শব্দে পুরুষবাদ, নারীবাদ ও মানববাদ
মাহবুব ইসলাম
woman শব্দটির উৎপত্তি wo for man যার অর্থ পুরুষের জন্য চির দুঃখ, অথচ নারী ও পুরুষ উভয়ই একে অন্যের সুখ ও দুঃখের সাথী। আবার ইংরেজিতে ‘female ‘feminine ‘দুটো বিশেষণ থাকলেও ফরাসি ভাষায় woman এর বিশেষণ একটাই feminine, যেটা নারীর সাংস্কৃতিক ও সামাজিক পরিচয়টাকেই বেশি গুরুত্ব দিত যা পরবর্তীতে নারীবাদী সমাজ চিন্তায় রুপ নেয়। বাংলা অভিধানে নারীর সমার্থক শব্দ খুঁজলে ‘অবলা, ধবলা, সতী, রমণী, কামিনী, মোহিনী, এরকম বেশিরভাগই যৌননির্ভর বা ডোমেস্টিক শব্দ পাওয়া যায়। এই শব্দগুলো মনে করিয়ে দেয় ”Man for field and woman for the hearth.”
বাঙ্গালি সমাজের মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে এক লেখক বলেন :-
“বাঙ্গালি ধর্মপ্রবণ হলেও কামপ্রবণ এবং অপরাধপ্রবণ।” তবে মিশেল ফুকো সমাজের এই মনস্তত্ত্বকে নারীবাদী বা পুরুষবাদী দৃষ্টিতে নয় একটা উত্তর আধুনিক তথা মানবতাবাদী দেখতে চেয়েছেন।
সমাজ নারী বা পুরুষকে আলাদা শব্দ দিয়ে ট্যাগ করে রাখে।
যেমন :-
‘স্ত্রৈণ’ও ”chastity” শব্দ। নারী যখন পুরুষের কথামতো চলে, তাকে “আদর্শ গৃহিনী” “পতিব্রতা” বলে। একই কাজ পুরুষ করলে ”স্ত্রৈণ” বলে অভিহিত করা হয় যা সুখকর নয়।
“Chastity” বা “সতীত্ব” নারীর জন্য ট্যাগ করা। তাই ধর্ষণে পুরুষের কিছু হারায় না। নারী সম্ভ্রম হারায়।
ফুকোর মতে, সমাজ মূলত: binary opposite (দ্বিত-বিভাজন) তত্ত্বের ভিত্তিতে চলে। যেমন, “লজ্জা” “আবরু” কে বলা হয় নারীর ভূষণ। তেমনি – ”কান্না,” “ভীতি,” “দ্বিধা” ইত্যাদিকে বলা হয় মেয়েলি স্বভাব। অন্যদিকে “বীরত্ব,” “সাহস” “নেতৃত্ব” কে বলা হয় পুরুষ সুলভ আচরণ। এজন্য president, chairman এসবের অনুবাদ ”রাষ্ট্রপতি” বা ”সভাপতি” করা হতো। এমনকী ব্যাকরণে Person বলতে পুরুষ কতো প্রকার ও কী কী শেখানো হয়।
অথচ “কান্না,” “লজ্জা” পুরুষেরও থাকতে পারে। আবার “নেতৃত্ব,” ও “বীরত্ব” নারীরাও দেখাতে পারে।
উত্তর আধুনিক যুগে এসে শব্দের এই ট্যাগ বন্ধ করতে হবে।
পুরুষ ও নারীকে লিঙ্গ, বর্ণ নয়, পুরুষ বা নারীবাদ নয়, মানবতাবাদী দৃষ্টিতে দেখতে হবে।
তারিখঃ জুলাই ১০, ২০২১