বত্রিশ পুতুলের সিংহাসন

“তা স্যারের কি একটু আধটু বিয়ার – টিয়ার চলে নাকি?” সেই বেড়াল নামের লোকটা জিজ্ঞাসা করলো। এমন বিদঘুটে কোনো লোকের নাম হতে পারে আমার জানা নেই। আর কথাগুলোও বেয়াড়া। এমন একটা মালের সঙ্গে আমি এই অবধি কি করে এলাম কিছুতেই মালুম করতে পারছি না। আমি গলার স্বরে যতটা সম্ভব তেতো ভাব  এনে বললাম “না। চলে না। আর চললেই বা কি হতো। একে এই তেপান্তরের মাঠ। তাই এমন ঘুটঘুটে অন্ধকার। এক গ্লাস জল চাইলেও পাওয়া যাবে না!” বেড়াল নামে লোকটা একটা আফসোসের গলায় বললো “আপনি ঠিকই বুঝেছেন স্যার। এই ধু ধু মাঠে অমন শহুরে জিনিষ আর কোথায় পাবেন? তবে কিনা এইরকম অন্ধকারের মধ্যে বিরক্ত হয়ে বসে থাকার চেয়ে মদ  আর মেয়েছেলের গল্প করলে মনটা একটু হাল্কা হয় আর সময়টাও কাটে।” চেহারাটা আমার তেমন জুতের নয় তাই না হলে এই মালের কানের গোড়ায় একটা মারতে পারলে মনে শান্তি আসতো। এই খেঁকুরে মালটা আমাকে শিওর অজ্ঞান করে তুলে এনেছে। আমি বিকেলে অফিস থেকে বেরিয়ে শিয়ালদা’র ট্রেন ধরার জন্য দাঁড়িয়েছিলাম। এটুকু মনে আছে। কিন্তু সেটা আজ না কাল না পরশু নাকি এক মাস কি এক বছর আগে তা বলতে পারবো না। কারণ আগেই বলেছি আমি অজ্ঞান অবস্থায় ছিলাম। মাত্র কিছুক্ষণ আগে জ্ঞান ফিরেছে। আর নিজেকে আবিষ্কার করলাম এইরকম একটা ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে একটা তেপান্তরের মাঠে বসে আছি। পাশে একটা লোক। যে নিজের নাম বলছে  ‘বেড়াল’। তবে খিদে বা তেষ্টার কোনো অনুভূতি নেই। তার মানে অজ্ঞান অবস্থায় কোনোভাবে খাবার আর জল দিয়েছে। লোকটা অবশ্য হলফ করে বলছে কাল বিকেলে আমি সজ্ঞানেই ওর সঙ্গে রওনা দিয়েছিলাম এবং আজ সন্ধেবেলায় এখানে এসে পৌঁছেছি।

 

“এই শোনো তুমি যদি ভেবে থাকো যে আমাকে কিডন্যাপ করে কিছু টাকা-পয়সা বাগাবে। তাহলে সে গুড়ে বালি।” আমি লোকটাকে খিঁচিয়ে উঠে বললাম। “জানি স্যার আপনার অ্যাকাউন্টে সব মিলিয়ে তেইশশো তিরানব্বই টাকা উননব্বই পয়সা আছে। আপনার স্ত্রী’র অ্যাকাউন্ট মিনিমাম ব্যালেন্সের নীচে যাচ্ছে আর আপনার বাচ্চা মেয়ের অ্যাকাউন্টে মেরে কেটে হাজার ছয় মতো আছে।” বেড়াল নামের লোকটা কান চুলকাতে চুলকাতে বললো। অন্ধকারটা যতটা গভীর ভেবেছিলাম অতটা নয়। আর না হলে চোখ সয়ে গেছে। লোকটাকে অন্ততঃ দেখতে পাচ্ছি। “তাহলে আমাকে এখানে কি করতে ধরে এনেছ? মেয়েছেলে দেখাতে?” লোকটার ভাষাতেই ওকে বললাম। বেড়াল নামের লোকটা কানে হাত দিয়ে জিভ কেটে একেবারে মাটিতে মিশে গিয়ে বললো “কি বলেন স্যার? ছি ছি! অমন কথা মনে আনাও যে পাপ। আপনি নিজের ইচ্ছায় আমার কথা শুনে আমার সঙ্গে এসেছেন। ওনাদের কি আর মেয়েছেলে বলা যায়? ওনারা হলেন স্বর্গের শাপভ্রষ্ট অপ্সরা। সেই কতকাল ধরে ওনারা এই সিংহাসন পাহারা দিচ্ছেন। উপযুক্ত জনের হাতে তুলে দিলে তবেই ওনাদের মুক্তি।” লোকটা গেঁজেল না মাতাল না ক্র্যাক বুঝতে পারছি না। এই অন্ধকারে এমন অচেনা একটা ভুতুড়ে প্রান্তরে কিছু করারও নেই। লোকটা যে আমাকে আটকে রেখেছে এমনও না। তাও সকালের আলো ফোটার আগে কিছুই করতে  পারবো না। “ওরা মানে? ওরা বত্রিশ জন? বত্রিশটা পুতুল?” আমি সময় কাটাতে ওর গপ্পের কাছেই আত্মসমর্পণ করলাম। “একদম ঠিক ধরেছেন স্যার। ওরা বত্রিশজন। তবে পুতুল বললে বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। ওরা শাপভ্রষ্ট স্বর্গের অপ্সরা। পুতুল সেজে আছে।” বেড়াল নামের লোকটা বললো। “বিক্রমাদিত্যের সিংহাসন? তুমি গপ্পটা আদ্দেক জানো হে। ওই ভোজ রাজাকে বত্রিশখানা গল্প বলার পরেই ওদের শাপমুক্তি ঘটে গিয়েছিল। এখন আবার তুমি ওদের কোথা থেকে পাবে?” আমি শান্ত গলাতেই বললাম। মনে ভাবলাম মাথা গরম করে লাভ নেই। কাল সকালের আগে তো কিছু উপায় করতেও পারবো না। “না স্যার। এরা নতুন বত্রিশজন। গল্পে কি আর সবটা থাকে। এরা আরেকটা  দল। এরা ফিরে গেলেই সবার শাপমুক্তি ঘটে যাবে।” সেই বেড়াল নামের লোকটা বেশ প্রত্যয়ের গলায় বললো।

সময় বোঝা যাচ্ছে না। পকেটের মধ্যে রাখা মোবাইল ফোনটা মনে হয় চার্জ ফুরিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে। তবে রাত খুব বেশি হবে না মনে হয়। এমন একটা তেপান্তরের মাঠে এমন অন্ধকার রাতে সন্ধেবেলাতেই মনে হয় যেন অনেক রাত হয়ে গেছে। এখন সারারাতটা এই বেড়াল নামের লোকটার সঙ্গে কাটাতে হবে। আমি বললাম “শোনো তোমার মতলবটা আমি বুঝতে পারছি না। আমি না খেয়ে থাকতেই পারি না। ওই গল্পের রাজার মত তিন দিন উপবাসে থেকে একেকটা পুতুলের গল্প শোনা আমার পক্ষে সম্ভব না। তাছাড়া অত সময় আমার নেই। এতদিন কামাই করলে অফিস কি বেতন দেবে? ওই সিংহাসন ওরা কাউকেই দেবে না। আর দিলেও আমার খুব একটা লাভ নেই। এখন তো রাজা-রাজড়াদের যুগ নয় যে আমি একটা রাজত্ব পেয়ে যাবো।” সেই বেড়াল নামের লোকটা কানের কাছে মুখটা এনে পরামর্শ দেওয়ার ভঙ্গিতে বললো “সিংহাসনটা পেলে ওর থেকে সোনাদানা যা আছে বিক্রি করে দেবেন। আর হিরে-জহরতগুলোও। তাহলেই তো আপনি লাল।” আমি এই বেড়ালের কথা শুনে হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারলাম না “তোমার মত একটা মর্কটকে ওই পুতুলগুলো এজেন্ট বানিয়েছে! ওরে মাথামোটা সোনাদানা, হিরে-জহরত ছাড়ো। ওই বত্রিশটা পুতুলের কত দাম হবে  জানো? গোটা পৃথিবীর সিন্দুক ফাঁকা হয়ে যাবে শুধু ওই পুতুলগুলোর দাম দিতে। আমি গরিব মানুষ।  সরকারি নিম্ন কেরানী আর ফেসবুকে টুকটাক কবিতা লিখি। এত ফেউ লাগবে ওটা পেতে যে আমাকে  তিন সেকেন্ডে সাফ করে দেবে পৃথিবী থেকে!” এই দিগন্তবিস্তৃত প্রান্তর, রাতের অন্ধকার আকাশে লক্ষ লক্ষ তারা হিরে-মানিকের মত জ্বলজ্বল করছে। আমি সামান্য এক ফেসবুক কবি আর বেড়াল নামের একটা ফড়ে অপেক্ষা করছি সেই বত্রিশটা পুতুলের। যারা কিংবদন্তির রাজা বিক্রমাদিত্যের সিংহাসন নিয়ে এখানে আসবে। সেই সিংহাসন যা সমগ্র পৃথিবীতে ধর্ম, ন্যায় ও বিচারকে প্রতিষ্ঠা করতে পারে। সেই সিংহাসন যার ওপরে বসতে গেলে রাজা বিক্রমাদিত্যের মত বত্রিশটা গুনের অধিকারী হতে হয়।  রাজা বিক্রমাদিত্য কালের নিয়মে একদিন পৃথিবী থেকে অন্তর্হিত হলেন। তাঁর অন্তর্ধানের সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর দুই বিশ্বস্ত অনুচর তাল ও বেতাল তাঁর সঙ্গেই অন্তর্হিত হলো। রয়ে গেলো শুধু এই রত্নখচিত সিংহাসন মৃত্তিকার গর্ভে। বত্রিশটি পুতুলের কঠিন পাহারায়।

 

বেশ বিরক্ত লাগছিল। এরকম একটা জনহীন প্রান্তরে এইভাবে একটা বেফালতু গপ্প শোনার কোনো মানে হয়! লোকটাকে বললাম “এইবারে ঝেড়ে কাসো তো বাপু! কেসটা কি? ফালতু ফালতু আমাকে এতটা রাস্তা নিয়ে এলে কেন?” লোকটা যেন প্রস্তুত হয়েই ছিল, বললো “ওই যে স্যার যা বললাম – সিংহাসন। রাজা বিক্রমাদিত্যের সিংহাসন।” এতক্ষণে পুরো মেজাজ হারালাম “আমি তোমাকে বলছি আসল কথাটা বলো। আমি এত নির্বোধ নই যে তোমার এসব গাঁজাখুরি গপ্পে বিশ্বাস করবো! সেই সিংহাসন যদি থাকেও তা আমার মত ফালতু লোকের জন্য না। আমার মতো কোটি কোটি লোক এই পৃথিবীতে রয়েছে। আসল কথা বলো।” আমার চিৎকারে লোকটা মনে হয় একটু ভয় পেল। গলাটাকে বেশ গম্ভীর করে বলতে লাগলো “তাহলে সত্যিটা শুনুন স্যার। আমিই হলাম বত্রিশ পুতুলের বত্রিশ নম্বর পুতুল। আমার আগে আরও একত্রিশটি পুতুল আপনাকে এই সিংহাসন নেওয়ার কথা বলেছে। ঠিক একইরকম ভাবে। এবং ঠিক একইরকম ভাবে আপনি প্রতিবার প্রত্যাখ্যান করেছেন। আমি মহারাজ বিক্রমাদিত্যের  সিংহাসনের রক্ষাকারী বত্রিশতম পুতুল আপনাকে জানাতে চাই এই সিংহাসন হলো ধর্ম, ন্যায় ও বিচার। আপনি কি চান না পৃথিবীতে ধর্ম, ন্যায় ও বিচার প্রতিষ্ঠিত হোক? এর আগের একত্রিশ  জনের  কাহিনী আপনি ভুলে গেছেন। আপনাকে আরেকটা সত্যিও জানাই। আপনাকে কোথাও নিয়ে আসিনি আমি। অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমাংশ অনুযায়ী আপনি যেখানে অপেক্ষা করছিলেন এখনও সেখানেই অপেক্ষা করছেন। এখানে সময় স্থির তাই আপনার কোনো সময় নষ্টও হয়নি। আপনি ভেবে বলুন।”

 

“আচ্ছা বেশ,” আমি ওই বেড়াল নামের লোক নাকি পুতুলটাকে বললাম “তুমি আমার তিনটি প্রশ্নের উত্তর দাও। যদি দিতে পারো আমি সিংহাসন নেব। আর যদি না পারো তোমার এই ভেলকিবাজি তুমি  তুলে নেবে। আমার প্রথম প্রশ্ন : তোমার রাজা বিক্রমাদিত্যের কাহিনীতে আছে তিনি ছিলেন মহান দানশীল। তিনি এক ব্রাহ্মণকে এমন এক রত্ন দান করেন যার কাছে যা কিছু চাওয়া যাবে সেই রত্ন তক্ষুনি তাই এনে দেবে। অর্থাৎ একজন মানুষ কোনো পরিশ্রম না করেই নিজের অভীষ্ট সিদ্ধি করতে পারবে। এর নাম কি ন্যায়? অকর্মণ্য মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির নাম কি ন্যায় দেওয়া যায়? আমার দ্বিতীয়  প্রশ্ন : মহারাজ বিক্রমাদিত্য একবার দেখলেন তাঁর ছয় রানী এক যোগীর সাথে ব্যভিচারে মত্ত। সেই যোগী মায়ার মাধ্যমে নিজের ছ’টা ক্লোন তৈরি করে একইসঙ্গে ছয় রানীর সঙ্গে বিহার করছে। মহারাজ ওই রানীদেরকে তাঁদের নিজেদের অপরাধ প্রমাণ করে দিয়ে ওই ছয় রানীকেই হত্যা করলেন। একজন  ব্যক্তি যিনি নিজেই বহুগামি তিনি বহুগামিতার মত সামান্য অপরাধে ছয়টা প্রাণ কেড়ে নিলেন! যে অপরাধে একজন নিজেই অপরাধী সেই অপরাধের জন্য সে যদি অন্যদেরকে চরমতম শাস্তি দান করে তার নাম কি বিচার? নাকি নিতান্তই দুর্বলের ওপরে সবলের অত্যাচার? আমার তৃতীয় প্রশ্ন : রাজা বিক্রমাদিত্য একদিন জানতে পারলেন একটি যুবতি তাঁর স্বামীর মৃত্যু সহ্য করতে না পেরে স্বামীর চিতায় সহগামিনী হওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। শুনে মহারাজ কৌতুক দেখার জন্য ওখানে এসে উপস্থিত হলেন। কথাটা ভালো করে ভাবো, একজন আত্মহত্যা প্রবণ মানুষের আত্মহত্যা করার দৃশ্য দেশের রাজা একটি কৌতুক-ক্রীড়া হিসেবে দেখতে এসেছেন। তিনি মানুষটিকে বাঁচাবার কোনো চেষ্টা না করে বরং সেই মেয়েটি যখন আগুনের তাপ সহ্য করতে না পেরে নদীতে ঝাঁপ দিচ্ছে তাকে উপহাস করছেন! মৃত্যু কি একটা খেলা? মৃত্যু কি একটা প্রদর্শনী? এরই নাম কি ধর্ম? সিংহাসনের রক্ষাকারী পুতুল তুমি কি পারবে আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে?” পুতুল নীরব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। আমি জানি ওর কাছে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর নেই।

 

“শোনো হে বিক্রমাদিত্যের সিংহাসনের রক্ষাকারী পুতুল। তোমরা বত্রিশজন মাত্র নও। তোমরা অনন্ত। তোমরা অগণিত। তোমরা যে শুধু আমার কাছেই এসেছ তাই নয় তোমরা প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষের কাছে যাচ্ছ। তারা কেউ সোনা আর রত্নের লোভে আবার কেউ ন্যায়, বিচার আর ধর্ম প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে তোমাদের কথায় রাজী হয়ে যাচ্ছে সিংহাসন নিতে। তারপরেই তারাই আবার হয়ে যাচ্ছে তোমাদের মত একেকটা পুতুল। আমার আগের একত্রিশটা অধ্যায় পুরোপুরি মনে আছে। আমি কিছুই ভুলিনি। আমার মোহ নেই তোমার ওই রাজার সিংহাসনের ওপরে তাই আমি কিছুই ভুলিনি। তোমাদের সিংহাসন প্রত্যাখ্যান করেছে এমন মানুষ তোমরা খুব কম পেয়েছ। কিন্তু আজ আমরা সংখ্যায় কম। কিন্তু আমি একা নই আগামীদিনে আরও অনেক অনেক মানুষ আসবে যারা তোমাদের  এই ভুয়ো ধর্ম, ন্যায় আর বিচারের কথায় ভুলবে না। তারাও একইরকমভাবে প্রত্যাখ্যান করবে এই সিংহাসন। যদি মানুষকে মানুষ বলে ভাবতেই না পারো তো কিসের ধর্ম? কিসের ন্যায়? কিসের বিচার? মহাভারতের কালে মহারানী গান্ধারীর বানী মনে করো। মহারাজ ধৃতরাষ্ট্রকে তিনি যা বলেছিলেন তাই তুমিও শুনিও তোমার মহারাজাকে :

 

“মহারাজ, তবে নিরবধি

যত দণ্ড দিলে তুমি যত দোষীজনে,

ধর্মাধিপ নামে, কর্তব্যের প্রবর্তনে,

ফিরিয়া লাগিবে আসি দণ্ডদাতা ভূপে —

ন্যায়ের বিচার তব নির্মমতারূপে

পাপ হয়ে তোমারে দাগিবে।”

 

আকাশে কোটি কোটি নক্ষত্রের সমাহার। লোকটা মিলিয়ে গেছে। আমার কথাগুলো শুধু ভেসে চলেছে শূণ্যতার মধ্যে। আমি জানি এক্ষুনি আমি আবার আগের জায়গায় ফিরে যাবো।

তারিখঃ এপ্রিল ৯, ২০২১

Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Asim Talukdar
Asim Talukdar
2 years ago

chomotkar

প্রকাশক - Publisher

Site By-iconAstuteHorse