বিভ্রম
রুবানা ফারাহ আদিবা (ঊর্মি )
ইলশেগুড়ি বৃষ্টি হয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগেই। বৃষ্টিভেজা আকাশ চিরে ঝুরি ঝুরি হলদে রোদ ছুঁয়ে আছে পাইন গাছগুলোকে। বাস স্টপেজে নেমে আড়মোড়া ভাঙল ঋভু। ঋভু হক – সুদর্শন, বয়স বাইশ। দু’বছর বয়সে বাবা মা’কে হারিয়েছে ভয়ঙ্কর সড়ক দুর্ঘটনায়। সেই থেকেই ঋভু চিরহরিৎ চিরকুমার ছোট কাকামনির কেয়ার অফে। সংসারের কোনো মায়ায় তিনি বাঁধা পড়তে অনিচ্ছুক। একসময়ের তুমুল ওয়ার্কহলিক কাকামনি বর্তমানে অবসর নিয়েছেন ছক বাঁধা জীবন থেকে। হুটহাট করে বেরিয়ে পড়েন এখানে সেখানে। ট্যুরিস্ট আকর্ষণের জায়গাগুলোকে তিনি সযত্নে এড়িয়ে চলেন। তাঁকে টানে একাকী পাহাড়, কিংবা নির্জন সমুদ্র। ঋভু সম্ভবত এই উদাসীন উড়নচণ্ডী স্বভাব পেয়েছে কাকামনির কাছ থেকেই।
সিয়াটল ওর খুব প্রিয় এক শহর। অ্যারিজোনার মতো মরুভূমি শহরে হাঁপিয়ে উঠলেই ও এখানে চলে আসে। ঘুরে বেড়ায় শহর থেকে দূরে লুকিয়ে থাকা ছোট ছোট লোকালয়গুলোতে। এবার সখ হয়েছে গ্রে হাউন্ড বাসে লম্বা সময় ধরে পথ ও প্রকৃতি দেখতে দেখতে সিয়াটলে আসার। কাকামনি বলে দিয়েছিলেন, সাথে একটা ছাতা রাখতে। কেন না সিয়াটলে একটু পর পরই বৃষ্টি হয়, কখনও বা একটানা বিরামহীন বর্ষণ চলছে তো চলছেই।
ট্যাক্সি স্ট্যান্ডটা সামনেই। একটু হেঁটে গিয়ে একটা ট্যাক্সিও নেয়া যায় আবার লোকাল বাস ধরেও আড়াইঘণ্টা দূরের শহর Sequim এ পৌঁছানো যেতে পারে। কিছুটা ভেবে নিয়ে একটা ট্যাক্সি নেওয়াই স্হির করল ঋভু। স্ট্যান্ডে অপেক্ষারত প্রথম ট্যাক্সিতেই সওয়ার হলো সে। এক গম্ভীর সর্দারজী বাহক তার, অভিজাত গোঁফের ফাঁক দিয়ে কিঞ্চিৎ স্মিতহাসি হেসে জিজ্ঞেস করলেন গন্তব্য। ট্যাক্সি চলতে শুরু করল। আপাতত: একটা থাকার ব্যবস্হা করতে হবে। এমন শহরগুলোতে হোটেলের চেয়ে এয়ার বি অ্যান্ড বি তে থাকতেই বেশি পছন্দ করে সে।
পাহাড় এবং জলের শহর সিয়াটল। উঁচু নীচু পাহাড়ি রাস্তা। দুপাশে পন্ডারোসা পাইন, ডগলাস ফার, রেড অ্যাডলারের সমারোহ। হলুদ সবুজ এই অরণ্যের বুকে থোকায় থোকায় ফুটে আছে নানা রঙের রডোডেন্ড্রন। হাওয়ায় মিশে আছে জলীয় বনজ সুবাস। নোরাহ্ কে মনে পড়ল খুব। ক’মাস আগে ওর সাথে ছাড়াছাড়ি হতে গেছে। লক্ষ্মীমন্ত মেয়ে নোরাহ্। গোছানো, সংসারী – যা একদমই ঋভুর স্বভাবের বৈপরীত্যে। অনেকটুকুই সহ্য করে নিয়েছিল যদিও, কিন্তু এতটা ফারাকে সহাবস্হান সম্ভব হয়ে ওঠেনি শেষ পর্যন্ত। হঠাৎ করেই সর্দারজীর ডাকে সচকিত হয়ে উঠল ঋভু। বেশ অনেকটা রাস্তাই ঘুমিয়ে পড়েছিল সে। সর্দারজী জানালেন, Sequim এ পৌঁছে গেছে এবং যে রাস্তাটির সামনে ওরা দাঁড়িয়ে আছে এই মুহূর্তে, একের পর সারি সারি ছড়িয়ে আছে এয়ার বি অ্যান্ড বি। এখন শুধু পছন্দসই একটা বেছে নিতে হবে। ট্যাক্সি ভাড়া চুকিয়ে বুকিয়ে বিদায় নিয়ে নিল দু’জন যে যার উদ্দেশ্যে।
কিছুদূর হাঁটতেই বৃষ্টি। এবারে ছাতাটা কাজে লেগে গেল। কাঁধে ব্যাকপ্যাক ছাড়া আর কোনো বোঁচকা নেই ওর সাথে। তাই হাঁটতেও তেমন কোনো অসুবিধে হলো না। সুন্দর ছিমছাম ছোট ছোট বাড়ি, একতলা বা দোতলা, সামনে ফুলের বাগান। সবগুলোই স্টে হোম। একটাতে ঢুকতে গিয়েও, তার পাশের বাড়িটাকে আরও মনোরম মনে হলো ঋভুর। হলুদ বেগুনী কমলা রঙের জংলী ফুলে ছেয়ে আছে চারপাশ আর গেটের দুধারে দুটো বড় সিডার গাছ, সবুজ পাতায় নুয়ে পড়েছে। অপ্রতিরোধ্য এক আকর্ষণ ঋভুকে টেনে নিয়ে গেল বাড়িটার দরজায়।
রোদের আলো পড়ে এসেছে প্রায়। এরকম ছোট ছোট শহরে ঝুপ করে সন্ধ্যা নেমে আসে। বেশ অদ্ভুতভাবেই ডোর বেল বাজাবার আগেই দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন এক মধ্যবয়সী ভদ্রমহিলা। সুন্দরী এবং চৌকস বেশবাস। দরজা খুলেই মিষ্টি হেসে ইংরেজীতে বললেন, “থাকবার জায়গা খুঁজছ বুঝি?” দরজার ওপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন আসবাবপত্রের আয়োজন দেখতে পেল ঋভু। ভদ্রমহিলা নিজের পরিচয় দিলেন। দরজার একপাশে দাঁড়িয়ে হাতের ইশারায় ভেতরে আসার জন্য জায়গা করে দিয়ে ভেতরে ডেকে নিলেন মিস ডোরা। এই বাড়িটি অন্যান্য বাড়ির তুলনায় আরও ছড়ানো, মনোরম ফ্লোর প্ল্যান। পরিচিত এক সুঘ্রাণ পেল ঋভু। চোখে পড়ল, বেশ কিছু আগরবাতি জ্বলছে সেন্টার টেবিলের ওপর। নোরাহ্ খুব পছন্দ করত। প্রায়ই বাজার ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন অ্যারোমার ইনসেন্স কিনে নিয়ে আসত। টেবিল টপে ফুলদানিতে সাজানো আছে বাগানের ফুলগুলো, নীলাভ কার্পেট আর দুপাশে দুটো লাভসিট। ঋভু জিজ্ঞেস করল,
“প্রতিদিন কেমন খরচ পড়বে?”
মিস ডোরা একটু হেসে বললেন,
“চল্লিশ ডলার”
ঋভু বেশ অবাক হলো, ও আশা করেনি এতটা সস্তায় স্টে হোম পেয়ে যাবে। তিনদিনের পরিকল্পনা নিয়েই সে এসেছে এই শহরে। খরচ একটু বেশী হলেও অসুবিধে ছিল না। সে জন্য তৈরি হয়েই এসেছিল। নীলচে সবুজ চোখে উৎসুক দৃষ্টিতে অপেক্ষা করছিলেন মিস ডোরা। তার গোলাপি চিবুকের চৌকাঠে জমেছে হালকা হালকা স্বেদবিন্দু। ঈষৎ উৎকণ্ঠা মেশানো কন্ঠে জানতে চাইলেন এবং আশ্বাসও দিলেন, যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ মনে হয় তাহলে কিছুটা কমিয়েও দিতে পারবেন। ঋভু আশ্বস্ত করল, সে এই ক’টা দিন এখানেই থাকতে ইচ্ছুক।
“Well then !! চলো তোমাকে তোমার ঘর দেখিয়ে দিই তাহলে” উচ্ছ্বসিত মিস ডোরা ইশারায় ঋভুকে বললেন তাকে অনুসরণ করতে। নীচের তলা থেকে ঘুরে ঘুরে সিঁড়ি উঠে গেছে ওপরে। তিন তলার একটি ঘর বরাদ্দ ওর জন্য। অন্য কোনো অতিথি নজরে এলো না ঋভুর। মিস ডোরার আতিথেয়তায় বাড়িটি জমজমাট হওয়ারই কথা। মিস ডোরা যেন ওর লুকোনো জিজ্ঞাসার খোঁজ পেয়ে গেছেন, বললেন, অতিথি নির্বাচনের ব্যাপারে তিনি খুব খুঁতখুঁতে। এজন্য তিনি শূন্য গোয়ালকেই অধিকতর গ্রহণযোগ্য মনে করেন। একটু বিস্মিত যে হলো না, তা অস্বীকার করতে পারবে না ঋভু। অজানা অচেনা ঋভুকেই বা এত সঠিক মনে হলো কী করে মিস ডোরার!
অপরিচিত মিস ডোরা কয়েক মুহূর্তেই যেন অনেকটাই নিকটে চলে এসেছেন। ঋভুর মনে হলো, ওর বন্ধুর মায়েরাও এভাবেই গল্প করে ওর সাথে। বয়সজনিত চপলতা রক্ষা করেই বললেন, আজকের সন্ধ্যা সৌভাগ্য বয়ে নিয়ে এসেছে। খয়েরী রং এর ওভারকোটটা যত্ন সহকারে খুলে নিতে নিতে আরেক বার যেন ঋভুকে খুব ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে নিলেন মিস ডোরা, যাকে বলে চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত খুঁটে খুঁটে। যেতে যেতে জানিয়ে গেলেন, দোতলাতে তিনিই থাকেন। দোতলা এবং তিনতলার মাঝামাঝি একটি ঘর তালাবন্ধ দেখেছে ঋভু, হয়ত অতিরিক্ত কেউ এলে খুলে দেয়া হয়।
চৌকোণা একটি ঘর। দেয়ালজুড়ে দক্ষিণমুখো জানালা। রাস্তার মৃদু সোডিয়াম আলো ঘরে ঢুকে পড়েছে। সেইসাথে মিশেছে মিহি চাঁদ, কিছুটা মেঝেতে, কিছুটা বিছানার চাদরে যেন নকশা কেটে চলেছে প্রিজমের আদলে। এই বছরের পাতা ঝরার দিন কেবল শুরু হয়েছে। হালকা হাওয়ার সাথে রুমঝুম পাতা ঝরে পড়ার ঝরঝর শব্দ রাতের নীরবতাকে চুরমার করে দিচ্ছে মাঝে মধ্যে। ঋভু রুম হিটারের তাপমাত্রা একটু নামিয়ে দিল। ধাতব গন্ধটা একদম সহ্য করতে পারে না, তবুও শীতকালের শুরু থেকে কিছুটা সহ্য করে নিতে হয়। আগামীকাল ভোরে ঘুম থেকে ওঠার ইচ্ছে। পায়ে হেঁটে লোকালয়টাকে একটু বুঝে নেবে। বিছানায় গা এলিয়ে দিল ঋভু। নরম চাদরটা গায়ের ওপর টেনে নিতেই ঘুমে দু’চোখ বন্ধ হয়ে এলো।
হঠাৎ ঘুম ভাঙল ইন্টারকমের রিং টোনে। ধড়মড় করে উঠে আধশোয়া হয়ে পাশের টেবিল ঘড়িতে ঋভু দেখল মাত্র সন্ধ্যে সাড়ে আটটা বাজে। ঘুমিয়ে পড়েছিল এক ঘণ্টার মতো, অথচ মনে হচ্ছে একটা লম্বা ঘুম দিয়ে উঠল। আসলে, ক্লান্তিতে অবসাদে শরীরে ঘুম নেমে এসেছিল। খুব রাত তো হয়নি। রিসিভার কানে নিতেই, মিস ডোরার কণ্ঠস্বর। নীচে দোতলাতে গিয়ে গেস্টবুকে নামটা লিখে আসতে হবে। একটা কৌতূহল মাঝে মাঝেই মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে ঋভুর । মিস ডোরার সন্তান সন্ততি অথবা আত্মীয় স্বজনরা কই! এদেশে সকলেই ছেলেমেয়ে, বন্ধুবান্ধব, এবং পরিবার পরিজনদের ছবি সাজিয়ে রাখে দেয়ালে, টেবিলে, ঘরের কোণায় কোণায়। কিন্তু, বাড়ির কোথাও সেসব কোনো চিহ্ন নেই, কথোপকথনেও অনুপস্হিত। হতে পারে, ছেলেমেয়েরা সব দূরে চলে গেছে, হতে পারে আত্মীয় স্বজনের সাথে এখন আর কোনো সংযোগ নেই।
ওভারকোটটা হ্যাঙারে রেখে ওয়াশরুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে নিল ঋভু। ব্যাকপ্যাক থেকে পরিষ্কার টি শার্ট বের করে পালটে নিল যা পরে ছিল সারাদিন। চুল আঁচড়ে, কোলন ছড়িয়ে নিল খানিকটা। সিঁড়ি দিয়ে নেমেই বাঁ দিকে মিস ডোরার ঘর। দরজা ভেজানো ছিল, ঘরে ঢুকে মিস ডোরাকে পেল না। ফায়ার প্লেসে মৃদু আগুন জ্বলছে। বেশ আরামদায়ক এক উষ্ণতা ঘরটা জুড়ে। বহু দূর থেকে ভায়োলিনের বিষণ্ন সুমধুর সু্র পুরো পরিবেশকে আরো মোহনীয় করে তুলছে। মিস ডোরার পোষা অ্যালশিসিয়ান কুকুরটা রকিং চেয়ারের পাশে কুন্ডলী পাকিয়ে গোল হয়ে শুয়ে আরামে ঘুমোচ্ছে। ম্যান্টেল পিসের ওপরে গেস্টবুকটা চোখে পড়ল ঋভুর। কালো লেদারে মোড়ানো একটা সুদৃশ্য খাতা, ভেতরে কলম। সোফায় বসে পাতা ওল্টালো সে।
খুব পরিচিত দুটো নাম চোখে পড়ল। কলমটা হাতে ধরেই খুব নিবিষ্ট ভাবনায় ডুবে গেল ঋভু। জট খুলতে চেষ্টা করছে প্রবলভাবে। কিন্তু, নামগুলো কিছুতেই স্মৃতির জঞ্জাল ঠেলে বেরিয়ে আসতে পারছে না। আশেপাশের টুংটাং শব্দে চিন্তাসূত্র বিচ্ছিন্ন হলো ঋভুর। মিস ডোরা কখন ঘরে এসেছেন টেরই পায়নি। ঘরের ভেতরে একটা ছোট্ট কিচেন কর্নার। পোর্সেলিনের দুটো কাপে কফি বানাচ্ছেন। বিভিন্ন ধরণের সিরাপ, হুইপ ক্রিম, সিনামন ডাস্ট, অ্যালমন্ড মিক্সের আয়োজন। বোঝাই যাচ্ছে, কফি বানানো এবং পান করা তার অন্যতম প্যাশন।
হঠাৎ করে ঋভুর নাকে একধরণের পানজেন্ট ঝাঁঝাল গন্ধের ঝোকা এসে নাকে লাগল, অনেকটা ঠিক হাসপাতালে যেমনটা পাওয়া যায়। স্মৃতিতে ঝাপসা ঝাপসা ভেসে উঠতে শুরু করেছে একটা পরিচিত নাম। ববি ফিশার, ববি ফিশার… বিড়বিড় করছে আপন মনে। মিস ডোরা রিনরিন করে উঠলেন। স্বগোক্তির সুরে বললেন, “ববি, সুদর্শন ঝলমলে একজন তরুণ।” জিজ্ঞেস করলেন, ঋভুর পরিচিত কি না, কেমন করে? ববির নামটা খবরের কাগজের শিরোনামে বহুদিন স্হান করে নিয়েছিল। ঋভু উঠে দাঁড়াতেই মিস ডোরা ওর হাতে কফির কাপ তুলে দিলেন। ধোঁয়ায় ভাসছে কফির টাটকা অ্যারোমা এবং স্বাদ বৃদ্ধির অনুষঙ্গগুলো প্রতিটি চুমুকে যেন টেস্ট বাড অতিক্রম করে দ্রুত গতিতে নিউরনে ছড়িয়ে পড়ছে।
“মিস ডোরা, ববিই তো দু’বছর আগে বস্টনে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার সময়…”
খিলখিলিয়ে হেসে উঠলেন মিস ডোরা। ঋভুর প্রশ্নকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেলেন মনে হলো। বরং এই মুহূর্তে কফিই গুরুত্বপূর্ণ। উৎকণ্ঠা মাখানো ঔৎসুক্য নিয়ে জানতে চাইলেন কফি কেমন হয়েছে। দুধ বা চিনি আর কিছু লাগবে কি না। কিন্তু, ঋভুর মন জুড়ে তখন ববি ফিশার ওলট পালট করে চলেছে। মিস ডোরার নীল চোখে খেলে যাচ্ছে অদ্ভুত এক সম্মোহন। পাশে এসে বসেছেন তিনি। ঋভুর হাত থেকে কফি কাপ নিয়ে ওতে আবার কফি ভরে দিলেন, মিশিয়ে দিলেন সিরাপসহ আর সমস্ত উপকরণ। ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি লেগে আছে আর ঘন গাঢ় দৃষ্টিতে ঋভুকে লক্ষ্য করছেন, সে দৃষ্টি যেন ঋভুর অন্তরাত্মা ভেদ করে ঢুকে পড়ছে গভীর থেকে গভীরে। ঋভুর হাতের ওঠানামার সাথে মিস ডোরার দৃষ্টি একদম নিবদ্ধ। বললেন, ঋভুর মেঘের মতো গাঢ় কালো চুল তার খুব একটা চোখে পড়েনি, আর গায়ের রঙটিও ভীষণ স্নিগ্ধ, জলপাইয়ের মতো মসৃণ। ঋভুকে চমকে দিয়ে বললেন এবার, ববির ত্বকও ছিল শিশুর মতো পেলব।
ততক্ষণে প্রচণ্ড এক অস্বস্তি চেপে ধরতে শুরু করেছে ঋভুকে। প্রসঙ্গ বদলানোর চেষ্টায় রকিং চেয়ারের পাশে অ্যালসেশিয়ানের গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে একটু ঝুঁকে বসল সে। বরফ ঠাণ্ডা শরীর, কিন্তু দেখে বোঝার উপায় নেই যে কুকুরটি জীবন্ত না। কুকুরটির চামড়া কৃত্রিম মনে হলো না। ফায়ার প্লেসের ওপরে একটা কার্ডিনাল পাখিও বহুক্ষণ ধরে একই ভঙিতে বসে আছে। মিস ডোরার দিকে কৌতূহলের দৃষ্টি নিয়ে তাকাতেই রহস্যের হাসি হেসে জানালেন, তার প্রিয় পোষ্যদের তিনি এভাবেই সংরক্ষণ করে রাখেন।
হাসপাতালের গন্ধটা ক্রমশঃ তীব্র থেকে তীব্রতর হতে শুরু করেছে। প্রচন্ড ঘুম পেয়ে যাচ্ছে ঋভুর, নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। চোখ বোজার শেষ মুহূর্ত মনে হলো, ববি ফিশার নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল এক রাতে। টানা দু’বছর তদন্ত করেও কোনো সুরাহা করতে পারেনি পুলিশ টাস্ক ফোর্স। গেস্ট বুকে আর একজনের নামও খুব চেনা মনে হয়েছিল ঋভুর, সে ছিল সেই ডিটেকটিভ, যাকে ববি ফিশার রহস্য সমাধানের ভার দেয়া হয়েছিল।
ধীরে ধীরে যেন শূন্যে ভাসতে শুরু করেছে ঋভু। মিস ডোরার নীল চোখ দুটো ঝুঁকে আছে ঋভুর মুখোমুখি, গোলাপি ধারাল চিবুক, সরু সরু ম্যানিকিওর করা নখ… একটা সাদা রুমাল … তাতে ক্লোরোফর্মের মিষ্টি গন্ধ।
তারিখঃ সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১
দারুন রহস্যময়! পরিবেশ খুব সুন্দর সাজিয়েছেন। ধন্যবাদ দিদি।
অসাধারণ এক পরিবেশ তৈরী হয়েছে গল্পটিতে, বর্ণনা জীবন্ত l