বর্ষাতি

 

বেন্টোভিল শহরটা আজকাল বড় অদ্ভুত লাগে ওর। শুরুর দিকে এমনটা কখনো হয়নি। কারা যেন ফিসফিস করে বলেওছিল কানে কানে- এখানে প্রাণ নেই পাবলো, ফিরে যা…ফিরে যা তুই। রাতের চাদরে জড়িয়ে কতবার আপন করতে চেয়েছিল, তবুও শীত তো কখনো যায়নি। শীত বুঝি রাকার মতোই কঠিন! সমস্ত ওমটুকু কেড়ে নিয়ে ফেলে যায় দীর্ঘ ধূসর দিন…

এখানে বৃষ্টি হলে মনখারাপ আরো ভারী হয়। অ্যাপার্টমেন্টের সামনে মস্ত ফাঁকা জায়গাটা জুড়ে একটা মাঠ ভেসে আসে। দু’পাশে পাহাড়। না, এ বেন্টোভিলের ওজার্ক নয়, ধুপগিরির মাথাপাহাড়। দূর থেকে সাদা সুতোর মতো ঝর্না দেখা যায়। কাদায় মাখামাখি পায়ের পাতা। আজকের মতো মাঠের কাজ শেষ। আসন্ন সন্ধ্যের সমস্ত অনুষঙ্গ নিয়ে বাসায় ফিরেছে শালিখ। জোলো হাওয়ায় গুনগুন ভেসে আসছে, বৃষ্টির গান- দেহাতি। রাকার খালি গলায় এক অদ্ভুত জাদু আছে। নাকি মায়া! যাকে ভুলে থাকার চেষ্টা বারবার আরো কাছে নিয়ে আসে, মনে করিয়ে দেয় শীত পেরিয়ে আবারও বসন্ত আসে, বৃষ্টি আসে…আবারও চাষ হয়, আবারও গান হয়, সবুজের লালন ছুঁয়ে থাকে বনের আদিম। শুধু দাবানলটুকুই কেউ টের পায় না…

সব আলো নিভে এলে তারাদের আলোয় ওদের না পাওয়া সংসারটা শুরু হয়। বেন্টোভিলের পাবলো, ধুপগিরির রাকা।
দাবানল শেষে পড়ে থাকা ছাইগুলো তখন উড়ে আসে বেন্টোভিলের আকাশে। তারা হয়ে জ্বলে ওঠে। তার কোনোটা জুড়ে একটা লালচে বিকেল, টুলিং নদীর জল সাক্ষী থাকে মুহূর্তদের। দুটো ছায়া নিবিড় হচ্ছে ক্রমশঃ। কোথাও বা ঝর্নার নিচে পড়ে থাকা পাতার স্তুপে সন্ধ্যে নামছে গাঢ়, কারা যেন ফিসফিস করছে…

মাঝরাতে আবারও বৃষ্টি নামে। বেন্টোভিল থেকে গড়িয়ে যায় জল ধুপগিরির দিকে। পাবলোর বিশ্বাস এই জলই হয়তো কোনো একদিন আগুন নেভাতে পারবে। সাগর মহাদেশ পেরিয়ে এই জল ঠিক পৌঁছে যাবে মাথাপাহাড়। পুড়ে যাওয়া জঙ্গল জুড়ে আবার সবুজের সমারোহ হবে, পড়ে থাকা নিথর দেহগুলো জেগে উঠবে অমৃতের সিঞ্চনের মতো। একটা দেহাতি গান… অস্পষ্ট গুনগুন… আবারও।

বেন্টোভিলে আর বৃষ্টি থামেনি।

তারিখঃ জুলাই ২২, ২০২৩

Subscribe
Notify of
guest
2 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Mousumee
Mousumee
2 years ago

অসাধারণ লিখেছেন ।

Saad
Saad
2 years ago

আবারও চাষ হয়, আবারও গান হয়, সবুজের লালন ছুঁয়ে থাকে বনের আদিম। শুধু দাবানলটুকুই কেউ টের পায় না…চমৎকার গল্প।

প্রকাশক - Publisher

Site By-iconAstuteHorse