সন্তাপ
সৌরীণ মুখার্জী
শেষবেলার রোদটুকুর মতো ফুরিয়ে যাচ্ছো তুমি। তোমার পাশ দিয়ে হেঁটে গেল বিকেলের ধুলো। খানিকটা মলিন হলে তুমি, অথচ তোমার চোখ জুড়ে এখনও পাতাবাহার। ঝরে যাবে বলে অপেক্ষা করতে করতেই তুমুল বৃষ্টি এলো। রিক্সার ভাড়া বেশি, কাকভেজা হয়ে বাড়ি ফিরছে মধ্যবিত্ত যুবক। পুন্নির মা সাত বাড়ি রান্না শেষে ডানা মেললো। হিলভিউ মাঠে, গোলপোষ্টের গায়ে কারা যেন নিবিড় হচ্ছে ক্রমশ। মেঘ ডাকছে…
ফুরিয়ে যাবে বলেই উঠোন ভর্তি শ্যাওলা জমালে। এঁটো বাসনের গায়ে আগলে রাখলে তাচ্ছিল্য। ছাদ বেয়ে জল কতটা গড়ালো, যদি জানতে! শ্যাওলার সংসারে ভাড়া নিয়েছে ঘাসফুল। ভাতের হাঁড়ির জলে জিরিয়ে নিচ্ছে দুটো কাক। ছাদের কাপড়ের গায়ে কোনো আটক ছিলো না। ওরা উড়ে গেছে পাশের সাঁওতাল পাড়ায়। এবার ওদের মোচ্ছব শুরু হলো বলে! জল… জল… জল—গড়িয়েছে বহুদূর…
দেরাজে আর একটাও চিঠি পড়ে নেই। উড়ে গেছে হাওয়ায়, রেখে গেছে আলকাতরার ঘ্রাণ। তা বুঝি অনায়াসে ফিরিয়ে দেয় মাঝবয়সী দুপুর! খাঁ খাঁ ছাদে এক চিলতে সবুজ চিলেকোঠা। কালো দরজার গায়ে কবিতার মতোই কিছু অলীক আঁকিবুকি। বনেদিয়ানার আভিজাত্যে মিশে যাচ্ছে বখাটের ঘাম। কিশোর চোখদুটোয় অদ্ভুত মেলানকলি, বুঁদ হয়েছিলে। নদীর পাশে ক্লান্ত তুমিও —খেয়াল করোনি, তোমার চোখ জুড়ে গজিয়ে উঠছিলো অজস্র পাতাবাহার…
হিলভিউর গোলপোস্টে এখন শূন্যতা। বৃষ্টি থেমে গেছে বহুক্ষণ। সাঁওতাল পাড়া উচ্ছেদের নোটিশ দিয়েছে কর্পোরেশন। মধ্যবিত্ত যুবকের মাসশেষে বাড়ন্ত সংসার। ছাদের ফুটিফাটা প্রায় অভ্যাস হয়ে গেছে। পুন্নির মা ডানার পালক ছাড়াতে ছাড়াতে পাওনাদারের হিসেব মেটাচ্ছে…
গড়ানো জল পেরিয়ে বহুদূরে তখনও কিছুটা বাকি আছো তুমি। মেলানকলি ছাড়িয়ে ভেসে আসছে বাউল-গান। আলকাতরা নয়, মৃগনাভির ঘ্রাণে ধরা পড়ে আছো। পাতাবাহারের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে অজস্র জোনাক…
ঘুমের সময় হলো।
তারিখঃ এপ্রিল ১১, ২০২৩