নিউরন সমগ্র
রুবানা ফারাহ আদিবা (ঊর্মি )
বিকেলের নিভন্ত আলো আধাঁরিতে এক নীরব বিষণ্নতা মাখানো থাকে। নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই যার কারণে এমনতরো দুঃখবোধ তাড়া করে ফিরবে। কিন্তু, বুকপকেটে যত্ন করে রেখে দেওয়া একটা ছুরির ফলা যেমন খুঁচিয়ে দেয় মাঝে মাঝে, এই সময়টার অনুভূতিটাও অনেকটা এরকম।
আমরা সকলেই early dinner করতে ভালোবাসি। খাওয়া শেষে বেশ কিছু সময় হাতে রয়ে যায়। অভ্যেসমতো আজও একটু আগেই আমরা রাতের খাবার শেষ করে উঠেছি। আমরা মানে, আমরা চারজন। রান্নাঘরের দেয়াল জোড়া বিশাল জানালার শার্সি গলে ঢুকে পড়েছে টুকরো টুকরো রোদ। জ্যামিতিক নকশা এঁকে চলেছে কিচেন টেবিলে, মেঝেতে আর আমাদের শরীর ও মুখাবয়বে। সাইফের বাড়িতে আজ নিমন্ত্রণ। সাইফ ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী নীরা, আমি পীযূষ এবং আমার স্ত্রী অলি। শহর থেকে একটু ভেতরের এক ছিমছাম উপকণ্ঠে সাইফের বাড়ি। ওকে আমরা অন্তর কবিরাজ বলে ডাকি। বস্তুত ও একজন নামকরা কার্ডিয়াক সার্জন। আমরা গল্প করছিলাম আর অল্প অল্প করে বরফ মেশানো জিনটনিকে চুমুক দিচ্ছিলাম। এলোমেলো কথোপকথন, মাঝে মাঝেই সাইফ একটা দুটো কবিতার লাইন আউড়াচ্ছে।
“কেয়া বাত, কেয়া বাত” এর পাল্টাপাল্টি “শুকরিয়া জনাব”, দম ফাটানো হাসি, আড্ডা … বহুদিন বাদে খুব ভালো সময় কাটছে। হঠাৎ করে আড্ডার মোড় ঘুরিয়ে দিল সাইফ।বলে বসল, আধ্যাত্মিক অর্থে ভালোবাসতে পারলেই সে ভালোবাসা নিখাদ হয়ে ওঠে। বলে রাখা ভালো, Spirituality & Sufism নিয়ে ও বিস্তর পড়ালেখাও করেছে এবং দীর্ঘদিন একটা আশ্রমেও ছিল।
নীরার ঠোঁটে মৃদু হাসির ক্ষীণরেখা দেখতে পেলাম, কিন্তু চোখের পাতায় যে নিবিড় বিষাদ তা নজর এড়ালো না। ঢকঢক করে গ্লাসের সবটুকু জিন গলায় ঢেলে অবসন্ন বিষাদে বলল , “ইফতি আমাকে এতটাই ভালোবাসত যে তার জন্য অসহ্য অত্যাচার সহ্য করে যেতে হতো আমাকে। একদিন ও আমাকে উন্মাদের মতো এক ঘর থেকে অন্য ঘরে মারতে মারতে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে যেতে বলেছিল ‘’বলো, এতটা ভালোবাসি কেন আমি তোমাকে?”
“এমন ভালোবাসাকে তুমি কী নাম দেবে সাইফ?” সাইফকে প্রশ্নটা করলেও নীরা আসলে প্রশ্নটা যেন ছুঁড়ে দিল সবাইকেই।
ছিপছিপে একহারা গড়ন নীরার। ভারি মিষ্টি চেহারা। লালচে হাইলাইটের কিছু চুল কপালের ওপর ভীড় করে আছে। মুক্তোর পেনডেন্ট আলতো করে ছুঁয়ে আছে বুকের মাঝখানটা, হলুদ শাড়ি লাল টিপে নির্জন দ্বীপের এক নায়িকার মতো লাগছে ওকে আজ। গাঢ় বাদামি চোখের চাহনিতে তখনও ঝুলে আছে প্রশ্নটা।
সাইফ বিস্ময় এবং হতাশা মেশানো কণ্ঠে বলল,
“নীরা, আর যাই বলো, তুমি একে ‘ভালোবাসা’ বলো না কিন্তু!”
ততটাই দৃঢ় কণ্ঠে নীরা জবাব দিল, “সে তুমি যা ইচ্ছা তাই বলতে পারো সাইফ। কিন্তু, এক এক জন মানুষ এক এক রকম করে ভালোবাসে। ইফতিকে উন্মাদ মনে হতে পারে কিন্তু কোথাও না কোথাও ও আমাকে গভীরভাবে ভালোবেসেছিল।”
নিবিড় স্নেহে সাইফ নীরার চিবুক স্পর্শ করে বলল, “তুমি তো সবসময়ই খুব রোমান্টিক। আমি শুধু বলতে চাইছি, ভালোবাসলে মানুষ তো নির্বিবাদী হয়। এমন ক্ষ্যাপাটে হয়ে ওঠে কি?” আমি এই আচরণকে ‘ভালোবাসা’-র সংজ্ঞা দিতে পারব না।”
সাইফের চোখে চোখ পড়তেই আমি বললাম “সাইফ, আমি ইফতির নাম শুনেছি কয়েকবার মাত্র। ওর সাথে বিন্দুমাত্র পরিচয় নেই, তাই এ বিষয়ে কিছু বলা খাটে না। কিন্তু, তুইও যে ‘‘ভালোবাসা’র কথা বলছিস, তেমনটাও মনে হয় নেই”
অলিও একটু ইতস্ততঃ করে জবাব দিল “ আমিও একই কথা বলছি। ইফতিকে চিনি না। সে কারণে ওকে বা ওর এই আচরণকে বিচার করা আমার পক্ষে সম্ভব না”। বুদ্ধিদীপ্তা অলিকে এই মুহূর্ত আমার জড়িয়ে ধরে আলতো করে চুমু খেতে ইচ্ছে করছে। ল্যাভেন্ডর রঙের মনিপুরি শাড়িতে কী ভীষণ ঝকঝকে লাগছে ওকে। ম্যানিকিওর করা পার্পল নেইলপলিশ দেয়া আঙুলগুলোকে আমার আঙুলে বন্দী করে নিয়ে ওকে কাছে টেনে নিলাম।
দু’হাতের পাতায় ভর করে আছে নীরার সুডৌল থুতনি। চোখের দৃষ্টি যেন কোন সুদূরে হারিয়েছে। বিড়বিড় করে উচ্চারিত শব্দগুলো মনে হয় আমরা সবাই পরিষ্কার শুনেছিলাম। ও বলছিল “যেদিন ইফতিকে রেখে আমি বাড়ি ছেড়ে এলাম সেই রাতে ইফতি অনেকগুলো ঘুমের ওষুধ খেলো, কিন্তু মরল না। হসপিটালে স্টমাক ওয়াশ দেয়ার পর ও বেঁচে গেল ঠিক, কিন্তু এর পর থেকে ও কিছুটা অপ্রকৃতস্থ হয়ে পড়ল।”
আমি ও অলি প্রায় একইসাথে জিজ্ঞেস করলাম যে, এখন ইফতি কেমন আছে, কোথায় আছে, চিকিৎসা হয়েছিল কি না? সাইফ কথার জের টেনে জবাব দিল, “সে সুযোগ ইফতি পায়নি”। আরও জানলাম যে, এর কয়েকদিন পর ও মুখের ভেতর রিভলবারের গুলিতে আবারও আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। তিনদিন পর্যন্ত কোমায় ছিল। ওর ব্রেন স্বাভাবিক আয়তনের থেকে তিনগুণ ফুলে গিয়ে বীভৎস আকার ধারণ করেছিল। হাত পা’গুলো কালো হয়ে গিয়েছিল। সে সময় নীরাই হসপিটালে ওর দেখাশোনা করে। তিনদিন পর এক ভোরে ওর মৃত্যু হয় অবশেষে।
সমস্ত ঘর জুড়ে পিনপতন নিস্তব্ধতা নেমে এলো ঝলমলে দিনশেষে সন্ধ্যে নামার মতো করে। সাইফ টেনে টেনে বলল “ নীরা একে তুমি আর যাই বলো, প্লিজ ভালোবাসা বলো না।”
নীরা কেমন অসহায় অথচ কী ভীষণ বিশ্বাস নিয়ে বলেছিল, “এটাও ভালোবাসা। ভালোবাসার জন্যেই ও মরতে পেরেছিল।”
গ্লাসে জিন ঢালতে ঢালতে নীরা অনেকটা যেন নিজেকে শোনাবার জন্য বলল “It matters not who you love, where you love, why you love, it matters only that you love “.
আমি আর অলি বলে উঠলাম -“ Beatles” – কিন্তু নীরা প্রকৃত অর্থে আমাদের তিনজনকেই ‘ভালোবাসা’র রকমফেরের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিল।
থমথমে পরিবেশকে হালকা করার জন্য বলে উঠলাম, “আমি ভালবাসা বলতে বুঝি, দুজনের কাছাকাছি থাকা, সান্নিধ্যের উষ্ণতা পোহানো” – কাছে টেনে নিয়েছি অলিকে, ঠোঁটে ঠোঁট রেখেছি, অলিও মৃদু সাড়া দিয়েছে।
কিন্নরকণ্ঠী নীরা হেসে বলল, “মধুচন্দ্রিমার জ্বরটা সেরে উঠলে তোমার কাছে জানতে চাইব পীযূষ, উষ্ণতার পারদ ঠিক আজকের এই তাপমাত্রাতেই আছে তো?”
আমরা সবাই গ্লাসের গায়ে গ্লাস লাগিয়ে টোস্ট করলাম। টুংটাং শব্দের সাথে মিশে ছিল সাইফের জমাট ব্যারিটোন –
“To True Love”-
কণ্ঠে কণ্ঠ মেলালাম আমরাও।
সূর্যের আলো অনেকটাই স্তিমিত তখন। দুরে কোথাও থেকে পোষা কুকুরের ডাক শুনতে পাচ্ছি।ক্রেপ মার্টেলের সদ্য বর্ধিষ্ণু পাতাগুলোর শিরশির শব্দ ভেসে আসছে আসন্ন সন্ধ্যার এলোমেলো হাওয়ায়। ঘরে আলো জ্বলেনি তখনও। ঘর জুড়ে থৈ থৈ করছে অদ্ভুত এক স্যুররিয়াল আবহ।
আজকে যেন সাইফকে কথায় পেয়েছে। ও বলল,
“তোদের কিছুক্ষণ আগে Spiritual Love এর কথা বলেছি। শোন তাহলে একটা গল্প। সবাই যেন একটু নড়ে চড়ে বসল। আমি আর অলি আরও একটু কাছাকাছি বসলাম, পায়ের ওপর একটা উলের থ্রো টেনে নিলাম। সাইফ গ্লাসে জিন ভরে নিয়ে তাতে বরফ মিশিয়ে নিল।
“দেখ, আমরা সবাই ভালোবাসতে শিখেছি যবে থেকে তবে থেকেই একাধিকবার ভালোবেসেছি একাধিক জনকে। আমি এবং নীরা পরস্পরকে ভালোবাসি। আমি নিশ্চিত, তুই এবং অলিও তাই। আমরা একে অপরের প্রতি তীব্র আকর্ষণ অনুভব করি। শরীর নির্ভর ভালোবাসা আমাদেরকে আরেকজনের কাছে বিশেষ করে তোলে। এর সাথে মেশে আবেগ। বলতে পারিস আবেগ হলো গ্লুর মতো। আবার দেখ এই আমি – যে নীরাকে ভালোবাসি, সে একসময় কিন্তু গভীরভাবে ভালোবাসত প্রজ্ঞাকে। যেমন নীরা একসময় ভালোবেসেছিল ইফতিকে। মনে হয়েছিল, প্রজ্ঞা ছাড়া আর কাউকে আমি আর কখনই ভালোবাসতে সক্ষম হবো না। কিন্তু, আমি ওকে এখন সমস্ত মন প্রাণ দিয়ে ঘৃণা করি। মাঝে মাঝে আমার এই মানসিক পরিবর্তন আমাকে বিভ্রান্ত করে, বিচলিত করে। প্রজ্ঞার প্রতি আমার ভালোবাসা মিথ্যে ছিল না। কিন্তু, ভালোবাসা পাল্টে গেল কেন?
ইফতি এতটাই ভালোবাসত নীরারে যে ওকে মেরে ফেলতে চাইত। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত ও নিজেই মরে গেল এই ভালোবাসার জন্যই। তুই, অলি ভেবে দেখ, তোরা দুজন দুজনকে ভালোবাসার আগে আর কতজনকে ভালোবেসেছিলি? আমার বা নীরার যদি আজ কিছু হয়ে যায়, হয়ত কিছুদিনের জন্য শোকবিহ্বল থাকব। তারপর? তারপর হয়ত আবারও কাউকে ভালোবাসব! ফেলে আসা ভালোবাসা একটা হলদে অতীত হয়ে যাবে একসময়।”
গল্পের শুরুতেই যে বৈকালিক বিষণ্নতার কথা বলেছিলাম, হঠাৎ যেন সেই তীব্র অনুভূতি আমাদের সবাইকে অল্প বিস্তর খুবলে দিল আচানক। উথাল পাথাল আবেগে টলমল করছিল ভেতরটা।
সাইফ আবারও কথা বলতে শুরু করল,
“কিছুদিন আগে আমার সার্জারী ওয়ার্ডে দুজন বয়সী দম্পত্তি ভর্তি হয়েছে। একটা রোড অ্যাক্সিডেন্টে দুজনই মর্মান্তিক ভাবে আহত হয়।
সেদিন রাতে সবে রাতের খাবার শেষ করে উঠতে না উঠতেই হসপিটাল থেকে ফোন এল। অন কলে ছিলাম। তাড়াহুড়ো করে পৌঁছে দেখলাম, মধ্য সত্তরের মত বয়স দুজনেরই। হাইওয়েতে মাতাল অবস্হায় একটা অল্প বয়সী ছেলে ওদের গাড়িকে পেছন থেকে মেরে দিয়েছে। সিটবেল্ট থাকার কারণে বেঁচে গেলেও বুড়ো ভদ্রলোকের ডান হাঁটু চুরমার হয়ে গেছে, Cervical vertebrae ভেঙেছে, বুড়ো ভদ্রমহিলার spleen ক্ষত বিক্ষত হয়ে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে।
সারারাত ধরে আমরা চারজন সার্জন সাধ্যমতো যতটুকু করা সম্ভব শেষ করে ভোরের দিকটায় ওদেরকে আই. সি. ইউ তে নিয়ে এলাম। তখনও ওদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা আধাআধি। কিন্তু, কী অলৌকিক! পরের দিন পর্যন্ত ওরা লড়ে যাচ্ছে তখনও। আজ নিয়ে দু’সপ্তাহ হলো, একটু একটু করে ওরা সুস্হ হয়ে উঠছে। গতকাল ওরা কেবিনে এসেছে।”
সাইফকে এবার একটু অন্যমনস্ক মনে হলো। একটু অস্হিরতা এসেছে, কথাবার্তাতেও অসংলগ্নতা লক্ষ্য করলাম। মূল বিষয় থেকে সরে এসে উঠে দাঁড়ালো, এবং অলির দিকে চেয়ে রহস্য করে টেনে টেনে বলল, “অলি, আমি যদি বিবাহিত না হতাম কিংবা তুমিও যদি বিবাহিত না হতে তাহলে কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসতে চাইতাম।”
প্রসঙ্গ পরিবর্তনের আকস্মিকতায় আমরা হকচকিয়ে গিয়েছি কম বেশি সবাই। অলি স্বভাবসুলভ চপলতায় বলল “ আমি তো তোমাকে ভালোই বাসি সাইফ।”
সাইফ হা হা করে হেসে উঠলো।কিছুটা মাতাল মনে হলো সাইফকে। মূল প্রসঙ্গে ফেরানোর উদ্দেশ্যে আমরা সবাই ওকে জেঁকে ধরেছি “তুই গল্প শেষ কর। বুড়োবুডির কথা বল ওদের কী হলো?”
সাইফ জিনের বোতল ঝাঁকিয়ে বলল, “সব শেষ?”
নীরা আশ্বস্ত করল যে আর একটা আছে বাড়িতে। কিন্তু, এনে দেয়ার কোনো লক্ষণ দেখা গেল না। ঠায় বসে রইল নীরা। সাইফ ততক্ষণে আবার বলতে শুরু করেছে। বুড়ো ভদ্রলোকের কলার বোনে ট্র্যাকশন লাগানো, ডান পা উঁচু করে বেঁধে রাখা হয়েছে। আর ওঁর স্ত্রী সার্জারীর পর বেশ নাজুক এখনও। বয়স বেড়ে গেছে যেন আরও পাঁচ বছর। বুড়ো মাঝে মাঝে কলার বোনের কারণে তাঁর সঙ্গিনীকে ইচ্ছে করলেই পাশ ফিরে দেখতে পারেন না বলে বিষণ্নতায় ভুগছেন। তবুও প্রশান্তির ছায়া নেমে আসে বুড়োর চোখে মুখে প্রায়ই এই ভেবে যে সে পাশেই আছে। বেঁচে আছে।
“এই ভালোবাসার কথাই বলছিলাম” মনে মনে বেশ কয়েকবার একই কথা বিড়বিড় করল সাইফ। আমাদেরও কারোরই যেন আর কিছুই বলার নেই।
শহরতলী জুড়ে সন্ধ্যা নেমেছে কিশোরীর এক ঢাল এলো চুলের মতো।একটা দুটো তারা উঁকি দিচ্ছে । দেখে মনে হচ্ছে নকশা আঁকা খোঁপার কাটা। এসব পরাবাস্তবতা ছাপিয়ে যেন চারজন তরুণ তরুণীর সমবেত হৃদস্পন্দন সমস্ত নিঃস্তব্ধতাকে ছারখার করে দিচ্ছে।
লাব ডাব লাব ডাব লাব ডাব….
তারিখঃ সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২
নামকরণের মধ্যে যে শক্তির সুপরিচয়টি সূচিত হলো, সেটি লেখাটির নির্মাণেও প্রতিবিম্বিত। ভিন্নধর্মী এবং সামর্থ্য সমন্বিত শক্তিশালী প্লট, ও গদ্যশৈলীর মনোরম মাধুর্য গল্পটিকে রসোত্তীর্ণ করে তুলেছে। বিমুগ্ধ হলাম।
দিদি,তোমার লেখায় মনের এত অলিগলির আলোআঁধারী উঠে আসে ….অসাধারণ লাগলো।
সুকন্যা — এই যে এতখানি যত্ন নিয়ে তোমার পাঠ , আমার লেখা সার্থক হয়ে ওঠে এজন্যই। ভালোবাসা অনেক।
খুবই সুন্দর লিখেছেন। অনেকদিন পর ভীষণ অন্যরকম একটা গল্প পড়লাম। খুবই বাস্তব প্রেক্ষাপট ও কাহিনি। মুগ্ধতা জানালাম।
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন। মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম।
“কিন্তু ভালোবাসা পাল্টে গেল কেন?” এই প্রশ্ন যখন নিউরনে ঝড় তোলে তখন বোঝা যায় কেন গল্পটির নাম “নিউরন সমগ্র”। “শহরতলী জুড়ে সন্ধ্যা নেমেছে কিশোরীর এক ঢাল এলো চুলের মতো।’ এরকম একটি সেট যেন আপনাআপনি তৈরী হয় গল্পটির জন্য। যখন অন্তর কবিরাজ “এই ভালোবাসার কথাই বলছিলাম” বলে যতি টানেন বুড়োবুড়ির গল্পটির, ততক্ষণে পাঠক অনুভূতির অজানা দেশে অবস্থান করছেন “পরাবাস্তবতা”র মেঘে মাখামাখি হয়ে। ” শরীর নির্ভর ভালোবাসা আমাদেরকে আরেকজনের কাছে বিশেষ করে তোলে। এর সাথে মেশে আবেগ। বলতে পারিস আবেগ হলো গ্লুর মতো।” – এই গ্লুটাই বোধহয় সব কিছু, ভালবাসার অচিন দেশকে চেনানোর সাথে পাঠককেও ধরে রাখে শেষ পর্যন্ত। আধুনিক প্লট, ঝরঝরে বর্ণনাভংগির সাথে চিত্রকল্পের বাহার গল্পটিকে সৌন্দর্য বিলিয়েছে, সাথে মেডিক্যাল টার্মসের স্বচ্ছন্দ প্রয়োগ বিশ্বাসযোগ্যতা দান করেছে। একজন লেখকের পক্ষে উত্তম পুরুষে বিপরীত লিংগকে ধারণ করা কঠিন বইকি! গল্প লেখক সেখানেও যত্নবান ছিলেন। সব মিলিয়ে উপভোগ্য ও একই সাথে নিউরনে অনুরণন সৃষ্টিকারী এক গল্প।… শব্দাশ্বকে ধন্যবাদ সুন্দর একটি গল্প আমাদের উপহার দেয়ার জন্য।