বুদ্ধদেব গুহ এবং বর্ধমান বইমেলা
নিখিল কুমার চক্রবর্তী
বুদ্ধদেব গুহ সম্বন্ধে কিছু বলতে গেলে বর্ধমান বইমেলা থেকে আলাদা করে আমার পক্ষে কিছু বলা বোধ করি উচিত নয়, সম্ভবও নয়। কারণ, আমি প্রথম এই মানুষটার সাথে পরিচিত হয়েছিলাম এই বইমেলার সূত্রেই। তাই বর্ধমান বইমেলা সম্বন্ধে কিছু ভণিতা করে রাখা ভাল। বর্ধমানে অতি পরিচিত উদয় সংঘের কয়েকজন সদস্য একটু অন্যভাবে চিন্তা করে তৈরি করেছিলেন “বর্ধমান অভিযান গোষ্ঠী”। সেই ১৯৬৮ সালে কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক এই উদয় সংঘের পত্রিকা “অভিযান” এর জন্মলগ্নে আশীর্বাদ করে লিখেছিলেন “নূতন আদর্শ আনো শুচি স্নিগ্ধালোক/তোমাদের অভিযান জয়যাত্রা হোক”। প্রথম থেকেই এই গোষ্ঠীর সম্পাদক ছিলেন গল্পকার সমীরণ চৌধুরী। প্রথম সভাপতি ছিলেন বাংলা সাহিত্যের দিকপাল কালিপদ সিংহ। এরপর স্বনামধন্য বারিদ বরণ ঘোষ এবং শ্যামাপ্রসাদ কুণ্ডু। সমীরণ চৌধুরী আমৃত্যু এই গোষ্ঠীর সম্পাদক ছিলেন। বর্ধমান বইমেলা সমীরণ চৌধুরীরই মস্তিষ্কপ্রসূত। তখন কলকাতা বইমেলার দুবছর বয়স। ১লা ফেব্রুয়ারী, ১৯৭৯ সাল। সরস্বতী পুজোর দিনে বর্ধমান টাউন হলে মাত্র ১৫টি স্টল নিয়ে শুরু হয়েছিল বর্ধমান বইমেলা। সভাপতি কালীপদ সিংহ এবং সম্পাদক সমীরণ চৌধুরী। এই বইমেলাতেও আমৃত্যু সম্পাদক ছিলেন সমীরণদা। ১৯৮৩ সালে টাউন হলে এই বইমেলা দেখতে গিয়ে একুশ বছরের এক যুবকের কাছে অভিযান গোষ্ঠীর লোকজনকে অন্যগ্রহের মানুষ বলে মনে হয়েছিল। শুধু বই নিয়ে মেলা? এমন আবার হয় না কি? এমন অভাবনীয় চিন্তা যাঁরা করেন তাঁরা এই গ্রহের মানুষ কী করে হতে পারেন? সে বছরই প্রথম সে এই মেলা দেখতে গিয়েছিল। একটা বইয়ের খোঁজে। বর্ধমানের কোন বইয়ের দোকানে সে বইটা পায় নি। আজ বলতে দ্বিধা নেই, সেই একুশ বছরের যুবক, নিখিল কুমার চক্রবর্তী, যে বইটার খোঁজে গিয়েছিল তার নাম “লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার”। যে বইটা গোটা বিশ্বে বছরের পর বছর নিষিদ্ধ করা ছিল সে বইটা পড়তে হবে না? জানতে হবে না, কেন বইটা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল? এরপর ১৯৮৪ সাল থেকেই সে যুক্ত হয়ে গেল বর্ধমান বইমেলার সাথে।
তখন বইমেলার দশদিনের মধ্যে যে কোনো দিন কলকাতা থেকে সাহিত্যিক, শিল্পীরা চলে আসতেন। উদ্বোধনের দিন অবশ্যই কোনো নামী সাহিত্যিক বা বিখ্যাত ব্যক্তি আসতেন। দশটা দিন ঘোরের মধ্যে কেটে যেত আমাদের। চারিদিকে নতুন বইয়ের গন্ধ, শিল্পীদের গলায় টাটকা তাজা গান, সাহিত্যিকজীবনের কৌতুক কণা — সব যেন নেশা ধরিয়ে দিত। সেটা কোন সাল এখন আর ঠিক মনে নেই। বুদ্ধদেব গুহ এসেছেন বইমেলায়। উদ্বোধনের দিনে নয়। অন্য যে কোনো একটা দিনে। ততদিনে “কোয়েলের কাছে”, “একটু উষ্ণতার জন্য”, “বাবলি”, “বাংরিপোসির দু রাত্তির”, “কোজাগর”, “মাধুকরী” ইত্যাদি গেলা হয়ে গেছে। সুতরাং, তক্কে তক্কে আছি ওঁর কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ পাওয়ার। যতক্ষণ তিনি মাঠে ছিলেন ততক্ষণ ঠিকমত সুযোগ হয়নি। হলেও আমার আড়ষ্টতা ভাঙেনি। পরে সুযোগ করে দিলেন সমীরণদা নিজেই। আমাকে দায়িত্ব দিলেন ফেরার সময় ওঁকে ট্রেনে চাপিয়ে দেওয়ার। আমি তো হাতে চাঁদ পেলাম। কিন্তু কী যে হলো! গাড়িতে পাশাপাশি বসে মেলার মাঠ থেকে বর্ধমান স্টেশন পর্যন্ত প্রায় দু’কিলোমিটার আসতে একটাও কথা বলতে পারিনি। ওঁর ঐ মনমোহন রূপ, সুন্দর কথা বলা সবকিছুতে যেন মোহাবিষ্ট হয়ে ছিলাম। ট্রেনে চাপিয়ে দেওয়ার পর উনি বলেছিলেন,
–“চলি। আবার আসব। ডাকবেন তো আমাকে?”
বলেন কী বুদ্ধবাবু? ডাকব মানে? উনি এলে তো আমরা বর্তে যাই। হাতজোড় করে শুধু বলতে পেরেছিলাম
–“নিশ্চয়ই ডাকব। আপনি এলে আমরা তো….”
আর কিছু বলতে পারিনি। গলা বুজে এসেছিল আবেগে। ট্রেন ছেড়ে দিয়েছিল।
বোধহয় এক/দু বছর পরে তিনি আবার এলেন। ততদিনে মেলাতে আমি অনেক সড়গড়। এবারে একেবারে প্রথম থেকেই তাঁর সাথে লেপ্টে গেলাম। মেলার মাঠে ওঁর পদার্পণের প্রথম মুহূর্ত থেকেই শুরু করলাম কথা বলা। তখনই জানলাম যে তিনি পেশায় চার্টার্ড একাউন্টেন্ট। আমি নিজে কস্ট একাউন্টেন্সি পাশ করার সুবাদে ওনার প্রতি শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গেল। এইরকম একটা পেশার এক সফল মানুষ এত সুন্দর লেখেন কী করে? ওঁকে জিজ্ঞাসা করতে জেনেছিলাম যে ওনার প্রতিটা দিন চার ভাগে ভাগ করা। প্রতিটা দিনে চারটে স্লট আছে। সংসার, অফিস, আড্ডা/গান এবং লেখা। উনি চেস্টা করেন প্রতিটা স্লটের সময় স্ট্রিক্টলি মেনটেন করতে। একটা স্লটের সাথে আরেকটা স্লটকে গুলিয়ে ফেলেন না। লেখার সময় শুধু লেখা নিয়েই থাকেন। আরও অনেক কথা জেনেছিলাম। উনি ক্রিকেট এবং টেনিস খেলতে পারেন। শিকারও করতে পারেন। বিখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী ঋতু গুহ যে ওনার সহধর্মিণী তাও জেনেছিলাম ওঁর সাথে গল্প করার সুবাদে। কী অকপটে, সাবলীলভাবে কথা বলতেন! মনেই হতো না এত বড় একজন সাহিত্যিক। এমন অনেক কিছুই তাঁর কাছে শুনেছি যা প্রকাশ করা উচিত নয়। নিজে খুব সুন্দর রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে পারেন। কিন্তু বইমেলার স্টেজে বা অফিসে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়ার অনুরোধ এলেই একমুখ হেসে বলতেন
–“রবীন্দ্রসঙ্গীতটা আমি শ্বশুরবাড়িকে দিয়ে দিয়েছি।”
তাঁর সেই লাল টুকটুকে ঠোঁটের কান এঁটো করা হাসির যে কী মাধুর্য তা যারা দেখেনি তারা বঞ্চিত মানবের দলে। সেবারই সাহস করে তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম
–“আপনাকে বন্ধুরা “লালা” বলেন কেন?”
সেই হাসি উপহার দিয়ে বলেছিলেন
–“এইরকম রূপ কি আর কারোর আছে যে, তাকে লালা বলবে?”
সত্যিই তাই। ধুতি পাঞ্জাবি পরিহিত ফর্সা টুকটুকে এই সুপুরুষ মানুষটার রূপ কি শুধু তাঁর চেহারায়? সুন্দর, সরল, সহজ আর অকপট মনটার রূপ যে চেহারার থেকেও অনেক বেশী। সেবারই তাঁর অনেকটা কাছাকাছি এসেছিলাম। বেশ অনেকটা। কত মজার মজার কথা যে হতো তাঁর সাথে! কত যে বন্ধুর মত তিনি মিশতেন! একটা উদাহরণ দিই। উনি ট্রেনে কলকাতা থেকে বর্ধমানে আসছেন। আমি যথারীতি তাঁকে স্টেশন থেকে আনতে গেছি। কিন্তু ট্রেনের নির্দিষ্ট কম্পার্টমেন্ট থেকে তিনি নামছেনই না। আমার টেনশন বাড়ছে। কেন নামছেন না তিনি? কী ভেবে, আমি নিজে কম্পার্টমেন্টের ভেতরে ঢুকে গেলাম। এসি কোচ। কোচের ভেতরে ঢোকার দরজাটা ঠেলে এগোতেই দেখি তিনি দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি অবাক। ব্যাপার কী? বললাম
–“কী হল বুদ্ধদা? ট্রেন ছেড়ে দেবে তো এবার! নামবেন না?”
সেই কান এঁটো করা লাল টুকটুকে ঠোঁটের হাসি। বললেন
–“কন্যেপক্ষের লোকেরা অভ্যর্থনা না করলে কি বর পাল্কি থেকে নামে?”
হাসতে হাসতে দু কান ধরে বলেছিলাম
–“তা ঠিক। অন্যায় হয়ে গেছে। ক্ষমা করে দিন।”
উনি ট্রেন থেকে নামার পর জেনেছিলাম যে, একজন সহযাত্রীর সঙ্গে গল্পে মেতেছিলেন আড্ডাপ্রিয় বুদ্ধদেব গুহ। গল্প করতে করতে বর্ধমান এসে গেছে খেয়াল করেননি।
একটা ঘটনার কথা খুব মনে পড়ছে। বইমেলাতে তখন জ্যোতিরিন্দ্র নারায়ণ লাহিড়ী (বর্তমানে সুন্দরবনচর্চা খ্যাত), মৌমিতা নন্দী, জয়ন্ত মুখার্জী আর পার্থসারথি দত্ত সব ব্যাপারেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। ওরা আমার থেকে সামান্য জুনিয়র এবং সবাই মোটামুটি সমসাময়িক। ওদের সাথে আমি আর সুনন্দাদি (সুনন্দা রায় চৌধুরী, সমীরণ চৌধুরীর সহধর্মিণী) বইমেলা নিয়ে অনেককিছু প্ল্যান প্রোগ্রাম করি। বইমেলার স্টেজের বিভিন্ন আলোচনাতে সাধারণত জ্যোতি, সুনন্দাদি, জয়ন্ত আর মৌমিতা পার্টিসিপেট করে। বুদ্ধদেব গুহ এলে জ্যোতি তাঁর সাথে আলোচনায় স্টেজে উঠবেই। সাহিত্যিকের সাথে আলোচনার আগে ওরা নিজেদের মধ্যে কথা বলে ঠিক করে নেয়, ঠিক কী কী বিষয়ে আলোচনা করবে বা সাহিত্যিককে কী কী প্রশ্ন করবে। সেবার বুদ্ধদেব গুহ বইমেলার মাঠে অনেকটা আগে চলে এসেছেন। অফিসে আমি, জয়ন্ত, পার্থ, মৌমিতা, জ্যোতি আমাদের বুদ্ধদাকে মাঝে রেখে গোল হয়ে বসেছি। মাঝে মাঝে সমীরণদা এসে টহল দিয়ে যাচ্ছেন। কী আলোচনা হচ্ছিল না? আমাদের বইমেলা, বুদ্ধদার গান, তাঁর উপন্যাস… সব। তিনি যে গুরু রেখে গান শিখেছেন তা জেনে আমরা অবাক যেমন হয়েছি, তেমনই একজন বিখ্যাত সমসাময়িক সাহিত্যিকের সাথে তাঁর তুলনা করাতে তাঁকে বিরক্ত হতেও দেখেছি। তাঁর উপন্যাসে প্রকৃতি প্রেম আর জঙ্গল প্রাধান্য পাওয়ার কথা বলতে তিনি অকপটে জানিয়েছেন যে, জঙ্গল তাঁর ভালবাসার জায়গা। এরপরেই মৌমিতা তাঁকে বলেছিল
–“জঙ্গল ভালবাসেন বলে উপন্যাসে জঙ্গল থাকে। ভাল। কিন্তু কী কারণে উপন্যাসের নায়িকারা এত সুন্দরী হয়?”
এক সেকেন্ডও সময় নেন নি বুদ্ধদেব গুহ। বলেছিলেন
–“আসলে কী জানো, আমার উপন্যাসে তো তেমন মাল মশলা কিছু থাকে না। পাঠক আকৃষ্ট হবে কেন? সুতরাং যাতে পাঠক আকৃষ্ট হয় তাই নায়িকাগুলোকে সুন্দরী করে দিই।”
এরপরেই মৌমিতাকে স্তব্ধ করে দিয়ে বলেছিলেন
–“চিন্তা করো, তবুও তোমার মত ডাকসাইটে সুন্দরীর দেখা আমি তখন পাইনি। এতদিন পরে পেলাম।”
মৌমিতা কিছুক্ষণের জন্য চুপ করে গিয়েছিল কিন্তু ও তো ছাড়ার পাত্রী নয়। তাই ডেলিবারেটলি জিজ্ঞাসা করল
–“তা, আগে দেখা পেলে কী করতেন? নায়িকাদের তো এমনিতেই সুন্দরী করে দিয়েছেন। আর নতুন করে কী করতেন?”
সহাস্য উত্তরে আমাদের সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন বুদ্ধদেব গুহ।
–“উপন্যাসের জন্যে নয়। নিজের জন্যে। আমি নিজে শিয়ালদা স্টেশনে শতরঞ্জি বিছিয়ে বসে তোমার জন্যে অপেক্ষা করতাম।”
মৌমিতা হেসে চুপ করে গিয়েছিল। আমি আলোচনা অন্য দিকে টেনে নিয়ে গিয়ে বলেছিলাম
–“কিন্তু আপনার উপন্যাসে এত পরকীয়া প্রেম কেন? পরকীয়া ছাড়া কি প্রেম হয় না? না কি আপনি সাধারণ প্রেমে বিশ্বাস করেন না?”
এবারে তিনি বেশ কিছুক্ষণের জন্য চুপ করে রইলেন। পরে গম্ভীর স্বরে বললেন
–“আমি উপন্যাস লিখেছি সর্বসাধারণের জন্য। তাই এই প্রশ্নের উত্তরও আমি সর্বসমক্ষে দেবো। এই অফিসের ভেতরে বসে দেবো না। স্টেজে বসে দেবো।” এরপর স্টেজে উঠে অন্য আলোচনার মাঝে তিনি এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন। পরকীয়ার যে ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছিলেন তা আজও ভুলিনি আমি। বৈষ্ণব পদাবলী, মঙ্গল কাব্য, বর্তমান সাহিত্য কী ছিল না সেই ব্যাখ্যায়! তাঁর জ্ঞানের পরিধি দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধায় নতশির হয়ে গিয়েছিলাম আরও একবার।
২০০৪ সালে বুদ্ধদেব গুহ বর্ধমান বইমেলায় এলেন উদ্বোধক হিসাবে। আমরা ভীষণভাবে উত্তেজিত। এতদিন আমাদের বুদ্ধদা বইমেলাকে ভালবেসে আমাদের ডাকে এসেছেন। এবারে তিনি উদ্বোধক। সুতরাং নতুন কিছু করতে হবে। ঠিক করলাম, স্টেজের নামকরণ করব তাঁরই লেখা কোন উপন্যাসের নামে। আর সেই উপন্যাস গ্রন্থের কভার ডিজাইনে হবে স্টেজের ব্যাকড্রপ। অতএব স্টেজের নাম দেওয়া হল “কোজাগর মঞ্চ” আর ব্যাকড্রপ জুড়ে কোজাগর গ্রন্থের কভারের ছবি। বইমেলার মাঠে এসে স্টেজ দেখে আপ্লুত হয়ে গেলেন বুদ্ধদেব গুহ। এমনিতেই তিনি বলে থাকেন যে বর্ধমান বইমেলায় আসতে তাঁর ভাল লাগে। আমাদের মত ভালবাসা এবং আন্তরিকতা না কী তিনি কোথাও পান না! কিন্তু এবার যেন আবেগে ভেসে গেলেন। স্টেজের সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বললেন
–“এরকম সম্মান আমি আগে আর কোথাও পাইনি। খুব ভাল লাগছে।”
শুধু বলা নয়, ফিরে যাওয়ার আগে মন্তব্য বইতে সে কথা লিপিবদ্ধও করে গেলেন। “কোজাগর মঞ্চ” যে তাঁর ভাল লেগেছে তা অকপটে স্বীকার করে গেলেন। সেই স্টেজে বসেই তিনি গেয়ে গেলেন একের পর এক টপ্পা। “ভালবাসিবে বলে ভাল বাসি নে” তাঁর প্রিয় টপ্পা, আমাদেরও। গানের অনুরোধ করতেই পান খেতে চেয়েছিলেন। “মিঠাপাতা পানে শুধু চুন আর খয়ের। সাথে একটা এলাচ আর লবঙ্গ। একটা কাগজে করে আলাদাভাবে একটু ১২০ জর্দা।” বলেছিলেন
–“পান ছাড়া কি গান জমে?”
পার্থর এনে দেওয়া সেই পান মুখে দিয়ে শুনিয়েছিলেন একের পর এক টপ্পা।
অবশ্য, স্টেজ আর আড্ডা জমানোর জন্য আর একটা জিনিসও তিনি খুব ভালবাসতেন। গরম সিঙ্গারা। আমরা একটা প্লেটে অনেকগুলো সিঙ্গারা তার সামনে রেখে আড্ডা বা আলোচনা চালিয়ে যেতাম। সিঙ্গারা খেতে খেতেই চলত সেসব।
যতবার বইমেলাতে এসেছেন ততবারই মাঠে প্রবেশ করতেই সমীরণদা এগিয়ে গিয়ে তাঁকে নমস্কার জানিয়ে আবাহন করতেন। প্রতিবারই দেখতাম তিনি সমীরণদার দু’হাত জড়িয়ে ধরতেন, মুখে হাসি। ভাবটা এমন যে, নিজের মেলায় এসেছি, এতে অভ্যর্থনা কীসের? খুব সাবলীল, সহজ, সরল, অকপট এক বুদ্ধদেব গুহকে আমরা পেতাম আমাদের বর্ধমান বইমেলায়। এত বড় একজন সাহিত্যিককে বন্ধুরূপে পেয়ে আমরা নিজেরা ধন্য হয়েছিলাম। আজ মানুষটা নেই কিন্তু তাঁর অন্তরের ছোঁয়া লেগে রয়েছে আমাদের মননে, চিন্তনে, যাপনে।
তারিখঃ সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২১