নীল শার্ট
জামান একুশে
“তুমি কি আজ ফ্রি আছো?”
“উঁহু কাজ আছে।”
“আগামীকাল?”
“উঁহু কাজ আছে।”
“কবে সময় হবে তাহলে তোমার?”
“জানি না তো। কেন বলতো?”
“আমার নীল শার্টটা।”
“ওহ! আচ্ছা আমি তাহলে পাঠিয়ে দিবো তোমার অফিসে।”
“না ঠিক আছে পাঠাতে হবে না। তুমি সময় হলে আমাকে জানিও।”
ফোনটা রেখে রুশো ব্রেকফাস্ট রেডি করে। অফিসে আজকেও লেইট হবে।
অপরদিকে যুথী বাসার দরজা লক করে অফিসের দিকে রওয়ানা হয়। অথচ এই কিছুদিন আগেও তারা এক সাথেই ব্রেকফাস্ট করে রুশো যুথীকে ড্রপ দিয়ে অফিসে যেতো আবার ফেরার পথে একসাথেই ফিরতো।
তিন বছরের সংসার হঠাৎ করেই দু’জনার পথ দু’দিকে কিভাবে চলে গেল রুশো বুঝতে পারে না।
ভুলটা তাহলে কার ছিল? রুশোর? যুথীর? নাকি সেই তৃতীয় পক্ষের?
যুথীর সাথে রুশোর খুব অল্প পরিচয় ছিল তারপর কিভাবে দ্রুত কাছে আসা বিয়ে সবকিছু ঘটতে লাগলো যে তারা কেউই কিছু ভাবার সময় পায়নি। ভরা বর্ষার পুলকিত ব্যাঙের মতো তারা তুমুল ভালোবাসায় ভেসেছিল। ভেবেছিল দে ওয়ের মেইড ফর ইচ আদার। কিন্তু সেই ভাবনা বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনি।
রুশো অফিস শেষ করে তাদের সেই কফি শপে বসে কফির অর্ডার দিয়ে একা বসে থাকে। কেন বসে থাকে সে জানে না। তাঁদের সেপারেশনের প্রায় চার মাস হতে চললো।
যুথী অফিস শেষ করে কিছু কেনাকাটা করে বাসায় ফিরে। রান্না, ঘরের কাজ, অফিস করতেই তার সময় যায়। রাতে শোবার সময় আলমারির হ্যাংগারে ঝুলানো নীল শার্টটা দেখতে পায়। শার্টটা যুথীই গিফট করেছিল। কালো প্যান্টের সাথে নীল শার্টে রুশোকে খুব সুন্দর লাগে।
শার্টের গন্ধ শুঁকে দেখে যুথী। রুশোর গন্ধ পাচ্ছে কি? কী মনে করে সে শার্টটা পরে ঘুমাতে যায়। তার কেন জানি ভালো লাগে। মনে হয় রুশোকে ধরে সে ঘুমাচ্ছে।
পরদিন সকালে আবার রুশো ফোন করলে যুথী ইগ্নোর করে। সারাদিনে বেশ কয়েকবার ফোন করে রুশো কিন্তু যুথী এন্সার করে না।
এভাবে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হয়ে গেলে রুশো অস্থির হয়ে উঠে। সে যুথীর অফিসে গিয়ে হাজির হয়।
“তুমি এখানে?”
“ফোন ধরছ না যে?”
“কেন ফোন ধরবো? আর কেন ফোন করো তুমি? শার্টের জন্য?”
“তোমার কী মনে হয়?”
“যখনই ফোন করো তখন তো শার্টের কথাই বলো। যেন জগতে ওই একটা শার্টই তোমার আছে।”
রুশোর মন নরম হয়। কেন জানি তার বলতে ইচ্ছে করে যুথী চলো আমরা আবার নতুন করে শুরু করি। কিন্তু তার বলা হয়ে উঠে না। সে বলে- “হ্যাঁ ওরকম শার্ট আমার একটাই আছে। প্রিয় শার্ট।”
“ঠিক আছে আমি পাঠিয়ে দেবো।”
রুশো বলে উঠে- “না থাক। তুমি যেদিন সময় পাবে জানিও।”
প্রতিরাতে যুথী রুশোর শার্ট পরে ঘুমায়। তার একধরণের নেশার মতো হয়ে গেছে। বিশ্বাসঘাতক রুশোকে আর চায় না ঠিক কিন্তু এই শার্ট পরলে পুরনো সেই রুশোকে ফিরে পায়। তাদের সেই সুন্দর ভালোবাসাবাসির মুহুর্তগুলো যেন ধরা দেয়। যুথীর আর একা লাগে না।
এভাবে আরো দেড় মাস অতিবাহিত হয়ে গেলে যুথী নিজেই একদিন ফোন করে রুশোকে।
আজকে সন্ধ্যায় একটু সময় হবে তোমার?
রুশো খুশিতে লাফিয়ে উঠে। অবশ্যই।
ঠিক আছে তাহলে আমাদের সেই কফি শপে এসো।
রুশো যেন এই দিনটির অপেক্ষায় ছিল। সে জানতো যুথী একদিন ফিরবেই।
নির্ধারিত সময়ের একঘণ্টা আগেই রুশো কফি শপে গিয়ে হাজির। আজকেই সে একটা নীল শার্ট কিনেছে। নীল শার্টের সাথে কালো প্যান্ট। যুথীর পছন্দ।
যুথী আজ খুব সুন্দর করে সেজেছে। লাল রঙের জামদানী পরেছে। লাল টিপ আর লাল লিপিস্টিকে যুথীকে অপ্সরী লাগছে।
“কী খবর? অনেকক্ষণ বসিয়ে রাখলাম কি?” যুথীর প্রশ্ন।
“না ঠিক আছে আমার যথেষ্ট সময় আছে। সমস্যা নেই।”
“সরি একটু পার্লারে গিয়েছিলাম। এই নাও তোমার শার্ট। ওয়াশ করে ইস্ত্রি করে দিয়েছি।”
রুশোর বুকটা ঢিবঢিব করছে। “কিসের শার্ট?”
“কেন! তোমার নীল শার্ট। যে শার্টের জন্য খানাপিনা ছেড়ে দিয়েছ তুমি।”
যুথীর ফোনটা বাজছে। বলল- “এক মিনিট দাঁড়াও ফোনটা একটু ধরি।”
“হ্যালো! হ্যাঁ তুমি কোথায়? এসে পড়েছ? আচ্ছা দাঁড়াও আমার আসতে পাঁচ মিনিটের বেশি লাগবে না।”
-বলে ফোনটা রেখে যুথী বলল। রুশো শোন আমাকে যেতে হচ্ছে। তোমার শার্টটা ফেরত দেয়ার জন্যই ডেকেছিলাম। আসি, ভালো থেকো।
রুশো যুথীর চলে যাওয়াটায় একটা অপরিচিত পারফিউমের ঘ্রাণ পায়। বুকের কাছটায় কি চিনচিন করছে! আজকাল গ্যাসের সমস্যা হচ্ছে। রুশো দেখে তাঁর প্রিয় নীল শার্টটা কেমন যেন ফ্যাকাশে রং জ্বলা লাগছে।
তারিখঃ জুলাই ১০, ২০২১