খাঁচা

 

ভর দুপুরে এক একদিন যেমন করে একটুকরো চৈতালি বাতাস পথ ভুলে পোড়ো বাড়িটায় ঢুকে গিয়ে আটকে পড়ে, ঠিক তেমনই স্মৃতিকণা দেবীর মস্তিষ্কের কোষগুলোতেও এক একটা গান মাঝেমধ্যেই আটকে যায়। ঐ আটকে পড়া বাতাসটা যেমন ছটফটিয়ে বেড়ায় ভাঙা দরজা-জানালায় আর পুরোনো দরদালানে, গানের কথাগুলো ঠিক তেমনই তাঁর মাথা জুড়ে ছুটোছুটি করে।
এই তো সেদিন মেয়ে-জামাই এলো অনেকদিন বাদে দেখা করতে। কোথায় আগমনীর সুরে মন ভরবে তা নয়, মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে স্মৃতিকণা দেবীর মনে পড়তে লাগল, “বলো তার কী অপরাধ, জন্ম হয়েছে যার পাপে!” আর কেন যেন মনে হতে লাগল তাঁর শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। মেয়ে প্রণামটা সেরেই বলল, “ইশ, মা, বাড়িটার কী অবস্থা হয়েছে! বলি কী, এবার এর মায়া ছাড়ো। ডেভেলপারকে দিলে সবাই আমরা আরামে থাকতে পারব।” আড়চোখে দেখলেন জামাই এদিক সেদিক ঘুরেঘুরে মাপজোক করছে। বুকের ভেতর চাপচাপ ভাবটা কাটাতে তিনি গুনগুনিয়ে উঠলেন, “তোমার ছোঁয়া দিয়ে তুমি, ফোটাও পদ্ম করে তাকে…”। মেয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকাল, “তোমার মাথা-টাথা ঠিক আছে?” জামাই অবাক হয়ে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ, তারপর মেয়েকে একপাশে ডেকে নিয়ে ফিসফিস করে কী যেন বলতে শুরু করল। হঠাৎ করেই মনে পড়ে গেল মেয়েটা পেটে আসার আগে তিনি স্বামীর কাছে আসতে চাইতেন না। বয়সে অনেক বড় ছিল লোকটা, কিশোরী স্মৃতিকণা তাকে ভীষণ ভয় পেতেন। একরাতে লোকটা তাঁকে জোর করে ঘরে ধরে এনে তাঁর সাথে সহবাস করল। পুরো সময়টা সে একহাতে কণ্ঠনালী চেপে রেখেছিল যেন বউ কোন শব্দ করতে না পারে। ঐ আইনসঙ্গত বলাৎকারেরই ফসল তাঁর এই মেয়েটি। গানের ধাঁধাটা মিটে যাওয়ায় তাঁর মাথাটা হালকা হয়ে গেল। এবার তিনি স্বাভাবিকভাবে মেয়ে- জামাইয়ের সাথে কথাবার্তা বলা শুরু করলেন। তাঁর মনে হলো এতে যেন তারা একটু হতাশ হয়েই চলে গেল।

আবার মলিনার মায়ের জ্বর হয়েছে বলে যেদিন মলিনা তাঁর ঘরদোর পরিষ্কার করতে আসল সেদিন তিনি সারাদিন আপন মনে গাইলেন, “নদীতে জল নাইরে তবু ছল ভরে কলসে/ কলঙ্কিনী যখন তখন খেয়াঘাটে আসে।” মলিনা তাঁর গান শুনে ফিক করে হেসে বলল, “দিদিমার প্রাণে দেখি রস উথলে উঠছে গো!” কী কেলেঙ্কারি! তবে বেলাশেষে যখন জানালা দিয়ে দেখলেন মলিনা তার মনের মানুষের গায়ে হাসতে হাসতে ঢলে পড়ছে তখন মনে হলো গানটা একদমই ঠিক ছিল।

সারাদিন একা একা তুরতুর করে তিনি পুরোনো বাড়িটার এঘর সেঘর ঘুরে বেড়ান। এই বাড়ির কোণে কোণে জমে থাকা হাজারো ভালমন্দ স্মৃতিরা তাঁকে সঙ্গ দেয়। এ বাড়ির সবচেয়ে ভাল দিক হচ্ছে বাড়িটায় ঐ লোকটা আসেনি তেমন। এ বাড়ি স্মৃতিকণা দেবীর মাসির বাড়ি। ছোটবেলায় স্কুলের ছুটিতে তিনি মাসির কাছে এসে থাকতেন। দুটি মাসতুতো ভাই তাঁর চেয়ে বয়সে অনেকটা বড় ছিল। ওরা ওদের মতো পাড়ার বন্ধুদের সাথে বেরিয়ে যেত। মাসি তাঁকে আদর করে সাজাতেন, খাওয়াতেন। স্মৃতিকণা যেন মাসির আদরের পুতুল ছিল একটা। মাসির খুব মেয়ের শখ ছিল, সেই শখ তিনি স্মৃতিকণাকে দিয়ে মেটাতেন। মেসো ছিলেন গোলগাল ভাল মানুষটি। অফিস থেকে ফেরত আসার পথে তিনিও স্মৃতিকণার জন্য এটা সেটা হাতে করে নিয়ে আসতেন। সব মিলিয়ে এ বাড়িটার পরতে পরতে যেন আদর মাখা। রগচটা স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে যেদিন তিনি একবস্ত্রে শ্বশুরবাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন, সেদিন এই বাড়িতেই তাঁর ঠাঁই মিলেছিল। স্মৃতিকণার বাবা-মা সংসারত্যাগী কন্যাকে ঘরে নিতে চাননি, কারণ তাঁদের উপর তখনও আরও দুটি অবিবাহিতা কন্যার দায়ভার। মেসো-মাসিই সেদিন তাঁকে বুকে আগলে রেখেছেন সমাজের শত গঞ্জনা সয়ে। মাসির কন্যাদায়ের ভয় ছিলনা। তাঁর পুত্রদুটি ততদিনে কালাপানি পাড়ি দিয়ে ভিনদেশে বসত গড়েছে। শেষ বয়সে স্মৃতিকণাই মেসো-মাসির সম্বল ছিল। আড়ালে সবাই বলত সে উদ্দেশ্যেই নাকি মাসি ষড় করে স্মৃতিকণার সংসারটি নষ্ট করেছেন। মরার সময়ে মাসি যখন উইল করে এ বাড়ি আর জমানো টাকা সব স্মৃতিকণাকে দিয়ে গেলেন তখন এমনকি ভিনদেশে সুখে থাকা ভাইদুটোও নাক সিঁটকে বলেছে, “বেশ করে সব বাগিয়ে নিলি স্মৃতি! তোরই কপাল!” সেকথা মনে পড়লেই তিনি মনে মনে মেসোর প্রিয় সেই গানটা গাইতে থাকেন – “ও তোতাপাখিরে, খাঁচা খুলে উড়িয়ে দেব, মাকে যদি এনে দাও; আমার মাকে যদি এনে দাও…”। মেসো প্রায় সন্ধ্যায় ফিরেই ডাক দিতেন, “স্মৃতি! মা! হারমোনিয়ামটা নিয়ে এসো তো এদিকে!” ছোটবেলায় মা হারানো মেসোমশাইয়ের সবচেয়ে প্রিয় গান ছিল “মাকে যদি এনে দাও!”। প্রায়ই তাঁর চোখ জলে ভরে যেত… বৃদ্ধ বয়সে এসেও তাঁর মাতৃহীন শৈশব তাঁকে তাড়া করে ফিরত।

স্মৃতির শৈশব নিয়ে তেমন কোন মাতামাতি নেই। অনেকগুলো ভাইবোনের সংসারে আগাছার মতো বেড়ে ওঠা। স্মৃতিই সবচেয়ে বড়। ছয়- সাত বছর বয়স থেকেই ছোট ভাইবোনদের দেখাশোনা করতে হয়েছে। ঐ মাসির বাড়ি এলেই যা একটু ফুরসত মিলত নিজের জন্যে। বিয়ে হয়েছিল অল্প বয়সে, জোর করে মা বানাতেও দেরি করেনি পতিদেবতা। ঐ বাড়ি ছেড়ে আসার সময়ে নিজের মেয়েটার কথা তাঁর মনেই পড়েনি। একচক্ষু হরিণীর মতো ছুটে চলেছিলেন সেই একটা বাড়ির দিকে যেখানে তাঁর নিজস্ব একটি জগত ছিল, গান ছিল, আদর ছিল।

মেয়ের সাথে অনেকদিন তাঁর কোন যোগাযোগই ছিল না। মেয়ের বাবার কড়া নিষেধ ছিল আর স্মৃতিকণার ছিল প্রবল আতঙ্ক। তিনি দীর্ঘদিন এই বাড়িটায় স্বেচ্ছাবন্দী ছিলেন, মনে হতো বের হলেই ‘ওরা’ ধরে নিয়ে যাবে। সেই ‘ওরা’ যে কারা সেটা অস্পষ্ট, কিন্তু আতঙ্কটি ছিল সুতীব্র। তাঁর নিজের বাবা-মাই আত্মীয়সমাজে রটিয়ে দিয়েছিলেন স্মৃতিকণার উপর পরি ভর করেছে। শ্বশুরবাড়ির লোকেরও তাতে সায় ছিল, কারণ দুপক্ষেরই তাতে দায় বাঁচে। শোনা যায় শাশুড়ি বর্ণনা করতেন কেমন করে এক দুপুরে স্মৃতিকণা খোলা চুলে বাড়ির পেছনে তেঁতুলতলায় গিয়েছিল আর সেদিনই তাদের সুন্দরী বউটার উপর পরি ভর করে। যে গল্পে একটি আতঙ্কে দিশেহারা কিশোরী বধু দুপুরবেলা লুকিয়ে তেঁতুলগাছে উঠে পেছনের দেওয়াল টপকে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিল সে গল্পটা কখনোই কেউ বলেনি। মাসি-মেসো এ নিয়ে কারও সাথে কোন কথাই বলতেন না, তাই পরির গল্পই সবার কাছে বহাল রইল।

মেয়ের বিয়ে দিয়েছিল মেয়ের বাবা, স্মৃতিকণার সেখানে কোন ভূমিকা নেই। ততদিনে তিনি প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন তাঁর একটি মেয়ে আছে। মননে তিনি মাসির বাড়ির নিরাপদ ভুবনে গান গেয়ে বেড়ানো এক চির-কিশোরীই রয়ে গেলেন। তাঁর নিজের শরীরে আর বাইরের পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া পরিবর্তনগুলো যেন তাঁকে ছুঁতেই পারল না। মাসি শেষদিকে দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন, স্মৃতিকণা তাঁর দেখাশোনা করতেন আর সন্ধ্যেবেলা মেসোকে গান শোনাতেন। এরই মাঝে হুট করে একদিন সুস্থ সবল মেসোই চলে গেলেন পরপারে। এরপর মাসিও আর বেশিদিন রইলেন না। এতে যেন দূর্গদ্বারের আগল খুলে গেল। যে মানুষগুলো স্মৃতিকণার অস্তিত্বই ভুলে গিয়েছিল তারা হঠাৎ করেই দেখল এই পরিতে পাওয়া আলাভোলা মেয়েটা কেমন করে একটা বাড়ির মালিক হয়ে বসেছে। আবার তার নামে মাসে মাসে টাকাও আসে মাসির করে যাওয়া ব্যাবস্থায়। অনেকেরই তখন স্মৃতিকণার জন্যে ভীষণরকম দরদ দেখা দিল, তাঁর কাছে থাকার জন্যে অস্থির হয়ে উঠল সবাই। সে সময়ে স্মৃতিকণাকে আগলে রেখেছিল মুখরা মলিনার মা। মলিনার মা অনেকবছর ধরেই এ বাড়িতে কাজ করছে। সে তার বাক্যবাণে সবাইকেই তাড়িয়েছে। এখন শুধু ঐ মেয়ে-জামাই মাঝেমধ্যে আসে, আর কেউ আসে না। বাড়িটা মেরামতের অপেক্ষায় থেকে থেকে স্মৃতিকণার সাথেই ক্রমশ জীর্ণ হয়ে আসছে। মাসে মাসে আসা টাকার অঙ্কটিও দিন দিন কমছে। তবে স্মৃতিকণার তেমন কোন চাহিদা নেই। সাধারণ ডাল-ভাতে তার দিন চলে যায়। মাসির পুরোনো কাপড়গুলো পরতে পরতে নরম হয়ে গেছে, সেগুলোই তাঁর ভাল লাগে। শুধু এই বাড়িটাই যেন তার নিরাপত্তার কবচ, এ বাড়ি ছাড়ার বা আর কারও হাতে দেবার কথা তিনি ভাবতেই পারেন না।

জানালায় দাঁড়িয়ে তিনি পথ চলতি মানুষ দেখেন। এক একটা মানুষ, এক একটা দৃশ্য তাঁকে হঠাৎ হঠাৎ এক একটা গানের কথা মনে করিয়ে দেয়। তিনি আপনমনে গান গাইতে গাইতে ভাবতে থাকেন কেন গানটা মনে এল। একসময় ধাঁধাটা মিলে যায়। তখন তাঁর মনটা শান্ত হয়।

মেয়ে-জামাই ইদানিং বেশ ঘনঘনই আসছে। এসেই তারা বাড়ি ভাঙ্গার কথা বলে, উইলের কথা বলে। জামাই আবার একদিন একতাড়া কাগজ এনে সই করতে বলল। স্মৃতিকণা আকুল হয়ে কলম তুলে বসে আছেন বানান ভুলে যাওয়া শিশুর মতো, তখনই মলিনার মা এলো বাজার নিয়ে। ঘরের দৃশ্যটি একনজর দেখেই সে চিল-চিৎকার দিয়ে উঠল, “কলম ফেলো দিদিমণি, কলম ফেলো! ও জামাই তোমার খাঁচা
সর্বস্ব খেয়ে নেবে, তোমায় পতে নামাবে! জন, জামাই, ভাগনা/ তিন নয় আপনা; কতাটা তো আর এমনিতেই আসেনি গো!” তারপর ঘরের মাঝে তুলকালাম বেধে গেল। একদিকে মলিনার মা আর অন্যদিকে স্মৃতিকণার মেয়ে- জামাই। স্মৃতিকণা ধীর পায়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। মেয়ে রাগের মাথায় মাকে খুঁজতে এসে দেখল মা শোবার ঘরের খাটের মাঝখানে চোখ বুজে বসে গাইছে, “চরণ ধরিতে দিও গো আমারে, নিও না, নিও না সরায়ে!” সে দৃশ্য দেখে মেয়ে হতবুদ্ধি হয়ে কী বলবে বুঝতে না পেরে চলে গেল।

কিছুক্ষণ পর মলিনার মা এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, “তুমি কেমন মানুষ গো দিদিমণি! আমি মরচি তোমার হয়ে ঝগড়া করে আর তুমি এখানে বসে গান গাইচো! তা আমি আর কদিন এমন করে আগলে রাকতে পারব বলো! আমারও তো বয়স হচ্ছে বাপু! আমি বলি কী, তুমি এ বাড়ি বেচে তীর্থস্তানে গিয়ে থাকো, একানে কোনদিন ওরা তোমার বাড়ি নিয়ে তোমায় পতে নামিয়ে দেবে!” স্মৃতিকণা অবাক হয়ে চেয়ে থাকেন। তীর্থস্থান আবার কোথায়! তাঁর কাছে এ বাড়িই বাসস্থান, তীর্থস্থান সবই।

মলিনার মায়ের কথাই শেষপর্যন্ত ফলে গেল, তবে আংশিক। স্মৃতিকণাকে আদালতে মানসিকভাবে অসুস্থ প্রমাণ করে মেয়ে-জামাই এখন বাড়ির দখল নেবার চেষ্টায় আছে। স্মৃতিকণাকে তারা পথে নামায়নি বটে, তবে মানসিক রোগের এক হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে। বাড়ি দখলের আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্তত তাঁকে এখানেই রাখা দরকার। পরেরটা পরে দেখা যাবে। জায়গাটায় বড় হট্টগোল। স্মৃতিকণার এখন সত্যিই পাগল পাগল লাগে। কোন গান তাঁর আর মনে আসেনা এখন। কথাবার্তাও বলেননা তিনি আর। ডাক্তার অনেকরকম প্রশ্ন করেও কোন জবাব পায়নি। সময়ে সময়ে খাবার খান, নার্স ঔষধ দিলে নির্বিবাদে ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। একদিন নাইট ডিউটিতে থাকা নার্স জেগে থাকার জন্যে তার ডেস্কে লো ভল্যুমে গান ছেড়ে রেখেছিল। কেমন করে যেন স্মৃতিকণা দেবী সেটা শুনতে পেয়ে নার্সের ডেস্কে চলে এলেন। অন্যদিনের মতো শান্তশিষ্ট মানুষটি নন, চোখ জ্বলজ্বল করছে উত্তেজনায়। নার্স অবাক হয়ে উঠে দাঁড়াল। তিনি নার্সকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেখার চেষ্টা করছেন কোথায় গান বাজে। নার্স ভয় পেয়ে অ্যালার্ম বাজিয়ে দিল। রাত ডিউটির বাকি নার্স ডাক্তার সবাই এসে যখন স্মৃতিকণাকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিচ্ছে তখন তিনি গলা খুলে গান গাইছেন, “ও, তোতাপাখিরে, খাঁচা খুলে উড়িয়ে দেব…”। আদালতে ডাক্তার সাক্ষ্য দিল, স্মৃতিকণা দেবী ম্যানিক-ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডারে ভুগছেন, সুস্থ হবার সম্ভাবনা কম।

তারিখঃ এপ্রিল ২৫, ২০২৪

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

প্রকাশক - Publisher

Site By-iconAstuteHorse