সপ্ত সুর
সর্বানী রায়
ছোটু…
সসসসসস্ সসসস্
জলদগম্ভীর সুরেলা চাপা কন্ঠের আওয়াজকে সাথে সাথে চুপ করিয়ে দেয় ছোটু। “আওয়াজ মৎ করো সাব।” দুটো অসমবয়সী মানুষ ধীর পদক্ষেপে শিকারী বিড়ালের মত নিঃশব্দে পা টিপে টিপে এগিয়ে চলেছে। পায়ের নিচে শুকনো পাতা, ডালপালার মড়মড়ে শব্দ থেকে বাঁচতে। দুটো হাত দিয়ে সামনের ডালপালা সরিয়ে, খুব ধীরে ধীরে শ্বাপদের মত এগোচ্ছে দুটো মানুষ। আগাছায় জঙ্গল হয়ে যাওয়া পথে শুধু চাঁদের আলোটুকু ভরসা ।
আজ পূর্ণিমা, ভরা জোৎস্নার স্নিগ্ধ আলোয়, অদ্ভুত মোহিনী রূপলাবন্যে ঝলমল করছে চর্তুদিক। শ্যাওলা ধরা, কালচে হয়ে যাওয়া বহু দিনের অব্যাবহৃত জরাজীর্ণ জমিদার বাড়িটিও আজ যেন কোনও এক কুহকী মায়ার অজানা রহস্যে সঙ্গোপনে হাসছে। বাড়ির ৮০ শতাংশ পলেস্তারা খসা, ভাঙ্গা গুঁড়িয়ে যাওয়া ইঁটগুলো করুন ইতিহাসে সাক্ষী হয়ে কোনওমতে টিকে আছে। জানালা দরজার পাল্লা আস্ত নেই । বাড়ির ফাটলের যেখানে সেখানে বট পাকুড় ছাড়াও বিভিন্ন আগাছা বেরিয়ে ছোটোখাটো জঙ্গলে পরিনত হয়েছে।
প্রভাব প্রতিপত্তিশালী জাঁকজমকপূর্ণ স্বনামধন্য চৌধুরী বংশের জমিদার বাড়ি আজ শুধু এক ধ্বংসস্তূপ। শোনা যায় দু’য়েকজন বংশধর বিদেশে আছে, কিন্তু ভারতে এলেও তারা কেউ কখনও এ বাড়ির ধারে কাছেও আসে না ।
দুই বন্ধু খুব সন্তর্পনে ধীরে ধীরে বাড়িটার কাছে এসে দাঁড়াল। প্রবেশদ্বার উন্মুক্ত। দুটো পাল্লার একটা নেই আর একটা সামান্য অবশিষ্ট আছে। খুব চাপা স্বরে ছোটু বলে ওঠে “সামালকে যানা হোগা সাব। থোড়িসি আওয়াজ হোনে সে হাম দোনো পাকড়ে জায়েঙ্গে।”
শিবুদার চায়ের দোকানে হেল্পারের কাজ করে ছোটু।শিবুদার বাকি ফাইফরমাসও হাসি মুখে করে দেয়। বয়স বড় জোর ১৪, ১৫ হবে। এই এলাকারই ছেলে, বাবা নেই। মা এর ওর বাড়ি কাজ করে দুজনের পেট চলায়। চারবছর আগে ছোটুর মা শিবুদার হাতে পায়ে ধরে কাজ শিখতে শিবুদার কাছে রেখে গেছে ওকে।
ছোটুর সাব, প্রদীপ মুখার্জি একজন সঙ্গীত গুরু, অনেকের মুখার্জি স্যার। সাধক প্রকৃতির প্রদীপ মুখার্জি শুধু একজন সঙ্গীতজ্ঞই নন, ধ্রুপদী সঙ্গীত ঘরানার বিভিন্ন ধারার উপর গবেষণা করছেন বহুদিন ধরে। তাঁর আগ্ৰহ লুপ্ত হয়ে যাওয়া ঘরানার খুঁটিনাটি উদ্ধার করা। যখনই কোথাও কোন সুত্রে সামান্যতমও খবর পান, দেরী হয় না, সেখানে উপস্থিত হয়ে যান। থাকবার জয়গা পেলে ভালো, না পেলেও অসুবিধা নেই। প্রয়োজনে খোলা আকাশের নিচে গাছতলাতেও ঘুমিয়ে নেন। সকলের প্রিয় আত্মভোলা সঙ্গীত পাগল মানুষটিকে নির্দিষ্ট ঠিকানায় খুবই কম পাওয়া যায়। আজ দু’বছর যাবৎ শিবুদার দোকানে আসা যাওয়া করছেন। খবর পেয়েছেন বহুদিন ধরে পাগলের মত খুঁজে বেড়ানো তাঁর গবেষনার আসল চাবিকাঠি যার কাছে আছে, বেনারসের সেই মহান সাধক এই এলাকায়, কোথাও খুব গোপনে আসেন ।
বছর দুই আগে বেনারসে সঙ্কটমোচন সঙ্গীত সম্মেলনে আলাপ হয় পাখোয়াজ বাদক
মিশ্রজীর সাথে। দু’দিন মিশ্রজির ঘরে অতিথি হয়ে ছিলেন তিনি। তারপর থেকে স্যারকে যেন নিশীতে পেয়েছে। সর্বদাই ঘোরের মধ্যে থাকেন। গুনগুন করে সর্বদাই সুরে ডুবে থাকেন, আঙ্গুলগুলোও তালের ঠেকায় ব্যস্ত থাকে। দোকানে খাবার বা চা অর্ডার করে ভুলে যান, চলে যান অন্যমনস্কতায়।
লালগঞ্জ – বাংলা বিহার বর্ডারের প্রত্যন্ত এলাকায় একটি গ্ৰাম। দু’বছর ধরে মুখার্জি স্যার প্রায় প্রতি পূর্ণিমাতে আসছেন ছটুদের ছোট্ট এই চায়ের দোকানটিতে। দোকান বন্ধ করে চলে যাবার পরেও মানুষটা পড়ে থাকেন দোকানের বাইরে। কখনও কখনও দু’দিনের দিনের বেশি থাকেন না। সারা রাত কী করেন কে জানে? ভোরে ওনাকে স্টেশনের পথে হাঁটতে দেখা যায়। আবার হুট করে একদিন আসেন। এখন ছোটুর সাথেই সব কথা আর যত ভাব ভালবাসা। দেখলে মনে হয় যেন ছোটুর সাথেই দেখা করতে এসেছেন। দেখা এবং গল্প হয়ে গেছে , ভোরবেলা ফিরে যাচ্ছেন। আগে সারাদিন চা আর বিস্কুট খেয়ে কাটিয়ে দিতেন, এখন ছোটু ওনার জন্য এটা সেটা জোগাড় করে দেয়।
এই ভাবেই চলছে দু’বছর। ছোটুও কিছু আনতে বললে, মনে থাকলে হাতে করে কিনে নিয়ে আসেন। দোকানের বাইরে একটু তফাতে একটা বসার জায়গা করে নিয়েছেন, ওখানেই সারাটা দিন কাটান নিজের মনে গুনগুন করে গান গেয়ে। সময় পেলে মনোযোগ সহকারে শোনেন ছোটুর গল্প। সুরের জাদুতে মুগ্ধ হয়ে ছোটু বলেছিল, “সাব মুঝে শিখাদো না।” উনিও গভীর যত্নে শেখাতে থাকেন ছোট ছাত্রটিকে।
আজ সেই গুরুত্বপূর্ণ দিন, যার অপেক্ষায় দিনের পর দিন এখানে পাগলের মত ছুটে ছুটে আসছেন স্যার । ছটু এস টি ডি থেকে ফোন করেছিল, “সাব, জলদি আ যাও।”
চার বছর আগে ফাইফরমাস খাটা ছোটুকে শিবুদা গোপনে একটা কাজের ভার দেন। মাসের প্রথম তারিখে কিছু রেশন খুব গোপনে ওই পোড়ো জমিদার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসতে হবে। তার সাথে শিবুদা এটাও বলে দেয়, কাক পক্ষীও যেন টের না পায় যে ভূতুরে পরিত্যক্ত বাড়িতে কেউ বাস করে। আর এ কথা কেউ জানতে পারলে শিবুদার সাথে ছোটুরও বিপদ কেউ আটকাতে পারবে না।
আজ দীর্ঘ চার বছর ধরে ছোটু এই কাজ করে আসছ। কাক পক্ষীকেও টের পেতে দেয় নি। কিন্তু এই মানুষটা, সাদাসিধা, আর সব মানুষের থেকে আলাদা আপনভোলা, তাকে না বলে কি থাকা যায়? তার উপর এত ভালোলাগার মানুষটি এখন তার গুরু। ছটু যখন জানতে পারল, তার আত্মভোলা গুরু এতদিন ধরে যা খুঁজে চলেছেন, সেই খাজানার সন্ধান তার কাছেই আছে, গোপন খাজানার কথাটি গোপনে রাখতে পারেনি ছোটু তার গুরুর কাছে। যা যা ছিল ছোটুর গোপন ভান্ডারে, সবটুকু উজাড় করে দিয়েছে আত্মভোলা সাবের কাছে।
আজ খুব সকালেই ছোটুর ফোন পেয়ে তড়িঘড়ি রওনা দিয়েছেন মুখার্জি স্যার। ছোটু এখন তার গুরুকে নিয়ে চলেছে গুরুর ইপ্সিত ধনের কাছে। জরাজীর্ণ বড় বড় ঘর দালান পার হয়ে বাড়িটির শেষ প্রান্তে খুব সন্তর্পনে একটা ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালো দু’জন। ভয়ানক অবাক হয়ে দেখলেন দরজার ফাঁক দিয়ে আলোর আভাস। মানে ঘরের ভেতর মানুষ আছে। এই পোড়ো বাড়িতে মানুষ? কল্পনাও করা যায় না ।
ছোটু ঠোঁটের উপর আঙ্গুল রেখে ইশারায় চুপ থাকতে বলল। ইশারায় সাবকে দরজার ফাঁকে চোখ রাখতে বলে একটু দূরে মেঝেতে বসে পড়ল। সম্মোহিতের মত এগিয়ে গেলেন মুখার্জি স্যার দরজার দিকে। একটা ভাঙ্গা ত্রিকোনের মত জায়গা দিয়ে ঘরের ভেতরটা পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল ঘরের ভেতরের মানুটিকে দেখে। এ তো সেই মহান সাধক, যার খোঁজে আজ দু’বছর ধরে সমানে এখানে আসা যাওয়া। বহু সাধকের গুরু উনি।
পুরোনো দিনের হাতির দাঁতের অপূর্ব কারুকার্য করা পালঙ্কে পদ্মাসনে বসে আছেন তিনি। পরনে গরদের ধুতি ও উর্ধাঙ্গে প্রশস্ত খোলা বুকে উপবীত ও একটি রেশমের উত্তরীয়। কানে কুন্ডল, কপালে তিলক। নিচে পায়ের কাছে কারুকার্য করা জলচৌকির উপর সাজানো নানা পুজোর সামগ্ৰী। সমস্ত ঘর সুগন্ধে আমোদিত। এক কোনে পূর্বমুখী প্রদীপ জ্বলছে। প্রদীপের আলোর মৃদুমন্দ কম্পন ঘরের পরিবেশকে আশ্চর্য ঔ রহস্যময় করে তুলছে।
এক অপূর্ব সুন্দরী রমনী। বয়সে প্রবীনা, যৌবন যেতে গিয়েও যেতে পারেনি থমকে দাড়িয়ে আছে। পরনে জরীর অপরূপ কাজ করা আকাশ নীল ঝলমলে ঘাঘরা, গোলাপী কাঁচুলি, বাসন্তী রঙের উড়নি। খোলা চুল, হাতে, গলায়, কানে, বাজুতে অলংকার। অপূর্ব সুন্দর টিকলির দামী পাথরের দ্যুতি চমকে চমকে ছড়িয়ে পড়ছে। নাকে বড় হীরের নথ। নুপুরের মধুর ধ্বনিতে আভিজাত্যের চলন।
রমনী জলচৌকির কাছে এসে দাঁড়ালেন। সাধক বিছানা থেকে পা নামিয়ে জলচৌকির উপর রাখলেন, পরম শ্রদ্ধাভরে রমনী সাধকের দুই পায়ের পাতা অগরু সুগন্ধী জলে ধুয়ে অনুরাগের আপন রঙে বাসন্তী আঁচলে পরম যত্নে মুছিয়ে দিলেন। হাতে তুলে নিলেন চন্দনের লেপন। গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে ফুল দিয়ে অপূর্ব ভঙ্গিমায় সাজাতে থাকলেন পায়ের পাতা থেকে সর্বাঙ্গ। সর্বশেষে গলায় দিলেন মালা। সাধকও অপরূপ ভঙ্গিমায় একটা একটা করে ফুল দিয়ে সাজালেন রমনীর দেহসৌষ্ঠব। শেষে পরালেন মালা । মদালসা কন্ঠ গেয়ে উঠল
“শ্যাম মুরলি বাজাওয়ে সখী রী
হ্যায় শ্যাম, কৌন মুরলি বাজাওয়ে..”
অপূর্ব সুরলা রেওয়াজী কন্ঠের সুরে ডুবে গেছেন মুখার্জি স্যার। ডুবছে তাঁর সমস্ত দেহ মন সকল ইন্দ্রিয়। বিভোর হয়ে অপলকে তাকিয়ে আছেন অলৌকিক এক রহস্যময় পরিবেশের মাঝে অপূর্ব সুন্দর যুগলমূর্তির দিকে। মধ্যবয়সের দুই নর নারী, যেন স্বর্গের কোন দেব দেবী। আচমকা সুন্দরী রমনী সাধকের হাতের পাতা দুটি ধরে আর্কষণ করলেন । সাধক জলচৌকির উপর উঠে দাঁড়ালেন। রমনী গাইছেন
“পানীয়া ভরন সখী ক্যায়সে যাঁউ মোরি
গাগরী ভরনে ক্যায়সে যাঁউ ম্যায়..”
সুরের তালে তালে অপূর্ব ছন্দ, ধ্রুপদী মুদ্রায় নৃত্য করছেন সেই রমনী। ময়ূর যেমন পেখম তুলে মনহরণ ছন্দে নৃত্য করে, অপরূপ ধ্রুপদী মুদ্রায় ঘুরে ঘুরে নৃত্য করে চলেছেন সেই কলাবতী। প্রদীপের মৃদু আলোয় কেঁপেকেঁপে ওঠা আলো ছায়ার রহস্যময়তা, জানলা ভেদ করে আসা জ্যোৎস্নার স্নিগ্ধ লাবন্যময় পরিবেশে নৃত্যরতা লাস্যময়ী মানবীর মোহিনী মূর্তির দিকে স্থির হয়ে আছে সাধকের দুটি মুগ্ধ নয়ন, ঠোঁটে স্মিত হাসি। গুরুর হাত দুটি নিজের করতলে নিয়ে আর্কষন করলেন সেই রমনী, গুরু চৌকি থেকে নেমে ডান হাত বাড়িয়ে কলাবতীর কটিতটে হাত রেখে নিবিড় আর্কষনে আলিঙ্গন আবদ্ধ হলেন। অজন্তা ইলোরার মূর্তির মত বিভিন্ন মুদ্রায় ধ্রুপদী কলায় তারা মত্ত হয়ে উঠলেন শৃঙ্গারে। কখনও আলিঙ্গনাবদ্ধ, কখনও বুকের ওপর বিভিন্ন মুদ্রায় নিজেকে বারবার সর্মপিত করার ক্রিয়া করেও নিজেকে বিযুক্ত করে চলেছেন মানবী, আর মানব তাকে বারবার প্রবল ভাবে আপন করার কৌশলে নিজেকে লিপ্ত করে চলেছে। যেমন দুটি নাগ নাগিনী রমনের পূর্বে আলিঙ্গনাবদ্ধ অবস্থায় লেজের উপর বারবার উঠে দাঁড়ায়। সাধকের কন্ঠে বিভিন্ন তারানা, বোল। রমনী গেয়ে চলেছেন
“গোকুল ঢুঁড়ু বৃন্দাবন ঢুঁড়ু
কাঁহা গয়ী শ্যাম ঢুঁড়ানা পায়..”
অপরূপ ছন্দে লয় বাড়ছে, কমছে। সুরের মূর্ছনায় বিভোর মুখার্জি স্যারের আচমকা সম্বিৎ ফিরে আসে তেহাই এর বোলে। উনি জানেন সপ্ত সুরের নাদ ব্রহ্মের রহস্যের কথা। সেই রহস্যের মূল স্রোতের উৎসের খোঁজ তাঁর গবেষণার বিষয়। তাঁর জ্ঞানপিপাসা, এতদিনের সাধনা। তিনি জানেন এখন এই যুগল মুর্তি নাদ ব্রহ্মের খেলায় মাতবে। পরম সত্যকে জানা, তাতে বিলীন হতে চাওয়ার পরম আনন্দে, আদি শক্তির কাছে নতজানু হতে হবে। সত্যের উৎস থেকে উৎসারিত শক্তি নিয়ে উর্দ্ধগমন করতে হবে তবেই বিলীন হতে পারবে পরমানন্দে। ভাবতে ভাবতে কোথায় নিজেকে হারিয়ে ফেললেন আত্মভোলা মানুষটি। কত জন্ম তপস্যার সুফলে
আজ পরমানন্দের সাধনায় ব্রতী দুই মানব মানবী।
সম্বিৎ ফিরে তাকালেন ছোটুর দিকে।
গভীর ঘুমে বেচারা মাটিতেই কুঁকড়ে শুয়ে আছে। শেষবারের জন্য চোখ ফেরালেন ঘরের দিকে। নিভু নিভু প্রদীপের সামনে একটা বড় আসনের উপর সাধক গুরু বসেছেন সুখাশনে, কোলে রমনী অন্য মুদ্রায়। দুজনে মুখোমুখী। নিঃশ্বব্দ ঘরের মধ্যে স্বর্গীয় আনন্দের খোঁজে পরস্পরের প্রানস্পন্দের ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। কখনও লঘু সুরে তো কখনো দীর্ঘ সুরে। গতির সাথে ছন্দ ওজনকে নিয়ে ঘরের বাতাবরনের সাথে খেলা করছে। পুরুষ ও প্রকৃতির আদিম রহস্যের গূঢ় সত্যের কাছে, বাকি সব সৌন্দর্য যেন বাঁধা পড়ে আছে। স্যার অপলক তাকিয়ে রইলেন। পরম আদরে, গভীর সোহাগে, আলতো পরশে পুরুষটি মাথার কাপড়টি খুলে আবেশমাখা আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করলেন নারীর চিবুক।
নজর সরিয়ে নিলেন আর এক জ্ঞানপিপাসু সাধক। গোপন থাকুক তাদের সাধনার গোপনসূত্র। শ্রদ্ধা অবনত শিরে মুক্ত চিত্তে, পরম তৃপ্তির চরমানন্দে নিজের মনকে বললেন, মানবজীবন সার্থক।
“আজ শূন্য কলস পূর্ণ হলো.. ”
বহু জন্মের পূণ্যফলে গুরুর আশীর্বাদে মুখার্জি স্যার এক গান্ধর্ব মিলনের সম্মুখীন হলেন। নাদ ব্রহ্ম তাঁকে কৃপা করে সাধনার ক্রমপর্যায়ের রহস্যটুকু উন্মোচিত করেছেন। দেহ থেকে দেহাতীত যে বোধ, তার যুগল শক্তির ক্রিয়ায় কূলকুন্ডলিনীর উর্ধগতি সাধিত হয়। এই মিলন নিছক দৈহিক মিলন নয়, শরীরাভ্যন্তরস্হ বিভিন্ন চক্র এবং নাড়ির জাগরনের কৌশল। ঘুমন্ত সেই অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে জাগ্রত করে সুরের আবাহন। এ এক অনাস্বাদিত আনন্দসুরনির্ঝরসম্পাত। অনধিকারীর অগম্য, কিন্তু সাধকের প্রনম্য আত্মজাগরণ।
তারিখঃ এপ্রিল ৯, ২০২১