল।

রাজত্ব বিভক্ত হ‌ইল, স্থানীয় প্রভাবশালী গোষ্ঠীপতিকে শাসক নিযুক্ত করিতে হ‌ইল। যুদ্ধ নাই, সৈন্যগণ অলসতার শিকার হ‌ইল। মৌর্য সাম্রাজ্যের সীমা সঙ্কীর্ণ হ‌ইল। জনগন মৌর্য রাজবংশের উপর আস্থা হারাইয়া ফেলিল। এমত রাজনৈতিক অবস্থায় মৌর্যবংশের নবম পুরুষ বৃহদ্রথ সিংহাসনে আরোহন করিলেন এবং শুঙ্গবংশীয় পুষ্যমিত্রকে মন্ত্রী নিযুক্ত করিলেন।

 

*************ষড়যন্ত্র গঠন*************

কালচক্র ঘুরিয়াছে। মৌর্য বংশের সৌভাগ্যসূর্য অস্তমিতপ্রায়। ব্রাহ্মণ্যধর্ম পুণর্বার সরবে নিজ অস্তিত্ব কায়েম করিতে চাহিতেছে। দিকে দিকে তাহাদের ষড়যন্ত্র চলিতেছে।

 

দ্বিজশ্রেষ্ঠ বক্রতুণ্ড দুই হস্ত বন্ধন করিয়া প্রবল বেগে পিঞ্জরাবদ্ধ শার্দূলের ন্যায় পদচারণা করিতেছিলেন। তাঁহার নধর শিখাটিও তাল লয় সহকারে যথাযোগ্য সঙ্গত করিতেছিল।

তিনি চিন্তান্বিত,

এতকাল ঐ বৌদ্ধগুলার খুব বাড় বাড়িয়াছিল, তাহারা ভাবিয়াছিল কী ! রাজার ধন-সম্পদ সমস্ত…

(ভ্রূ তুলিয়া, আঙুল ঘুরাইয়া উদর স্ফীত করিয়া একপ্রকার ভঙ্গী করিলেন) স-ম-স্তই কি তাহাদের ঐ সঙ্ঘারামের মৃত্তিকাতলে সন্তান প্রসব করিবে? বেদ উপনিষদ মানিবে না? এইবার কী হইল! অ্যাঁ? কী হইল? কিন্তু না না, এখনই এত উল্লাসের কিছুই হয় নাই!

তিনি বেদিকায় উপবেশন করিলেন, চাণক্যদেবের শিষ্যপরম্পরা তিনি, এত অধৈর্য হওয়া শোভা পায় না তাঁর।

মৌর্যবংশ ব্রাহ্মণকুলের সমুহ ক্ষতি করিয়াছে। তাহা ব্যতীত দুর্বল রাজবংশের পতন হ‌ওয়াও উচিৎ।

 

শেষ অবধি ঐ পুষ্যমিত্রকে দিয়া কার্যোদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত শান্তি নাই। বৃহদ্রথকে সে নিজে হত্যা করিবে। সেনাদল তাহার অনুগত। তবুও সে আপন হস্তে মারিবে। তাহাকে চটাইলে চলিবে না। বলাও যায় না, যা উগ্রচন্ড ঐ শুঙ্গটা অকস্মাৎ তাঁহাকেই না মারিয়া ফেলে! অবশ্য ফেলিলেও আশ্চর্য হইবার কিছু নাই। পাষণ্ড প্রকৃতির মানুষ। বৌদ্ধগুলাকে নির্মূল করিতে হইলে অবশ্য সুস্থির মস্তিষ্ক হইলে আবার চলিবেও না। গোঁড়া ব্রাহ্মণ ভক্ত হইতে হইবে, তাহার সহিত ক্ষাত্রতেজের সংমিশ্রণও আবশ্যক।

 

এমত সময়ে চিত্রশর্মা আসিলেন, দেখিলেন, বক্রতুণ্ড অতিশয় উত্তেজিত।

 

–”কী হে! বঙ্কিম শুণ্ড! কী এত ভাবছো?”

–”না আচার্য চিত্রশর্মা! পরিহাসের সময় এ নয়। আমাদের ষড়যন্ত্র যদি প্রকাশ হয়ে যায়? তবে শিরশ্ছেদ অনিবার্য।”

–”মৌর্যবংশের চতুর্থ পুরুষ রাজা দশরথ মৌর্য থেকে নবম পুরুষ বৃহদ্রথ মৌর্য! ছয় পুরুষ ধরে যে ক্ষোভ ধীরে ধীরে পল্লবিত হয়েছে, এই ষড়যন্ত্র তার ফসল। অতো সহজে প্রকাশ হবার নয়।”

–”আমাদের উদ্দেশ্য শুধু ধনরত্ন সংগ্রহ করা।”

–”শুধু বৌদ্ধগুলোকে বিতাড়িত করে সঙ্ঘারাম থেকে সোনাদানা উদ্ধার করার সময় একটু সাবধানে থাকতে হবে। শুঙ্গটা যেন আবার লোভে পড়ে আমাদেরই ফাঁকি না দেয়…”

–”হুঁ-উঁ-উঁ-উঁ-ম্ !” বলিয়া বক্রতুণ্ড ও চিত্রশর্মা চারি চক্ষে কুটিলতা মাখাইয়া ভ্রু বাঁকাইয়া, নাসিকা স্ফীত করিয়া মুন্ডিত মস্তকের শোভা-বর্ধনকারী সুপুষ্ট শিখাটি অঙ্গুলিতে জড়াইতে লাগিলেন।

 

************

 

হে পাঠক,

 

ইতিহাস থামিয়া থাকে না। এক বংশের পর আরও এক বংশের হস্ত ধারণ করিয়া সে চলিতে থাকে। পূর্ববর্তী বংশের ইতিহাস স্তব্ধ হ‌ইলেও বংশধারা সমাপ্ত হয় না। বৃহদ্রথ নিহত হ‌ইলেন। তাঁহার সন্তান সন্ততি রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ছড়াইয়া পড়িল। পুষ্যমিত্র শুঙ্গ রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করিলেও মৌর্যদের সকলকে হত্যা করিতে পারেন নাই। কে বলিতে পারে, আপনার সহযাত্রীটির রক্তে মৌর্যবংশের বীজ নাই! অথবা আপনি যাঁহাকে এইমাত্র মৎস্যের মূল্য ল‌ইয়া দোকানির সহিত বাদানুবাদ করিতে শুনিয়াছেন, তিনি মৌর্য বংশীয় মহীরুহের পত্র নন! এইরূপেই আপনি, আমি এবং সকল সাধারণ মানুষের মধ্যেই ইতিহাস বাঁচিয়া আছে, ভবিষ্যতেও থাকিবে।

 

তারিখঃ অক্টোবর ১১, ২০২৩

Subscribe
Notify of
guest
5 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Argha Roy Chowdhury
Argha Roy Chowdhury
1 year ago

এই ধরনের গদ্যে আপনি অনতিক্রম্য। এই অদ্ভুত শক্তিমত্তা, আমার শ্লাঘা সমুৎপন্ন করে, যে আমি আপনার পাঠক, এবং বন্ধু। এই গদ্যনির্মাণ এবং এর সাবলীল গতি, বারবার বিমোহিত করেছে।

Ranu Sil
Ranu Sil
1 year ago

আপনাদের মতো মানুষের প্রশ্রয়েই কলম চলে। শুভকামনা নেবেন।

Saad Zaglul Abbas
Saad Zaglul Abbas
1 year ago

অভিনব শব্দচয়নে আমি বিস্মিত !পর্বভাগ চমৎকার। প্রাচীন সাধু ভাষায় রচিত হলেও আধুনিক কালের রস গল্পে পুরোই আস্বাদন করেছি। এটাই বোধহয় আপনার স্খুবকীয়তা। খুব ভালো লাগলো।

Ranu Sil
Ranu Sil
1 year ago

আপনাদের মতো মানুষ পড়েন, এটাই পুরষ্কার আমার।

Ranu Sil
Ranu Sil
1 year ago

@Argha Roychowdhury
আপনার কমেন্টের উত্তর পোস্ট হচ্ছে না, কেন জানি না। শুভকামনা জানাই।

প্রকাশক - Publisher

Site By-iconAstuteHorse