বিনোদিনী এবং তাঁর চৈতন্যলীলা

 

গিরিশ ঘোষ (১৮৪৪ — ১৯১২) “চৈতন্যলীলা” নাটক লিখলেন। চৈতন্যদেবের ভূমিকায় অভিনয় করতে হবে বিনোদিনী (১৮৬৩ — ১৯৪১) কে। গিরিশ অতি যত্ন নিয়ে তাঁকে সবরকম শিক্ষা দিয়ে উপযোগী করে তুলতে লাগলেন। নাটকে শুধু চৈতন্যদেবকে অবতার হিসাবে দেখালেই তো হবে না, অভিনয়ে তা ফুটিয়ে তুলতে হবে। বিনোদিনী ছাড়া সে কাজ করবেই বা কে? কিন্তু অভিনেত্রী তো ভয়েই শেষ হয়ে যাচ্ছেন! রিহার্সালের সময় মাঝে মাঝে “অমৃতবাজার পত্রিকা” র এডিটর বৈষ্ণবচূড়ামণি শিশির কুমার ঘোষ এসে তাঁকে বিভিন্ন উপদেশ দিয়ে যাচ্ছেন। বিনোদিনী যেন সবসময় ‘গৌরপাদপদ্ম’ তাঁর হৃদয়ে চিন্তা করেন। তিনি নিশ্চয়ই বিনোদিনীকে দয়া করবেন। তাঁর কথা শুনে বিনোদিনী ঐ পাদপদ্মের কথা চিন্তা করে ডাকতেন, “হে পতিতপাবন গৌরহরি, এই পতিতা অধমাকে দয়া করুন।” চৈতন্য মহাপ্রভুর মতো পবিত্র চরিত্রে তাঁর মতো পতিতা কী করে অভিনয় করবেন, ভেবেই আকুল তৎকালীন সময়ের সেরা অভিনেত্রী বিনোদিনী।

 

১৮৬৩ সালে ১৪৫ কর্ণওয়ালিশ স্ট্রীটের (বর্তমানের বিধান সরণী) মা – দিদিমার যে বাড়িতে বিনোদিনীর জন্ম হয় সেটা প্রকৃতপক্ষে একটি অভিজাত পতিতালয়। খোলার চালের সেই বাড়িতে অনেকগুলো ছোট ছোট ঘর ছিল। সেখানে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে আবদ্ধ কিছু ভাড়াটিয়াদের থেকে যা আয় হতো তা দিয়েই তাঁদের সংসার চলত। মা – দিদিমার আদরের ‘পুঁটি’ তথা বিনোদিনীকে দারিদ্র্যের কারণেই মাত্র এগার বছর বয়সে তাঁর দিদিমা ভুবন মোহন নিয়োগীর “গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটার” এ পাঠিয়ে দেন। ভুবন মোহন নিয়োগীর হাত ধরেই অভিনয় জগতে পা রাখেন বিনোদিনী। এর আগে মাত্র ন বছর বয়সে সমবয়সী গঙ্গামণির কাছে শুরু হয়েছিল তাঁর সঙ্গীত সাধনা। “শত্রুসংহার” নাটকে মাত্র একটা দৃশ্যের অভিনয় দিয়ে জীবন শুরু করে তিনি হয়ে উঠেছিলেন তৎকালীন মঞ্চের “প্রাইমা ডোনা”। পরবর্তীকালে “বেঙ্গল থিয়েটার” এবং “স্টার থিয়েটার” এও অভিনয় করেন তিনি। প্রকৃতপক্ষে, গুর্মুখ রায় মুসাদ্দির (১৮৬৪ — ১৮৮৬) কাছে বিনোদিনীর শরীর বন্ধক রেখে পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়ে “স্টার থিয়েটার” তৈরি করা হলেও মালিকানাতে বিনোদিনীর নাম ছিল না। এমনকি বিনোদিনীর নামে থিয়েটারের নামকরণ হবে প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা পালন করা হয়নি। এক বেশ্যার নামে থিয়েটারের নামকরণ হলে অথবা বেশ্যা থিয়েটারের মালিক হলে তৎকালীন কলকাতার দর্শক সেখানে নাটক দেখতে আসবে কি? সন্দেহ ছিল গিরিশ ঘোষেদের মনে। তাই নাটকের স্বার্থে, মঞ্চের স্বার্থে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল।

 

যাই হোক, বিনোদিনী “স্টার থিয়েটার” এ যখন “চৈতন্যলীলা” নাটকে চৈতন্যের ভূমিকায় অভিনয় করেন তখন তিনি কুড়ি একুশ বছরের যুবতী। সেই সময়ে বিনোদিনী বাংলার নাটক জগতে প্রায় দশ বছর অতিবাহিত করে ফেলেছেন। তবে বোধ হয় তাঁর মাথায় “মঞ্চসম্রাজ্ঞী” র মুকুট পরিয়ে দিল এই চৈতন্যলীলা নাটক। এই নাটকের প্রথম অভিনয় হয় ২ রা আগস্ট ১৮৮৪ তে। নাটকে চৈতন্যের ভূমিকায় অভিনয় নিয়ে প্রথমদিকে বিনোদিনী খুব দুশ্চিন্তায় ছিলেন। প্রথম অভিনয়ের আগের রাত্রে সারারাত তিনি ঘুমোতে পারেননি। সকালে গঙ্গাস্নান করে ১০৮ বার দুর্গানাম লিখেছিলেন। সবসময় কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করেছিলেন পতিতপাবন হরি যেন তাঁকে দয়া করেন। অভিনয়ের আগে পর্যন্ত তিনি ভয়ে, চিন্তায়, ভাবনায় অস্থির হয়েছিলেন।

 

অভিনয় যখন শুরু হলো বিনোদিনী চৈতন্য চরিত্রে লীন হয়ে গেলেন। বাল্যলীলার অভিনয়ের সময় “রাধা বই আর নাইক আমার, রাধা বলে বাজাই বাঁশী” বলে গান গাইবার সময় তিনি অনুভব করতেন এক শক্তিময় আলো যেন তাঁর সমস্ত হৃদয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। নিজের বাস্তব অস্তিত্বটুকুও তিনি যেন ভুলে যেতেন। তিনি শুধু গৌরপাদপদ্মই যেন নিজের ভেতরে অনুভব করতেন। পরে “গয়াধামে হেরিলাম বিদ্যমান, / বিষ্ণুপদে পঙ্কজে করিতেছে মধুপান,/ কত শত কোটী অশরীরী প্রাণী” বলার সময়ও আত্মবিস্মৃত হয়ে যেতেন তিনি। সন্ন্যাস নিয়ে শচীমাতার কাছে বিদায় নিতে আসার সময় মাকে উদ্দেশ্য করে বলা তাঁর কথাগুলো শুনে থিয়েটারে উপস্থিত মহিলারা হাপুস নয়নে কাঁদতে আরম্ভ করতেন। তাঁদের কান্নার আওয়াজে বিনোদিনীও আকুল হয়ে উঠতেন। “কৃষ্ণ বলে কাঁদ মা জননী, / কেঁদনা নিমাই বলে,/ কৃষ্ণ বলে কাঁদিলে সকলই পাবে,/ কাঁদিলে নিমাই বলে,/ নিমাই হারাবে কৃষ্ণে নাহি পাবে” শুনে শচীমাতার শোক আর কান্না বিনোদিনীকেও চোখের জলে ভাসিয়ে দিত। শেষে যখন তিনি “হরি মন মজায়ে লুকালে কোথায়। আমি ভবে একা দাও হে দেখা প্রাণসখা রাখ পায়” গান গাইতে গাইতে হরি সংকীর্তন করতেন তখন তিনি সম্পূর্ণভাবে চৈতন্যে নিমজ্জিত হয়ে যেতেন। নিজের আত্মজীবনী “আমার কথা” তে বিনোদিনী এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “এই গানটা গাহিবার সময়ের মনের ভাব আমি লিখিয়া জানাইতে পারিব না। আমার সত্যই তখন মনে হইত যে আমি তো ভবে একা, কেহ তো আমার আপনার নাই। আমার প্রাণ যেন ছুটিয়া গিয়া হরি পাদপদ্মে আপনার আশ্রয় স্থান খুঁজিত। এক একদিন এমন হইত যে অভিনয়ের গুরুভার বহিতে না পারিয়া মূর্ছিতা হইয়া পড়িতাম।”

 

এমনই এক অভিনয়ের সন্ধ্যায় বিনোদিনী চৈতন্যের অভিনয় করতে করতে অচেতন হয়ে গেছেন। মাননীয় ফাদার লাফোঁ এসেছেন সেদিন চৈতন্যলীলা দেখতে। থিয়েটার হল পরিপূর্ণ। বিনোদিনীর অভিনয়ে আপ্লুত ফাদার ড্রপসিন নামার পরেই স্টেজে উঠে এলেন এবং গিরিশ ঘোষকে সঙ্গে নিয়ে সটান চলে গেলেন গ্রিনরুমে। অচৈতন্য বিনোদিনীর মাথায় সস্নেহে হাত বুলোতে লাগলেন তিনি। জ্ঞান ফেরার পর বিনোদিনীকে তিনি এক গ্লাস জল খেতে বললেন। বিনোদিনী জল খাওয়ার পর সুস্থ হয়ে ফাদারের আশীর্বাদ নিয়ে আবার মঞ্চে চলে এলেন। নবদ্বীপের বিষ্ণুপ্রেমিক পণ্ডিত মথুরানাথ পঞ্চরত্ন মহাশয় “চৈতন্যলীলা” অভিনয় দেখতে এসে স্টেজে উঠে বিনোদিনীকে আশীর্বাদ করেছিলেন। তাঁকে প্রণাম করে বিনোদিনীও ধন্য হয়েছিলেন। তবে বিনোদিনীর জীবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো শ্রীরামকৃষ্ণের চৈতন্যলীলা নাটক দেখতে আসা। ১৮৮৪ সালের ২১ শে সেপ্টেম্বর শ্রীরামকৃষ্ণ এই অভিনয় দেখতে আসেন। অভিনয় শেষে অনেক রাত্রে বিনোদিনী তাঁর কাছে এলে তিনি বলেছিলেন, “হরি গুরু, গুরু হরি, বল মা হরি গুরু, গুরু হরি।” তার পরে বিনোদিনীর মাথার হাত রেখে বলেছিলেন, “মা তোমার চৈতন্য হউক”। এই প্রসঙ্গে বিনোদিনী “আমার কথা”তে বলেছেন, “তাঁর সেই সুন্দর প্রসন্ন ক্ষমাময় মূর্ত্তি আমার ন্যায় অধমজনের প্রতি কী করুণাময় দৃষ্টি। পাতকীতারণ পতিতপাবন যেন আমার সম্মুখে দাঁড়াইয়া আমায় অভয় দিয়াছিলেন।” সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং নির্মাল্য আচার্য সম্পাদিত “আমার কথা ও অন্যান্য রচনা” র পরিশিষ্ট থেকে জানা যায়, ১৮৮৩ সালের ১৪ই ডিসেম্বর “প্রহ্লাদ চরিত্র” (বিনোদিনী প্রহ্লাদ এর ভূমিকায়) এবং ১৮৮৫ সালের ২৫ শে ফেব্রুয়ারী “বৃষকেতু” (বিনোদিনীর পদ্মাবতীর অভিনয়) এবং “বিবাহ বিভ্রাট” (বিনোদিনী এখানে বিলাসিনী কারফারমার চরিত্রে) দুটি নাটকেরই অভিনয় দেখেন শ্রীরামকৃষ্ণ। তখনকার বিখ্যাত ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার, যিনি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ছাড়া কোনো কিছু মেনে নিতেন না, তিনিও “চৈতন্যলীলা” দেখে মুগ্ধ হয়ে যান। এমনকি জগদ্গুরু শ্রী শ্রী বিজয়কৃষ্ণ মহারাজ এই নাটকের অভিনয় দেখে ভাবে বিভোর হয়ে দর্শকাসন থেকে উঠে নাচতে আরম্ভ করেন। জানা যায়, সেই সময় রেল কোম্পানিকে “চৈতন্যলীলা” র অভিনয়ের দিনে নবদ্বীপ থেকে হাওড়া পর্যন্ত বিশেষ ট্রেন চালাতে হতো। একথা অনস্বীকার্য যে “চৈতন্যলীলা” তে অভিনয় সূত্রেই বিনোদিনী বাংলার “মঞ্চসম্রাজ্ঞী” রূপে অভিহিতা হন।

 

“চৈতন্যলীলা” তে বিনোদিনীর অভিনয় নিয়ে বাংলায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়ে যায়। প্রশংসার তরঙ্গ বয়ে যায় বাংলার নাট্যসমাজে। ১৮৮৪ সালের ২৯ শে সেপ্টেম্বর “হিন্দু প্যাট্রিয়ট” লেখে, “The actor who took the part of Chaitanya seems to be gifted with considerable histrionic ability.” Colonel H.S.Olcott লিখলেন, “As for the Chaitanya Lila, I unhesitatingly affirm that it is impossible for anyone to witness the play without a rush of spiritual feeling and religious fervour.”

 

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, নরেন্দ্রনাথ দত্তও বিনোদিনীর অভিনয় দেখতে গিয়েছিলেন। বিনোদিনীকে “সত্যম শিবম” মঙ্গলগীতি শুনিয়ে তিনি আশীর্বাদ করে এসেছিলেন। বিনোদিনী আরও একবার শ্রীরামকৃষ্ণের সান্নিধ্যলাভ করেছিলেন। তখন শ্যামপুকুরের গোকুল ভট্টাচার্যের বাড়িতে শ্রীরামকৃষ্ণ চিকিৎসার কারণে থাকছিলেন। তাঁর শিষ্যেরা, বিশেষ করে নরেন্দ্রনাথ দত্ত, তখন তাঁর কাছে আগন্তুকদের আসা নিষিদ্ধ করে দেন। শ্রীরামকৃষ্ণের অসুস্থতার কথা শুনে বিনোদিনী তাঁকে দেখার জন্য আকুল হয়ে উঠেন এবং শ্রী কালীপদ ঘোষের সাহায্যে “হ্যাট কোট” এ সাহেব সেজে শ্রীরামকৃষ্ণের সাথে দেখা করতে যান। তাঁর সাথে দেখা করে পুনর্বার তাঁর আশীর্বাদ নিয়ে চোখের জল ফেলতে ফেলতে ফিরে আসেন বিনোদিনী।

 

“চৈতন্যলীলা” র সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে গিরিশ ঘোষ চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনের শেষের দিকের অংশ নিয়ে রচনা করেন “দ্বিতীয় ভাগ চৈতন্যলীলা” বা “নিমাই সন্ন্যাস”। “স্টার থিয়েটার” এ ১০ ই জানুয়ারী ১৮৮৫ সালে মঞ্চস্থ হয় এই নাটক । বিনোদিনী এখানেও চৈতন্যের ভূমিকায় অভিনয় করেন। এই নাটকে চৈতন্যের ভূমিকাই বেশি ছিল এবং সম্পূর্ণ নাটকটিতে বড় বড় “স্পিচ” বা ডায়ালগ ছিল। “আমার কথা” তে বিনোদিনী বলেছেন, “এই দ্বিতীয়ভাগ চৈতন্যলীলার অংশ মুখস্থ করিয়া আমায় একমাস মাথার যন্ত্রণা অনুভব করিতে হইয়াছিল।” কিন্তু শ্রীরামকৃষ্ণের আশীর্বাদধন্যা বিনোদিনী তাঁর প্রতিভা এবং ভক্তি দিয়ে সবার মন জয় করে নেন। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক হলো, “চৈতন্যলীলা” তে চৈতন্যের ভক্তিভাবের অভিনয়ের সাথে তাঁকে কখনও কখনও অমৃতলাল বসুর লেখা “বিবাহবিভ্রাট” এর মতো প্রহসনে বিলাসিনী কারফারমার মতো আধুনিকার চরিত্রেও অভিনয় করতে হয়েছে। কী বৈপরীত্য! কী অসম চরিত্রের রূপায়ন! বিনোদিনী নিজেও প্রথম দিকে একসাথে এই দুই চরিত্রে অভিনয় করার সাহস করতে পারেননি। পরে অবশ্য তাঁকে এ বিষয়ে আর দুশ্চিন্তা করতে হয়নি।

খুব সুচারুভাবেই তিনি এই দুই চরিত্রে অভিনয় করেন। তাঁর অসাধারণ প্রতিভা আর নাট্যপ্রেম তাঁকে সবরকম বাধা সবসময় অতিক্রম করতে সাহায্য করেছিল। তার ওপর ছিল তাঁর নাট্যগুরু গিরিশ ঘোষের পরিচর্যা এবং শিক্ষা।

 

একটা কথা না বললে বিনোদিনী আর “চৈতন্যলীলা” সম্পর্কে বলা সম্পূর্ণ হয় না। ১৮৮৫ সালে বিনোদিনী ৬ বছরের (বা ৭ বছরের) তারাসুন্দরীকে “স্টার থিয়েটার” এ নিয়ে আসেন। “চৈতন্যলীলা” নাটকে এক নির্বাক বালকের ভূমিকায় অভিনয় দিয়ে তারাসুন্দরীর অভিনয় জীবন শুরু হয়। বিনোদিনী – পরবর্তী স্টার থিয়েটারে এই তারাসুন্দরীই প্রধান চরিত্রে অভিনয় করতেন। তের বছর বয়সে তিনি “চৈতন্যলীলা” তে চৈতন্য, “নলদময়ন্তী” তে দময়ন্তী এবং “বুদ্ধদেব চরিত” এ গোপার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। এই সব চরিত্রে বিনোদিনী আগেই অভিনয় করে সুনাম অর্জন করেছিলেন। বিনোদিনী প্রতিবেশী বালিকা তারাসুন্দরীকে কখনও কখনও বেলুড় মঠে নিয়ে যেতেন। ১৯১৬ সালে বিনোদিনীই তারাসুন্দরীকে বেলুড় মঠে স্বামী ব্রহ্মানন্দের কাছে নিয়ে যান। সুতরাং, মঞ্চ ত্যাগের পরেও বিনোদিনীর সাথে যে তারাসুন্দরীর যোগাযোগ ছিলো তা বলা বাহুল্য মাত্র।

 

একটা বিষয় এখানে বলে রাখা বোধহয় প্রাসঙ্গিক হবে। বিনোদিনী মঞ্চে ছিলেন তাঁর জীবনের বারো বছর আর সাহিত্যচর্চা করেছেন মঞ্চত্যাগের পর প্রায় পঞ্চাশ বছর। অথচ সাহিত্যিক বিনোদিনীকে বাঙালী জানে না। তাঁর লেখা কাহিনিকাব্য “কনক ও নলিনী” এক অসামান্য সাহিত্য নিদর্শন হওয়া উচিত হলেও তা হয়নি। চুরাশি পাতার কাব্যগ্রন্থ “বাসনা” তে প্রকাশিত একচল্লিশটি কবিতা বা “ভারতবাসী” পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন নাট্যসমালোচনা কোনো কদর পায়নি বাংলা সাহিত্যসমাজে। অকপট আত্মজীবনীতে তিনি নিজেকে “পতিতা” বলতে দ্বিধা করেননি। অথচ তাঁর সেই আত্মজীবনী বাংলায় আদৃত হয়নি। তিনি দু’বার তাঁর আত্মজীবনী লিখেছিলেন। ১৯১২ সালে লেখেন “আমার কথা” এবং ১৯২৪ সালে লেখেন “আমার অভিনেত্রী জীবন”। দু’বারই তিনি তাঁর বারো বছরের অভিনয় জীবনের কথাই শুধু লিখেছেন। “আমার কথা” তিনি লিখেছিলেন সাধু ভাষায় আর “আমার অভিনেত্রী জীবন” তিনি লিখেছিলেন চলিত বা কথ্য ভাষায়। বারো বছরের ব্যবধানে ভাষার উন্নতি ধরা পড়েছিল তাঁর লেখায়। অথচ তিনি সাহিত্যিক হিসাবে সম্মানিত নন। “আমার কথা” প্রথম খণ্ড হিসাবে প্রকাশিত হলেও দ্বিতীয় খণ্ড কোনোদিনই প্রকাশিত হয়নি। কেন? তার কোনো উত্তর বিনোদিনী দেননি। আমরাও খোঁজার চেষ্টা করিনি। যে মঞ্চ তথা নাটকের জন্য তিনি এতকিছু করে গেছেন সেই নাট্যচর্চার ইতিহাসেও কি তাঁকে আমরা যথাযথ সম্মান দিয়েছি? ব্রাত্য করে রাখিনি কি তাঁকে?

তারিখঃ অক্টোবর ১১, ২০২৩

Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Ranu Sil
Ranu Sil
1 year ago

অনেক কিছু জাননলাম। ধন্যবাদ।

প্রকাশক - Publisher

Site By-iconAstuteHorse