দিন বদলের শেষে

 

মি অস্মিতা। অস্মিতা খাসনবীশ। একজন ন্যাচারোপ্যাথ।

আমার চিকিৎসার ধরনটা একটু আলাদা। আমি চেষ্টা করি প্রায় বিনা ওষুধে রোগ সারাতে। আমার পছন্দের বিষয় ‘লাইফ স্টাইল ডিজিজ’। আমি গ্যারান্টি দিয়ে ক্রনিক ডায়েবিটিসকে রিভার্স করাতে পারি। যে সব মহিলাদের মাথার চুল পড়ে যাচ্ছে বয়সের তুলনায় বুড়িয়ে যাচ্ছেন। আমি তাদের ত্বকে জেল্লা ফেরাই, চুলে তুলি অষ্টাদশীর ঢেউ। ক্যান্সার নিয়েও কাজ করছি; জানি একদিন সফল হবই। কিন্তু যে কাজটা আমাকে সবথেকে শান্তি দেয় সেটা ‘ইনফারটিলিটি’। যখন মেডিক্যাল শাস্ত্রানুসারে কোনও নারীর মা হওয়াটা অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় আমিই তখন পথ দেখাই। না আমি আই ভি এফ করি না। আমার পদ্ধতি সম্পূর্ণ ন্যাচারাল।

কিন্তু এটা আমার গল্পের বিষয় নয়।

এমডি পাশ করার পরেও আমি ছিলাম লক্ষ্যহীন সাধরণ একটা মেয়ে। কার্ডিওলজি নিয়ে পড়তে পারতাম। অন্তত আমার মেরিট সেই স্বীকৃতি দিয়েছিল। কিন্তু মেয়েদের সব সিদ্ধান্তই কি পরিণতি পায়! বাবা বুঝিয়েছিল, – “কার্ডিওলজি নিয়ে পড়বি ঐ প্রফেশনে প্রচন্ড চাপ। তুই বরং মেডিসিন নিয়েই পড়”। বাবার কথা রেখে কমিউনিটি মেডিসিন নিয়ে এম ডি করেছি। কিন্তু ন্যাচারোপ্যাথ হয়েছি নিজের শখে। ডাক্তারি পেশাতে জমিয়ে বসতে পারতাম কিন্তু তার আগেই বাড়ি থেকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিল। বাবা রিটায়ার্ড হয়ে যাচ্ছেন। এই সময়ে বাড়িতে অবিবাহিতা মেয়ে…।

ভাবছেন এ কি ধরনের গল্প?

আমার গল্পটা আমি এখনও শুরুই করিনি।

বিয়ের ইচ্ছে যে ছিল না তা নয়। তার কিছুদিন আগেই ব্রেক আপ হয়েছে। এক্স বয়ফ্রেন্ড ব্রেকআপ কলে একটা ইয়া বড় ডায়লগ ঝেড়েছিল। কী বলেছিল সবটা মনে নেই। কিন্তু কিছু কথা এখনও গভীর দাগ কেটে আছে, – “তোর হাইট যদি আর একটু বেশি হতো একটা ঝাক্কাস মাল জুটিয়ে নিতে পারতিস। সরি টু সে; ইয়োর বুবস আর ভেরি বাল্কি, আই নেভার ফিল কমফোর্টেবল”।

একটা মেয়ের পক্ষে এর থেকে খারাপ বডি শেমিং কি হতে পারে!

আমি ঋভু কে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলাম বোধহয় এই কষ্টটাকে তাড়াতাড়ি ভুলতে।

চলছিল বেশ ক্যারিরয়ারের প্রতি টানহীন একটা জীবন। ডাক্তারিটা সিরিয়াসলি না নিয়ে মেতে উঠেছিলাম নিজেকে ফুলটাইম হোম মেকারে পরিণত করতে। এর মধ্যে তুহি পেটে এলো।

আর তখনই শুরু হল আমার জীবনের গল্পটা।

চলুন গল্পটা সেখান থেকে শুরু না করে আমার ডিভোর্সি হওয়ার ঘটনা থেকে শুরু করি। ও হ্যাঁ, আমি বলতে ভুলে গেছি আমি একজন সিঙ্গল মাদার।

সেদিনও আজকের মত বৃষ্টি ঝরছিল অঝোরে। কোর্টের ফাইনাল তারিখ ছিল সেদিন। আমি কোনও রকমের খোরপোষ দাবি করিনি। তা নিয়েও কূটকাচালি কম হয়নি। কিন্তু ডিভোর্সের কনট্রাক্টে সই হয়ে গেল।

একগাল হেসে ঋভুর লইয়ার ডিভোর্স এগ্রিমেন্টের ফাইনাল কপি আমার হাতে তুলে দিয়ে বলেছিল, – “কনগ্রাচুলেশ ম্যাম, নাও ইউ বোথ আর লিগ্যালি সেপারেটেড”।

কোনও কথা বলতে ইচ্ছে করছিল না। একাই কোর্টে গিয়েছিলাম। কেউ সাথে আসেনি সেদিন। কাউকে বলতে মাকে নিয়ে আসতে হত। আমি বাবার আদরের জামাইকে ডিভোর্স দিতে চলেছি শুনে বাবা নিজেকে সম্পূর্ণ গুটিয়ে নিয়েছিলেন, বলেছিলেন, – “তোমার জীবন তুমি বুঝবে। আমাকে এর মধ্যে টেন না। মেয়েদের এত ইম্পেশেণ্ট হলে চলে না। একটু মানিয়ে গুছিয়ে চলতে হয়। এই নিয়ে আমি আর কিছু শুনতে চাই না”।

যখন থেকে সেপারেশনের প্রসিডিওর শুরু হয়েছে তখন থেকেই মায়ের কাছেই ছিলাম। মাকে কোর্টে নিয়ে আসা মানে তুহিকে নিয়ে আসা। কোর্টের মাঝে সে বাবা বাবা করে চীৎকার শুরু করলে? বড় দৃষ্টিকটু দেখাতো। মেয়েটা হয়েছে তেমনি ঋভুকে চোখে হারায়। কিভাবে ওই অসভ্য লোকটাকে…। মনটাকে শক্ত করেছিলাম সেদিন। প্রতিজ্ঞা করেছিলাম সেদিন আমার ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে কিছুতেই তুহির জীবনটাকে অন্তত বিষাক্ত হতে দেবে না।

গত কয়েক বছরে আমার জীবন অনেক বদলেছে। সেপারেশন প্রসিডিওর ঋভুই শুরু করেছিল। নিজের মুখে জানতে পুরুষত্ব বেঁধেছিল বোধহয়। অফিসের এক কর্মচারীর হাত দিয়ে পাঠিয়ে ছিল লিগ্যাল সেপারেশনের নোটিশ। তুহির জন্মের ঠিক দুদিন আগে। আমি তখন ত্রিশ সপ্তাহের প্রেগন্যান্ট।

চাপ নিতে পারিনি। ব্লাড প্রেশার প্রচণ্ড বেড়ে গিয়েছিল। জল ভাঙতে শুরু করেছিল হঠাৎ। হাসপাতালে ভর্তি হলাম। ডাক্তার বাধ্য হয়ে সিজার করলেন। প্রি ম্যাচিওর বেবি। তুহির জন্মের ঠিক চারদিনের মাথায় সুইসাইড এ্যাটেম্পটড করেছিলাম। এ্যান্টি স্ট্রেস ড্রাগ ওভার ডোজ। কি ভাবে বেঁচে গিয়েছিলাম জানি না। ধরা পড়ল ক্রনিকল ডিপ্রেশন। চিকিৎসার সাথে সাথে কাউন্সিলিং শুরু হল। সেই প্রথম অনুভব করলাম। ডাক্তারকে কেন ভগবান বলা হয়। ডক্টর সুনীতা আমাকে নতুন করে বাঁচতে শেখালেন।

সেদিন নিজেকে খাদের মুখে পড়া থেকে বাঁচাতে কতক গুলো প্রতিজ্ঞা করেছিলাম:

১) আমি আবার প্র্যাকটিস শুরু করব।

২) আমি দেশের প্রথম দশজন ন্যাচারোপ্যাথের একজন হব।

৩) আমার একটা নিজস্ব একটা নার্সিংহোম হবে।

৪) নিজস্ব বাড়ি হবে; গাড়ি হবে।

৫) আমি তুহিকে মনের মতো করে মানুষ করব।

৬) সুযোগ পেলে শ্রুতি নামের শাকচুন্নিটাকে খুন করব। আমি জানি সুযোগ আমার আসবেই।

এই চার বছরে আমি আমার প্রথম এবং চতুর্থ লক্ষ্য পূরণ করেছি। দ্বিতীয় লক্ষ্যে অনেকটাই এগিয়ে গেছি আজকের সকালের ইংরেজি কাগজের পেজ থ্রি বলছে আমি এই শহরের প্রথম তিন জন ন্যাচারোপ্যাথের একজন। নার্সিংহোমের স্বপ্ন এখনও পূরণ হয়নি। তবে আমার নিজস্ব একটা চেম্বার আছে। সেখানে আপনাদের আশীর্বাদে যা রোগী হয় দুইজন স্টাফ রেখেও সামলে উঠতে পারিনা। যূথিকা বলে একটা নার্স কে রেখেছি সে আমার হয়ে আমার অ্যাপয়েন্টমেন্টের শিডিউল গুলো দেখে। ও আজ সকালে আমাকে ম্যেসেজ করেছে আমার আগামী দুই মাসের মধ্যে কোনও অ্যাপয়েন্টমেন্ট ফাঁকা নেই। আমি জানি এটা আমার একটা বিরাট প্রাপ্তি। কিন্তু আমি এখানে থামতে চাইনা।

ডিভোর্সের এগ্রিমেন্টের কপি নিয়ে কোর্টের বাইরে এসে দাঁড়িয়েছিলাম সেদিন। বাইরে ঝিরঝিরে বৃষ্টি পড়ছিল। কপাল থেকে কতকগুলো চুল গালের পাশ দিয়ে এসে পড়েছিল তাতে মুক্তোর দানার মতো কয় ফোঁটা বৃষ্টি লেগেছিল। কানের কাছে গাড়ির চেনা হর্ন শুনে ঘুরে তাকিয়েছিলাম। এ গাড়ি আমার চেনা। বিয়ের পর ভালোবেসে নিজেদের কে দেওয়া প্রথম উপহার। গাড়ির ড্রাইভার জানালার কাঁচ নামিয়ে বলেছিল, – “ড্রপ দেব”?

ঋভুর চোখের দিকে না তাকিয়েই জানিয়েছিলাম, – ‘নো থ্যাংকস।”

-শিয়োর? ইউ আর লুকিং গর্জিয়াস; একে বারে…। তারপর মিনমিন করে বলেছিল, – “তুমি এখনও আমার ওপর রেগে আছো”?

রি রি করে মাথা থেকে পা পর্যন্ত জ্বলে উঠেছিল আমার। জ্বলন্ত চোখে তাকিয়েছিলাম ঋভুর দিকে। কথা শেষ করেনি ঋভু গাড়ির কাঁচ উঠিয়ে উত্তরের অপেক্ষা না করেই চলে গিয়েছিল।

চোখ ফেটে জল আসতে চাইছিল আমার। একটা মানুষ ঠিক কতটা নিচে নামলে সদ্য ডিভোর্সি স্ত্রীকে এমন ভাবে উপহাস করতে পারে?

কী না কী এ্যলিগেশন লাগিয়েছিল ঋভুর উকিল আমার নামে, আমি নাকি মেন্টাল, সিক, ঝগড়াটে, সেক্সুয়ালি ফ্রিজিড, সমকামী…।

ঋভুও কি কম খারাপ কথা বলেছে আমাকে!

-তোমার কোনও মুরোদ নেই। ওরর্থলেস। বেঁটে, তোমাকে বিয়েতে রাজি হওয়াটাই আমার জীবনের সবথেকে বড় ভুল, আগলি, কালো, ঢেপসী…। ইনকাম তো করতে হয় না? রাস্তায় নেমে দেখো নো ওয়ান উইল পে ইউ ফর ইয়োর ফা…।

আমি জানি আমার সম্পর্কটা কখনই এই জায়গায় এসে দাঁড়াত না যদি না আমি সেদিনের এই ভুলটা করতাম। হ্যাঁ ঋভুর লইয়ার আমাকে ঠিক এই শব্দটাই বলেছিল।

সেদিন ছিল দ্বিতীয় ইউএসজি করাবার তারিখ। ঠিক ছিল ঋভু আমাকে হসপিটালে নিয়ে যাবে। ফেরার সময় ও আমাকে মায়ের ওখানে নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে যাবে। সকালে বেরোবার আগে হঠাৎ প্রোগ্রাম চেঞ্জ করেছিল ঋভু। বলেছিল আর্জেন্ট কিছু মিটিং ছিল অফিসে। বাইরে থেকে কিছু ডেলিগেটরা আসছেন বিনা নোটিশে। আমিই ওকে বারণ করেছিলাম আমার সাথে যেতে। হাসপাতালে চলে গিয়েছিলাম একাই ট্যাক্সি নিয়ে। সময় মতো ইউএসজি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শরীরটা ভালো লাগছিল না। মায়ের ওখানে না গিয়ে ফিরে এসেছিলাম আমাদের বাসায়। ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে। আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম ঘরে আলো জ্বালা দেখে। ঋভুর তো এই সময়ে বাড়িতে থাকার কথা নয়। বেডরুমের দরজা ভেজানো ছিল। ভিতর থেকে অদ্ভুত একটা মেয়েলি গোঙানির আওয়াজ ভেসে আসছিল। বেডরুমের দরজা খুলে আমার ঘরে আমার বিছানায় ঋভুকে আবিষ্কার করেছিলাম ওর হাঁটুর বয়সী শ্রুতির সাথে। মেয়েটা ওর টিমে ট্রেনি হিসেবে ঢুকেছিল। ঋভুর মুখে ওর অনেক নাম শুনেছি কিন্তু সন্দেহ করিনি।

শ্রুতি জামাকাপড় উঠিয়ে দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে পড়েছিল, মুখে অদ্ভুত হেসে বলেছিল – “সরি, উই আর স্পেন্ডিং অ্যা কোয়ালিটি টাইম”

পাথর হয়ে গিয়েছিলাম আমি।

ভুত দেখার মতো চমকে উঠেছিল ঋভু নিজের কাপড় গুছিয়ে নিয়ে বলেছিল, – “তুমি তো বললে মায়ের ওখানে যাবে”। তারপর কোনও ভণিতা না করেই আমাকে শব্দ দিয়ে আক্রমণ করেছিল, – “ইউ আর সো ফ্রিজিড ইন বেড, অ্যাই আম নট গেটিং স্যাটিসফেকশন উইদ ইউ…”।

আমি কতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম জানি না।

শ্রুতি কখন বাথরুম থেকে বেরিয়েছিল দেখিনি। ওর শব্দে সম্বিত ফিরেছিল। শ্রুতি নির্লজ্জের মতো ঋভুকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল, – “ইউ হ্যাভন্ট ইনফর্মড হার অ্যাবাউট আওয়ার রিলেশনশিপ”?

ঋভুর চোখ দুটোকে আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।

আমি এক কাপড়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলাম। আর সেই থেকেই আমি প্রতিজ্ঞা করেছি এই শাঁকচুন্নিটাকে আমি খুন করব। আমার যে ঘর ভেঙেছে তার শান্তিতে থাকার কোনও অধিকার নেই।

গত সাড়ে তিন বছরে আমার জীবনে অনেক কিছু বদলে গেছে। ডাক্তারিতে পসার বেড়েছে। সারাদিন আমার পেশেন্টদের নিয়েই আমি ভালো থাকি। ওদের ছোট্ট ছোট্ট সমস্যা গুলোকে পর্যন্ত আপ্রাণ মেটাতে চেষ্টা করি। আমার নিয়মিত পেশেন্টদের নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে একটা গ্রুপ করেছি। তাদের যে কোনও অসুস্থতা সংক্রান্ত সমস্যাতে আমি ২৪X৭ সাহায্য করতে উপস্থিত থাকি।। প্রায়ই ওদেরকে নিয়ে ওয়ার্কশপ করি। আমি দেখেছি যে কোনও ধরনের শারীরিক সমস্যাতে সবথেকে বেশী প্রভাব পড়ে মানুষের চুল আর ত্বকের ওপর। আমি চেষ্টা করি আমার নিয়মিত পেশেণ্টদের চুল আর ত্বকের জেল্লা ফেরাতে। আর চুল আর ত্বককে সুস্থ রাখতে হলে মনকেও সুস্থ রাখতে হয়। আমার বেশিরভাগ ওয়ার্কশপ হয় এই সব বিষয়ের ওপর। ভালো রেসপন্স পাই। আমার বেশির ভাগ পেশেন্টই মিডল এজেড মহিলা। বিশেষ করে যাদের সেলফ কনফিডেন্স কম। বাঁচার আশা হারিয়ে ফেলেছেন। আমি তাদেরই চিকিৎসা করি। সেলফ কনফিডেন্সটাই মানুষের সব। মানুষের মনের নেগেটিভ অনুভূতি গুলো পজিটিভ করে দিতে পারলেই রোগী অর্ধেকটাই সেরে ওঠে।

তুহি এখন স্কুলে ভর্তি হয়েছে। ঋভু হঠাৎ উঠে পড়ে প্রমাণ করতে লেগেছে সে ঠিক কতটা ভালো বাবা। সকালে প্রায়ই মেয়ের সাথে দেখা করতে এ বাড়িতে আসে। দুজনে বসে অনলাইন ক্লাস করে। আমি তুহিকে ওর বাবার কথা শুনিয়ে মন বিষাতে চেষ্টা করিনি। আমি জানি তুহি বড় হলে সত্যিটা বুঝবে। তখন ও নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত নেবে। শুনেছি ঋভু এখনও ওই শাঁকচুন্নিটার সাথে লিভ ইন করছে।

আজ সানডে আমার ফ্যামিলি টাইম। ফ্যামিলি বলতে আমি আর আমার চার বছরের মেয়ে তুহি। এদিন পুরোটাই আমার আর তুহির। সারাদিন কোনও এ্যাপোয়েন্টমেন্ট রাখি না। ফোনও বন্ধ থাকে। বাইরে ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছিল। সন্ধ্যে বেলা তুহির সাথে খেলছিলাম। হঠাৎ ডোর বেলের আওয়াজ। দরজা খুলে নিজেই আশ্চর্য হলাম। বাইরে শ্রুতি তার পিছনে ঋভু দাঁড়িয়ে।

প্রচণ্ড রাগ হচ্ছিল আমার। ভাবলাম দরজা বন্ধ করার খিলটা দিয়ে সজোরে মাথায় একটা কষিয়ে দিই। নিজেকে সংযত করলাম। আমার জীবনের গত সাড়ে তিন বছর আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে।

ঋভু ঘরে ঢুকল। তুহি ঝাঁপিয়ে পড়ল ওর কোলে।

শ্রুতি আমাকেই দেখছিল বলল, – “তোমার বয়স কিন্তু দিনকে দিন কমে যাচ্ছে। ইয়োর স্কিন অ্যান্ড হেয়ার ইজ গ্লোয়িং”।

আমি শ্রুতিকে বললাম, – “বসো”?

সে চাপা গলায় জানালো – “আই নিড ইয়োর হেল্প ডেসপারেটলি”?

আমার ওর সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছিল না। ও নিজেই বলে যাচ্ছিল। বুঝলাম ওরা প্লানিং করছে। শ্রুতি কিছুতেই কনসিভ করতে পারছে না। ঋভু নাকি বাচ্চা বাচ্চা করে মাথা খাচ্ছে। তুহিকে সব সময়ে কাছে পায়না তাই।

শ্রুতি কে জিজ্ঞাসা করলাম, – “ডাক্তার কনসাল্ট করেছ?”

-আই হ্যাভ সাম মেজর ইস্যুস। ইট ইজ নট ক্লিনিক্যালি পসিবল।

ঋভু তুহির সাথে খেলতে খেলতেই আমাদের কথায় যোগ দিল, – “ইউ আর দ্যা বেষ্ট ইন দ্যা সিটি। আই সাজেস্টেড হার টু গো উইদ দ্যা বেষ্ট”।

উফ নিয়তির কি অদ্ভুত পরিহাস। যে মানুষটা আমাকে ওরর্থলেস বলে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছিল সেই মানুষটাই কিনা বলছে…। ঋভুর কথার কোনও উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলাম না।

এই প্রথম আমি অনুভব করলাম আমার আর শাঁকচুন্নিটার ওপর রাগ হচ্ছে না। বললাম, – “এভাবে আমি কাউকে দেখি না। যূথিকার নম্বর রাখো ওই আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট হ্যান্ডল করে। ও বলে দেবে চেম্বারে আসার আগে কি কি টেস্ট করিয়ে আসতে হবে”।

আমি ঋভুর মুখের দিকে না তাকিয়েই বুঝতে পারলাম ও আমার কথা শুনছে। শ্রুতি কে বললাম, – “কনসিভ তুমি করবেই সেটা আমার গ্যারান্টি। কিন্তু যা করছ ভেবে চিন্তে করছ তো? কনসিভ করার পর তোমার পার্টনার তোমাকে ফ্রিজিড ভাবতে পারে। তোমার থেকে কম বয়সী কেউ জুটে গেলে কথাই নেই। তখন তোমাকে স্লার্ট শেমিং করতেও ছাড়বে না। আফটার অল ইউ আর নট লিগাল”।

এরপর ঋভু বা শ্রুতি কোনও কথা বলে নি। পরিবেশটা হঠাৎই বেশ ভারি হয়ে উঠেছিল।

শ্রুতি উঠে চলে যাচ্ছিল।

আমি ওকে আলতো করে একটা হাগ দিয়ে বললাম, – “থ্যাঙ্কস এ্য লট”।

দুজনেই অবাক চোখে তাকালো আমার দিকে।

আমি শ্রুতির চোখে চোখ রেখে বললাম, – “তুমি সেদিন এইভাবে আমাকে ঘাড় ধাক্কা না দিলে আমি কোনও দিনও এভাবে আমাকে চিনতে পারতাম না”।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

তারিখঃ সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

প্রকাশক - Publisher

Site By-iconAstuteHorse