সাদা ছেলে

 

নিরালা ভবনের তিনতলার জানলা দিয়ে বাইরে তাকাতেই সৌরিকের শরীর হিম হয়ে গেল। ২৬ মার্চ একটা অনুষ্ঠান আছে। তারই প্রচারণার জন্য রাত জেগে পোস্টার লিখেছিল সে। সৌরিকদের বাড়ির সামনে প্রায় দুশ হাত লম্বা একটা গলি সোজা গিয়ে মিশেছে সামনের রাস্তার সাথে। এই গলিটাতে প্রায়শই দু’;চারটা কুকুর দেখা যায়। কিন্তু এই মধ্যরাতে সৌরিক দেখতে পাচ্ছে কয়েকশ কুকুর গিজগিজ করছে পুরো গলিটাতে । আর সব কুকুরগুলো সুন্দর সারিবদ্ধভাবে সামনের দুপায়ের উপর ভর করে বসে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সৌরিকের দিকে। এত এত কুকুর দেখে সৌরিকের গা কাঁটা দিয়ে উঠল, একটা হিমশীতল অনুভূতি বয়ে গেল মেরুদণ্ড জুড়ে। ওদের মাঝখানে বেশ বড়সড় একটা ধপধপে সাদা স্বাস্থ্যবান দেশি কুকুর। ওটাই যেন কুকুরের দলটার নেতা। সৌরিক বেশ বিস্মিত হলো। এত কুকুর এলো কোত্থেকে? আর সব কুকুর হঠাৎ এই গলিতে কেন?

 

নাহ্ একটা ছবি তুলে রাখা প্রয়োজন নয়ত কাউকে বিশ্বাসই করানো যাবে না।’ কথাটা ভাবতেই নিজের মোবাইলটা টেনে নিল সৌরিক আর তখনই টেলিফোনটা বেজে উঠল।

 

 

‘হ্যালো’

 

‘হ্যালো সৌরিক ঘুমিয়ে পড়েছিস?’ ওপ্রান্তে রাশেদের কাঁপা কাঁপা কণ্ঠস্বর।

 

‘না, ঘুমাইনি পোস্টার লিখছি। তোর কি হয়েছে? কণ্ঠস্বরটা ওরকম লাগছে কেন?’

 

‘আমি তোকে বুঝাতে পারব না, আমি কি দেখেছি।’

 

‘কি, কি দেখেছিস?’

 

‘কয়েকশ কুকুর বসে আছে আমার বাড়ির সামনে।’

 

‘কি! কি বসে আছে?’

 

‘কুকুর, কুকুর! ঝাঁকে ঝাঁকে কুকুর!’

 

সৌরিকের হঠাৎ মনে হলো তার গলাটা শুকিয়ে যাচ্ছে। তার কণ্ঠ দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না। সৌরিক ভয়ে ভয়ে আবার জানলা দিয়ে বাইরে তাকায়। বাইরেটা শুনশান একটা কুকুরও নেই।

সৌরিক এবার মনে সাহস পায়। একটু কেশে গলা পরিস্কার করে বলল, ‘ কি আজে বাজে বকছিস! এত কুকুর আসবে কোত্থেকে! ভালো করে দেখ।’

 

ওপাশে রাশেদও জানলা দিয়ে বাইরে তাকায়। সৌরিক আবারও জানতে চাইল, ‘ কী রে দেখলি কিছু?’

নারে এখন কিচ্ছু নেই কিন্তু বিশ্বাস কর একটু আগেও ছিল।’

 

সৌরিক নিজের হাতে লেখা একটা পোস্টার টেনে নেয়। পোস্টারের দিকে তাকিয়ে সৌরিকের হঠাৎ হাসি পায়। হাসতে হাসতেই রাশেদের কাছে জানতে চায়,

 

’ তুইও কি পোস্টার লিখছিলি নাকি?

 

‘হ্যাঁ।’

 

‘ঐ পোস্টারটা লিখেছিস?

 

‘কোনটা?

 

সৌরিক হাতে ধরা পোস্টারটা দেখে পড়ে শোনায়। পোস্টারে লেখা, “মাদক ব্যবসায়ীরা কুকুরেরও অধম, এই কুকুরদের বয়কট করুন।”

 

হ্যাঁ লিখেছি।’

 

‘সেই কারনেই চোখে কেবল কুকুর দেখছিস। আজ আর লিখতে হবে না। ঘুমিয়ে পড়।’

 

সৌরিকও শুয়ে পড়ে কিন্তু ঘুম আাসে না। রাশেদকে যাই বলুক কুকুরের দলটিকে সে নিজেও তো দেখেছে! সারারাত ঘুমের মধ্যেও সে কুকুরগুলোকে দেখতে পায়। ওদের মাঝখানে সেই বেশ বড়সড় সাদা কুকুরটা সৌরিককে দেখে উঠে দাঁড়াল আর সাথে সাথে অন্য কুকুরগুলোও উঠে দাঁড়াল। আবার সাদা কুকুরটা বসে যেতেই অন্যগুলোও বসে পড়ল। সাদা কুকুরটা হঠাৎ ডাক দিল ঘেউ। অন্যরা একসাথে ডেকে উঠল ঘেউ। কুকুরের সম্মিলিত ঘেউ চিৎকারে সৌরিকের ঘুম ভেঙে যায়। চমকে বিছানায় উঠে বসে। বাইরে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। সৌরিক বিছানা ছেড়ে জানলার কাছে যায়। প্রতিদিনকার মতো এই গলির চেনা কুকুরগুলো কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে আছে গলিতে।

 

 

(২)

 

এগারোই মার্চ ইমরুল মারা যায়। ইমরুল সৌরিকদের স্কুল জীবনের বন্ধু ছিল। খুব হাসিখুশি, টকটকে ফর্সা, হ্যাণ্ডসাম। ইমরুল এতটাই ফর্সা ছিল, ক্লাসে আরিফ স্যার ওকে ডাকত “ সাদা ছেলে।” আর আরিফ স্যারের সাথে সাথে স্কুলের বন্ধুরাও তাকে অনেক সময় সাদা ছেলে বলে খেপাত। ইমরুল ভালো বাস্কেট বল খেলত, লেখাপড়ায় খুব বেশি ভালো ছিল না। কিন্তু তা নিয়ে ইমরুলের খুব একটা ভাবনা চিন্তাও ছিল না। সে পয়সাওয়ালার ছেলে। তার বাবার বড় ব্যবসা। লেখাপড়া শেষ করে সে বাবার ব্যবসাতে বসবে এটাই ঠিক করা ছিল। ইমরুলকে পড়ার কথা জিজ্ঞেস করলে সে হেসে বলত, ‘ আরে

পড়ালেখা করে কি হবে? আমার বিএ পাশের সার্টিফিকেটটা দরকার কেবল বিয়ে করার জন্য।’

কলেজে উঠার পর সৌরিক আর রাশেদ ভালো সরকারী কলেজে ভর্তি হয়। ইমরুল বেসরকারি একটা সাধারণ মানের কলেজে। সেই থেকে ইমরুলের সাথে সৌরিকদের যোগাযোগটা কমতে থাকে। মাঝে মাঝে দেখা হয়, কথা হয়। দেখা হলেই ইমরুল হাঁক পারত, ‘ কিরে ভালো ছেলেরা, লেখাপড়া কেমন চলছে?’

 

প্রতি উত্তরে সৌরিকরাও বলত, ‘ ওহে সাদা ছেলে,গুলতানি কেমন চলছে?’

‘আর গুলতানি, ছোটবেলার বন্ধুরা না থাকলে গুলতানি জমে? চল আজ একটা আড্ডা হয়ে যাক।’

তারপর শুরু হতো আড্ডা। সেই আড্ডা চলত ঘন্টার পর ঘন্টা। চা, সিগারেট, জলখাবার কোনোটার কমতি নেই। সব খরচ ইমরুলের। অন্যদের বিল দেয়ার সুযোগও থাকত না। ইমরুল বলত, ‘ তোদের পকেট মানি তোদের পকেটেই থাক, ওটা তো নিয়ম বাঁধা। আমার পকেট মানির কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। যখন যা দরকার বাবার গদি থেকে নিয়ে ফেলি। ইমরুলের বাবার শাকসবজি আর ফলের আড়ত আছে। দেশের বাইরেও রপ্তানি করেন অনেক কিছু। তিন তিনটা মেয়ের পর ইমরুল

তার বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। তাই ওর সব দাবীই মানা হয় ওদের সংসারে।

মাসকয়েক আগে থেকে ইমরুলের স্বভাব যেন পাল্টাতে থাকে। দেখা হলে আগের মত উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে না। বেশিক্ষণ আড্ডা মারতেও চায় না। কেমন যেন ছটফট করে। চলে যেতে চায়। আরেকটু থাকতে বললে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলে, ‘ যা ভালো ছেলেরা বাড়ি যা, লেখাপড়া কর। আমার মত খারাপ ছেলেদের সাথে বেশি আড্ডা মেরে ভবিষ্যতটা নষ্ট করিস না।’

 

 

একসময় সৌরিকরা খেয়াল করে ইমরুল কেমন যেন বদলে গেছে। তারমধ্যে সেই হাসিখুশি ভাবটা নেই। বাস্কেটবল ছেড়ে দিয়েছে। একটু যেন বদ মেজাজি ধরনের হয়ে গেছে। সৌরিকরা জানতে পারে ইমরুল মাদকাসক্ত হয়ে উঠেছে। সেই থেকে ইমরুলের সাথে ওদের দুরত্বটা আরো বেড়ে যায়। তাদের প্রিয় সাদা ছেলেটা কখন যে কালো জলে ডুবে গেছে ওরা বুঝতেও পারেনি। বারই মার্চ সকালে সৌরিকদের বাসার সামনে এসে রাশেদ চিৎকার করতে থাকে,

 

;সৌরিক, এই সৌরিক, বাইরে আয়।’

 

‘কিরে কি হয়েছে?’ তিনতলার বারান্দা থেকে সৌরিক জানতে চায়।

 

‘ইমরুল..ইমরুল আর নেই। ‘ রাশেদ ফুঁপিয়ে উঠে।

 

‘কি!’

 

‘হ্যাঁ, স্কুলের মাঠে ওর লাশ পাওয়া গেছে।’ রাশেদ ফুঁপিয়ে উঠে। ইমরুল ওদের দুঃসম্পর্কের আত্মীয় হয়। খবরটা তাই ওরাই আগে পেয়েছে। ইমরুলকে খুন করা হয়েছে। পুলিশ সুত্রে ওরা জানতে পারে ইমরুল একটা মাদক চোরাকারবারির দলে ঢুকে পড়েছিল। ইমরুল তার পৈতৃক ব্যবসার আড়ালে মাদক ব্যবসায়ীদের মালামাল পাচার করত। পুলিশ ধারণা করছে ওরাই ইমরুলকে খুন করেছে।

ইমরুলের এই মৃত্যু সৌরিকদের ক্ষুব্ধ করে তুলে। এই ঘটনার পর ইমরুলের সহপাঠীরা, তাদের স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ এবং বর্তমান ছাত্রদের নিয়ে ইমরুল হত্যার বিচারের দাবীতে বিশাল আন্দোলন শুরু করে। মাদকবিরোধী মিছিল, মিটিং,সভা-সমাবেশ করে ব্যাপক জনমত গঠন করতে সমর্থ হয়।

 

সৌরিকদের এই আন্দোলনের ফলে প্রশাসনের তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। গত দু’;সপ্তাহে ব্যাপক ধরপাকড়ের কারনে এলাকার মাদক ব্যাবসায়ীরা নিজেদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়। আগামী ছাব্বিশে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সৌরিকরা এক মহা-সমাবেশের ডাক দেয়। ঐদিন সকলের

সামনে এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের ছবিসহ নাম প্রকাশ করা হবে। আর এই সমাবেশ থেকে এসব ঘৃণ্য নরপশুদের সামাজিকভাবে বয়কট করার ডাক দেয়া হবে।

 

 

(৩)

সৌরিকের মোবাইলটা অনবরত বেজে চলেছে। বাথরুম থেকে তড়িঘড়ি বেরিয়ে এসে সৌরিক দেখে রাশেদের ফোন।

 

‘কিরে এমন প্রাণপাত করে ফোন করছিস কেন? লেজে আগুন দিল কে?’

 

‘চুপ কর! ‘ রাশেদ মৃদু ধমক দেয়, ‘ সত্যি সত্যিই লেজে আগুন লেগেছে।’

মানে?’

 

‘মাদক ব্যবসায়ীরা ক্ষেপেছে। একটু আগে আমাকে ফোন করে হুমকি দিল। ২৬ মার্চের কর্মসূচী বন্ধ করতে হবে।’

 

‘তুই কি বললি?’

 

‘বললাম সময় থাকতে পালিয়ে যেতে নইলে ইমরুলকে হত্যার দায়ে হয় মৃত্যুদণ্ড নয়ত যাবজ্জীবন জেল খাটতে হবে।’

 

‘সাবাস! একদম ঠিক বলেছিস। ওদের ভয় পেলে চলবে না। দেখিস আমরা ঠিক মত কাজ করতে পারলে এসব বদমাশরা পালিয়ে পথ পাবে না। যাকগে শোন, যে নাম্বার থেকে তোকে ভয় দেখিয়েছে সেই নাম্বারটা থানায় দিতে হবে। আমি খাওয়া দাওয়া সেরে তোর বাসায় আসছি। তুই রেডি হয়ে নে।’

 

রাশেদের সাথে কথা বলে পুরো পরিস্থিতিটা নিয়ে একটু ভাবছিল সৌরিক। এমন সময় আবার ফোনটা বেজে উঠে। অজানা নাম্বার দেখে সৌরিকের একটু সন্দেহ হয়। সে মোবাইলের ভয়েজ রেকর্ডারে চাপ দেয়। ওপাশে একটা কর্কশ কণ্ঠ।

 

‘কি মিয়া এত কথা কার লগে কও? খালি বিজি দেখায় ফোন। ধরবার পারি না তোমারে ফোনে।’

 

‘কে বলছেন?’

 

প্রশ্নের জবাব না দিয়ে কর্কশ কণ্ঠে লোকটি বলল,

 

‘ কি চাও তোমরা? আমাগো পিছে লাগলা ক্যান?’

 

‘ আপনারা আমাদের বন্ধুকে খুন করেছেন। আপনারা যুব সমাজকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছেন। ‘

তোমার কথাগুলান রাজনীতিবিদগো লাহান লাগে। নেতা হইবার চাও? টেহা পয়সা যা লাগে আমি দিতাছি। ভালা হইয়া যাও। ২৬ তারিখের প্রোগ্রাম বাতিল কইরা দাও নইলে কইলাম তোমাগো অবস্থা তোমাগো বন্ধুর লাহান হইব।’

 

লোকটা লাইন কেটে দেয়। সৌরিক আপন মনে হাসে। ‘ওরা ভয় পেয়েছে, তাই এখন হুমকি দিচ্ছে। নাহ্ বিষয়টা থানাকেজানাতেই হবে।’

 

 

 

 

(৪)

 

 

গত কয়েকদিন ধরে সৌরিকদের বিশ্রাম নেয়ার অবকাশ নেই। সমাবেশকে সফল করার জন্য এলাকার ঘরে ঘরে তারা লিফলেট বিতরণ করছে। গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হচ্ছে। রাত জেগে পোস্টার লেখা আর দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার লাগানো শেষ হয়েছে। সেদিনের মত কুকুরের ঝাঁক আর চোখে পড়েনি সৌরিকের। তবে সেই সাদা কুকুরটাকে প্রতিদিন রাতে দেখা গেছে ওর বাড়ির সামনে। ঠাঁই বসে থাকে সারারাত। এলাকার অন্য কুকুরগুলো লেজ গুটিয়ে শুয়ে থাকে ঐ কুকুরটা আশে পাশে।

রাশেদ বলল তার বাড়ির সামনেও একইভাবে বসে থাকে একটা সাদা কুকুর। শুনে সৌরিক খুব অবাক হয়। একই রকমের দুটো সাদা কুকুর কোত্থেকে এলো!

 

২৫ মার্চ সন্ধ্যায় গণহত্যা দিবসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্বলনের মাধ্যমে ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণ অনুষ্ঠানে সৌরিক এবং তার বন্ধুরা শুধু নিজ এলাকা নয় সারা শহর তথা সারাদেশকে মাদকমুক্ত করার শপথ নিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত একটা বেজে যায়। শহীদ মিনার থেকে হেঁটেই বাড়ি ফিরছিল রাশেদ আর সৌরিক। এতক্ষণ বন্ধুদের সাথে ইমরুলের স্মৃতি চারণ করে ওদের দুজনের মনটা ভারী হয়ে আছে। দুজনেই চুপচাপ হাঁটছিল। স্কুলের মাঠের কাছে আসতেই ইমরুলের লাশের ছবিটা ভেসে আসে চোখে। রাশেদ হঠাৎ সৌরিকের হাত ধরে ডুকরে কেঁদে উঠে।

এই রাস্তায় আমরা ইমরুলের সাথে কত হেঁটেছি, কত গল্প করেছি। এই মাঠে কত দৌঁড়েছি। অথচ আজ ইমরুল নেই। এইরাস্তা দিয়ে হাঁটতে গেলে আমার কেবলই মনে হয় ইমরুল চিৎকার করে বলছে,

 

‘এই ভালো ছেলেরা বাঁচা আমাকে, আমি বাঁচতে চাই। তোদের মতো ভালো বন্ধু থাকতে আমি কেন নষ্ট হয়ে গেলাম?’

 

সৌরিকেরও কান্না পায়। সে দাঁত চেপে কান্না রোধ করে রাশেদকে শান্তনা দেয়, ‘ দেখ আমরা ইমরুলের জন্য কিছু করতে পারিনি কিন্তু আর যাতে কোনো ইমরুলের এইভাবে মৃত্যু না হয় সেই চেষ্টা তো করছি। এতেই ইমরুলের আত্মা শান্তি পাবে।’

এমন সময় সৌরিক খেয়াল করে স্কুলের মাঠের ভিতর দিয়ে কারা যেন গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে আসছে। লোকগুলোর আচরণ দেখে হঠাৎ সৌরিকের মন বিপদের আভাস দেখতে পায়।

 

‘রাশেদ চল তাড়াতাড়ি। এখানে দাঁড়িয়ে থাকা ঠিক হবে না।’

 

‘কেন, কি হয়েছে?’

 

‘ঐ দেখ, লোকগুলোর আচরণ আমার ভালো লাগছে না। চল কেটে পড়ি। ‘

সৌরিকরা কয়েক পা এগিয়ে যেতেই লোকগুলো দ্রুত মাঠের দেয়াল টপকে রাস্তায় এসে ওদের পথ আগলে দাঁড়ায়। সৌরিক সাহসের সাথে গর্জে উঠে।

 

‘এই কারা আপনারা? কি চান এখানে?”

 

‘তোদের কল্লা চাই হারামীর পুত! আমাগো ব্যবসা বন্ধ করবার চাস!’

 

‘ভালো চান তো এখান থেকে চলে যান। আমাদের পিছনে পুলিশ আছে। ‘ রাশেদ চেঁচিয়ে উঠে।

 

‘পুলিশ কি করব? ঐ পুলিশ হালারা আমাগো পয়সা চলে। ঐ খারায়া রইছস কেলা! মার হারামীগো।’ বলেই লোকগুলো ওদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। সৌরিকরা ভয় না পেয়ে খালি হাতে ওদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। হঠাৎ কেউ একজন লাঠি দিয়ে সৌরিকের মাথায় আঘাত করে। জ্ঞান হারাবার আগে সৌরিক শুধু শুনতে পায় অজস্র কুকুরের রাগী চিৎকার। এলাকার সব কুকুরগুলো ঝাঁপিয়ে পড়েছে আক্রমণকারীদের উপর। লোকগুলোর প্রবল আর্তনাদে আশে পাশের বাড়িতে বাতি জ্বলে উঠে ।

 

রাশেদের চিৎকার শুনতে পায় সৌরিক,

‘সাহায্য করুন, আমাদের সাহায্য করুন। মাদক ব্যবসায়ীরা আমাদের উপরআক্রমণ করেছে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে থাকা সৌরিক টের পায় বাড়িগুলো থেকে লোকজন বেরিয়ে আসছে। সৌরিক হঠাৎ

দেখতে পায় সেই সাদা কুকুরটা তার মুখের কাছে এসে কেমন মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর পরম মমতায় জিভ দিয়ে তাকে চেটে দিচ্ছে। একমুহূর্তের জন্য সৌরিকের মনে হয় ওটা আসলে কুকুর নয় ওটা ওদের প্রিয় বন্ধু সাদা ছেলে ইমরুল।

তারিখঃ এপ্রিল ২৫, ২০২৪

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

প্রকাশক - Publisher

Site By-iconAstuteHorse