ছুটি

পুরনো দেয়াল ঘড়িতে ঢং ঢং করে ছটা বাজতেই হুঁশ এলো মাইতি বাবুর । একটু আগেই তার বিদায় সম্বর্ধনা হয়ে গেছে । অফিস প্রায় ফাঁকা । কম বয়েসি সহকারী টি বলে উঠলো , আজও কি সাতটায় বেরোবেন ? তাইতো কি করবেন এখন ! আজ বত্রিশ বছর ধরে একই রুটিন । অফিস থেকে বেরিয়ে মহাত্মা গান্ধী রোড ধরে দোকানপাট দেখতে দেখতে হাঁটা আর সস্তার ফলমূল পেলে কেনা । বউবাজারের মেসে ফিরে চানটান করে একটু রেডিও শোনা আর দশটা বাজলেই খেয়েদেয়ে ঘুম ! নেশা বলতে শীতে জলসায় গান শোনা । বাবা মা হারিয়েছেন ছোটতেই । মেচেদার কাছে মামার বাড়িতে মানুষ । চাকরি পাবার পর প্রথম প্রথম ছুটিছাটায় যেতেন, কিন্তু অভিমান করে তাও বন্ধ করেছেন বহু বছর….!

মামার বাড়ির পাশেই থাকতো রমা । কখন যে ছোটবেলার সাথীকে ভালবাসতে শুরু করছেন তা বুঝতে উঠতে পারেননি । বুঝলেন কলকাতায় আসার পর । এক রোববার মামীকে দিয়ে কথাটা পারলেন মামার কাছে । শুনেই জ্বলে উঠেছিলেন মামা ! কিছুতেই ছোটজাতের মেয়েকে ভাগ্নে বউ করতে রাজি নন । দরকার হলে সম্পর্ক ত্যাগ করবেন ! সেই শেষ যাওয়া , এতগুলো বছরে আর মেচেদা যাবার তাগিদ অনুভব করেননি ।

অফিস ছাড়ার আগে একবার ড্রয়ার টেনে শেষবারের মতন দেখতে গেলেন। কত হাবিজাবি জিনিস , মায়া না বাড়িয়ে বিনে এক এক করে ফেলতে লাগলেন । একটা inland letter হাতে এলো যেটা খোলাই হয়নি। মামার চিঠি কবে এসেছিল অভিমান করে খোলেননি । তারিখ দেখলেন প্রায় বিশ বছর আগের । খুলবোনা খুলবোনা করে খুলেই ফেললেন । মামীর চিঠি : বাবা রাজু তোমার মামা মৃত্যু শয্যায় , শেষবারের মতন একবার তোমায় দেখতে চায় । আর রমাকে ঘরে তুলতে আমাদের আজ আর কোন আপত্তি নেই ।

ধড়মড় করে উঠে পড়লেন মাইতি বাবু । খুব কি দেরী হয়ে গিয়েছে ? ছটা পঁচিশের মেচেদা লোকালটা ? ওটাকে ধরতেই হবে !
উর্ধশ্বাসে সিঁড়ি দিয়ে নেমে ছুটতে লাগলেন স্ট্রান্ড রোড ধরে । এত ভীড় জ্যাম, কিন্তু ট্রেন টা পেতেই হবে । গরম লাগছে কেন এত, আর হঠাৎ কেনই বা এত অন্ধকার …..!

হাওড়া হাসপাতালের মর্গে একটা আধবুড়োর লাশের পকেট ঘাঁটছিলো দুটো ডোম । মাত্র তিরিশ টাকা ! ধুস শালা , আবার একটা বেওয়ারিস লাশ!

তারিখঃ জানুয়ারি ১১, ২০২১

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

প্রকাশক - Publisher

Site By-iconAstuteHorse